Sylhet Today 24 PRINT

ডালুছড়া ও বোরহান নগরের চা-শ্রমিকদের অভিনন্দন বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৮ মে, ২০২৩

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা আবদুল্লাহ ক্বাফি রতন, সমন্বয়ক এস এম শুভ এবং আহবায়ক সবুজ তাঁতি যুক্ত বিবৃতিতে মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনে বিজয়ী হওয়ায় ডালুছড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লংলা ভ্যালির অন্তর্ভুক্ত ডালুছড়া চা-বাগানের শ্রমিকরা এক ভয়ানক নিষ্পেষণের মধ্যে দিনাতিপাত করে আসছিলেন। চা-শ্রমিকদের অস্বাভাবিক স্বল্প মজুরিতে কাজ করতে হয়। কিন্তু ডালুছড়া চা-বাগানের চিত্র অন্যান্য বাগানের থেকেও বেশি মর্মান্তিক। প্রতি বছর বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত হয় চা-শ্রমিকের মজুরি। বছর বছর স্বল্প পরিমাণে অন্যান্য বাগানে মজুরি বৃদ্ধি পেলেও দীর্ঘদিন ধরে ডালুছড়া চা বাগানের মালিক কর্তৃপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করে মজুরি বৃদ্ধি করেনি।

তারা বলেন, অন্যান্য সি-গ্রেড বাগানের শ্রমিকদের মজুরি যখন নতুন চুক্তি অনুযায়ী ৯৯ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১১৭ টাকা হয় তখন ডালুছড়ায় মজুরি বৃদ্ধি পায়নি। পরবর্তীতে বিগত বছরে চা-শ্রমিকদের গণ আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা-শ্রমিকদের মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করলে সকল চা-বাগানে তা কার্যকর হয়।

তারা বলেন, সি-গ্রেড বাগানের নিয়ম অনুযায়ী ডালুছড়ার শ্রমিকদের মজুরিও হওয়ার কথা ১৬৭ টাকা। কিন্তু বাগান কর্তৃপক্ষ মজুরি ৯৯ টাকাই বহাল রাখে। পরবর্তীতে এই নিষ্পেষণের ঘটনায় দফায় দফায় শ্রমিক-মালিক-সরকারপক্ষের বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো সুষ্ঠু সুরাহা হয়নি। চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন কমিটি এই নিপীড়নের বিরুদ্ধে ডালুছড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করলে টনক নড়তে শুরু করে মালিক কর্তৃপক্ষের। শুধু মজুরি কম দেওয়াতেই থেমে ছিলো না নিপীড়ন। চাষের অযোগ্য জমি প্রদান করে রেশন বঞ্চিত করা, চিকিৎসার সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকা, সপ্তাহে সাত দিনের বদলে ৬ দিনের মজুরি প্রদান, স্থায়ী শ্রমিকদের অবসরভাতা থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে দেখানোসহ নিপীড়ন-নির্যাতনের চরম সীমায় পৌঁছে যায় বাগান কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় শ্রমিকরা ১ মাসের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান না করলে বাগান বন্ধ করে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং আন্দোলন শুরু করেন। চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ সভা-সমাবেশ আহবান করা হয়।

এরই ফলশ্রুতিতে গতকাল (২৭ মে, ২০২৩) বাগান কর্তৃপক্ষ ডালুছড়া চা-বাগানের পঞ্চায়েত, চা-শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ভ্যালির নেতৃবৃন্দের সাথে চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণের উপস্থিতিতে সকল দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করেন।

আগামী ১ জুন, ২০২৩ তারিখ থেকে ডালুছড়া চা-বাগানের শ্রমিকরা সাপ্তাহিক সাত দিনের হিসাবে ১৬৭ টাকা হারে মজুরি পাবেন। এছাড়াও অন্যান্য সকল সমস্যা আগামী ২৭ জুন, ২০২৩ তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষ সুরাহা করবেন।

চা-শ্রমিকের ১০ দফা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটির অন্যতম উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, সমন্বয়ক এস এম শুভ এবং আহবায়ক সবুজ তাতী এক যুক্ত বিবৃতিতে এই চলমান লড়াইয়ে আপাত বিজয়ের জন্য ডালুছড়ার লড়াকু চা-শ্রমিকদের অভিবাদন জানান।

নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতোপূর্বে বোরহান নগরের শ্রমিকরা প্রমাণ করে দিয়েছিলো যে আন্দোলনের মাধ্যমেই ন্যায্য অধিকার আদায় করা কুলাউড়া উপজেলার বোরহান নগর চা-বাগানের শ্রমিকদের মজুরি ছিল দৈনিক ৮২ টাকা মাত্র। আন্দোলনের মাধ্যমেই বাগানের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধি করে বর্তমানে দৈনিক ১৬৭ টাকা পাচ্ছেন। ডালুছড়ার চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি তাই চা-শ্রমিকদের আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য নজির হিসেবে স্থাপিত হলো। মেহনতি জনতার লড়াইয়ে বিজয় অনিবার্য।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.