Sylhet Today 24 PRINT

হঠাৎ পাওয়া নেতৃত্ব উপভোগ্য হলো না লিটনের

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০১ এপ্রিল, ২০২১

এমন দৃশ্য বহুদিন দেখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট। ঠিক ঠিক বলতে গেলে ৫৫০৮ দিন অথবা ১৫ বছর ২৯ দিন। কী হয়েছিল এত দিন আগে?

১৫ বছর আগের ৩ মার্চ ছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্টের চতুর্থ দিন। চট্টগ্রামে সেই টেস্টে ছিলেন না মাশরাফি মোর্ত্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কেউই। ওয়ানডেতে তারিখটা মাস ছয়েক পরের, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই, সেপ্টেম্বরের ৪ তারিখ।

দুটি ম্যাচেই হেরেছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে অবশ্য সেটির অভিজ্ঞতা নেই-ই। যাদেরকে সমর্থকরা ‘পঞ্চপাণ্ডব’ বলে ডাকেন, তাদের ছাড়া এর আগে কখনও ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটটিতে মাঠেই নামেনি কখনও বাংলাদেশ!

সেই সুযোগ হয়ে গেলো অকল্যান্ডে। ১৫ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল নামলো, সেখানে থাকলেন না তাদের পাঁচ জনের কেউই।

যুগের শেষ? নতুন যুগের শুরু? নাহ, ঠিক এখনই নয়। সাকিব এই সফরে ছিলেন না পিতৃত্বকালীন ছুটির জন্য, তামিম ব্যক্তিগত কারণে টি-টোয়েন্টি খেলেননি। মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ চোটে। কেবলমাত্র মাশরাফিরই জাতীয় দলের ক্যারিয়ারটা গোধূলিতে মিলিয়ে যাওয়ার পথে, যদিও তিনি নিজে ঘোষণা দেননি অবসরের।

বাকি যে চার জন আছেন, তাদের মধ্যে অন্তত তিন জন ২০২৩ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলারই কথা, যদি না ঘটে কোনো অঘটন। কিন্তু এই যে পঞ্চপাণ্ডববিহীন একাদশ, এটি সতর্ক’ করছে বাংলাদেশকে।

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে, কিংবা তর্কযোগ্যভাবে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড় এই পাঁচ জন। রান, উইকেট- যেদিকেই তাকান সব জায়গায় তাদেরই খুঁজে পাবেন, সেটিও তিন ফরম্যাটেই।

বাংলাদেশ ক্রিকেট কি তাদের বিকল্প খুঁজে পেয়েছে? সাকিব-তামিমরা চিরকাল খেলে যাবেন না, এক সময় ব্যাট-প্যাড রেখে দেবেন ঘরের কোণে। সে সময়ের জন্য বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

সেই পাঁচ জনকে বাদ দিয়ে ১৫ বছরে যে প্রথম ম্যাচ, তাতে অধিনায়ক লিটন দাস। অভিষেকের সময় যাকে ধরা হচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যতের ধ্রুবতারা, সেই লিটন কি আদৌ পেরেছেন সেই আস্থার প্রতিদান দিতে? মাঝেমধ্যে ঝলক দেখিয়েছেন বটে, কিন্তু ধারাবাহিক হতে পারেননি কোনোভাবেই।

কিংবা সৌম্য সরকার? অভিষেকের পরপরই ২০১৫ সালে যতটা দারুণ ছিলেন, সেটি কি আর ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন? তিনিও লিটনের মত ক্ষণে ক্ষণে প্রতিভার স্ফূলিঙ্গ দেখিয়েই ক্ষান্ত হয়েছেন, আগ্নেয়গিরি হয়ে ওঠা হয়নি।

তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে মুস্তাফিজুর রহমানও কি পেরেছেন নিজেদের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে?

এখনও সেটি হয়ে ওঠেনি। পঞ্চপাণ্ডবের সবাই প্রবেশ করেছেন ক্যারিয়ারের শেষ বছরগুলোয়, পরিকল্পনা সাজানোর কথা এখনই। এই পাঁচ জন মিলে ম্যাচ খেলেছেন ১১১টি, তাতে ৫৪ জয়, ৫৩ হার। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে গুটি গুটি পায়ে হাঁটা থেকে দৌড়ানোর সাহস এনে দেওয়া এই পাঁচ জনের বিকল্প কি বাংলাদেশ ক্রিকেটের হাতে আছে?

তরুণদের পারফরমেন্সের বিচারে উত্তরটা না-এর ঘরেই যায়, এবং সেটি বাংলাদেশের জন্য অশনি সংকেতও। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এক দশক, বিশেষ করে ২০১৫-পরবর্তী বাংলাদেশ দলের যে উন্নতি, তা বিলীন হয়ে যেতে পারে খুব সহজেই।

সেই প্রমাণ জলজ্যান্তভাবে মিলল, তাদের ছাড়া খেলতে নামা প্রথম ম্যাচেই। বৃষ্টির কারণে ম্যাচ নেমে আসে ১০ ওভারে, তাতে নিউজিল্যান্ড তোলে ১৪১।

জবাবে ১০ ওভারও টিকতে পারেনি বাংলাদেশ! ৫৭ বল খেলতে পারে তারা, যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে অল্প বলে গুটিয়ে যাওয়ার তালিকায় চার নম্বরে। সেই ৫৭ বলে ৭৬ রান তুলে বাংলাদেশ হারে ৬৫ রানে।

এই ম্যাচে আরেকবার প্রমাণ হয় এখনও বাংলাদেশ দলের ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সেই তারাই। তারা না থাকলেই তাসের ঘরের মত হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশ দল, ফ্ল্যাশব্যাকে যেন ফিরে যায় বছর বিশেক আগে!

অকল্যান্ডে তাই যখন বাংলাদেশ পঞ্চপাণ্ডবকে ছাড়া মাঠে প্রদর্শনী করে জঘন্য ফিল্ডিং এবং ব্যাটিংয়ের, বাংলাদেশের ক্রিকেট মহলে তখন বিষণ্ণ বিউগলের সুর, তাতে বাজে শেষ হওয়ার অশনি সংকেত। সব কিছুই শেষ হয়ে যায়, সময় খুব বেশি বাকি নেই, তার নিরন্তর মনে করানোর জোর ধাক্কা।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের তাই এখন সময় লম্বা একটি শ্বাস নিয়ে চিন্তা করার, কী হবে একে একে পঞ্চপাণ্ডবের সবাই বিদায় নিলে। কারণ প্রথম যে নমুনার দেখা মিললো, তাতে ভয়ে শরীর কাপা ব্যতিরেকে আর কোনো অনুভূতি খোঁজার উপায় নেই!

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.