Sylhet Today 24 PRINT

কঠিন লড়াইয়ের অপেক্ষায় ফ্রান্স-ইংল্যান্ড

স্পোর্টস ডেস্ক |  ১০ ডিসেম্বর, ২০২২

কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে আজ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ফ্রান্স টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ শিরোপার লক্ষ্যে খেলছে কাতারে, অন্যদিকে ইংলিশরা ১৯৬৬ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ট্রফির স্বাদ নিতে মরিয়া। আল খোরের আল বাইত স্টেডিয়ামে ইউরোপের দুই সেরা দল মুখোমুখি হচ্ছে মেধাবী একঝাঁক ফুটবলার নিয়ে। আজ রাত ১টায় ফ্রান্স-ইংল্যান্ড লড়াই।

৯৯ বছরের পুরনো এ দ্বৈরথে মোট ৩১টি লড়াই হয়েছে; যার মধ্যে ইংল্যান্ড ১৭টি জয় নিয়ে এগিয়ে রয়েছে, আর ফ্রান্স জিতেছে নয়টি। ড্র হয়েছে পাঁচটি ম্যাচ। সর্বশেষ তিন দশকে দুই দলের দেখা হয় ১১ বার, যাতে এগিয়ে ফরাসিরা।

অবশ্য বিশ্বকাপে দুবারের দেখায় দুবারই জয়লাভ করেছে ইংল্যান্ড। ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের পথে ২-০ গোলে ও ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ৩-১ গোলে ফ্রান্সকে হারায় ইংলিশরা। সর্বশেষ পাঁচ দেখায় ফ্রান্স তিনটিতে জিতেছে, একটি জয় পায় ইংল্যান্ড, আর ড্র হয় বাকি ম্যাচটি। এ বিশ্বকাপে ফরাসিরা হট ফেভারিট। আজও নামছে ফেভারিট হিসেবে।

অবশ্য এ ম্যাচের আগে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড দলকে সমীহ করেই কথা বলেছেন ২০১৮ সালের বিশ্বকাপজয়ী কোচ দিদিয়ের দেশম। একই সঙ্গে নিজ দলের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়েও তিনি আত্মবিশ্বাসী। দেশম মনে করেন, প্রতিপক্ষ যত পরিকল্পনাই করুক না কেন, কিলিয়ান এমবাপ্পে মাচে ব্যবধান গড়ে দেবেন।

গতকাল সংবাদ সম্মেলনে নকআউট ম্যাচের চাপ নিয়ে দেশম বলেন, এটা প্রত্যেক দলের জন্যই সত্য, বিজয়ীরাই সব পায়। একজন খুশি হবে, আরেকজন বাড়ি ফিরবে। টুর্নামেন্টে যতদূর যাওয়া যাবে ম্যাচগুলো ততই চিত্তাকর্ষক আর জমজমাট হয়। আমার খেলোয়াড়রা আরো অনেকদূর যেতে চায়। এটা দারুণ এক সুযোগ, তবে অনেকদূর যেতে হলে আপনার ভিত শক্ত হতে হবে।

এমবাপ্পেনির্ভরতা নিয়ে দেশম বলেন, ইংল্যান্ড হয়তো এমবাপ্পের জন্য প্রস্তুতি নেবে, কিন্তু সে তার অবস্থানে থেকেই ব্যবধান গড়ে দেবে। আমাদের আরো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু কিলিয়ান তো কিলিয়ানই এবং সে ব্যবধান তৈরি করার সামর্থ্য রাখে।

দুই দলের শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা। তবে ইংল্যান্ড দলের কোনো দুর্বলতা নেই বলে মনে করেন দেশম। ফরাসি কোচ বলেন, তাদের কোনো দুর্বলতা নেই। সব দলেরই শক্তির জায়গা থাকে, সবার খুব বেশি দুর্বলতা থাকে না, কিন্তু শক্তির জায়গায় কারো কারো খানিকটা ঘাটতি থাকে। ইংল্যান্ড তো আমাদের চারটি ম্যাচ খেলতে দেখেছে। দিন শেষে আপনাকেই চিহ্নিত করতে হবে, কোথায় আপনি আক্রমণ করবেন।

গোলমেশিন এমবাপ্পের ওপরই আজ বেশি নজর দিতে হবে ইংলিশ ডিফেন্সকে। তবে এমবাপ্পেকে আটকানোর ব্যস্ততার পাশাপাশি নিজেরাও আক্রমণের সব অস্ত্র ব্যবহার করবে ইংল্যান্ড। ইংলিশ মিডফিল্ডার ম্যাসন মাউন্ট গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এমবাপ্পে খুবই বিপজ্জনক। এসব খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেললে আপনাকে তাকে নিয়েই বেশি মনোযোগ দিতে হয়, কারণ সে আপনার খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু আমরা এ চ্যালেঞ্জটা নিতে তৈরি। আমাদের কী করতে হবে তা আমরা জানি এবং নিজেরা কেমন খেলি সে ব্যাপারেও অবগত। আমাদের শুধু নিজেদের ফর্মটা ধরে রাখতে হবে। আমরা সেরা ফর্মে রয়েছি এবং প্রচুর গোলও করছি। এ টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ১২টি গোলই বলছে, আমরা সঠিক পথে রয়েছি। আমরা ভালো অবস্থায় আছি ও আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু এখন আমরা বড় পরীক্ষার মুখোমুখি।

ইংল্যান্ডকে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ও ২০২১ সালের ইউরোর ফাইনালে তুলেছেন গ্যারেথ সাউথগেট। এবার আরেকটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার রেসে তার দল। তবে এবার সামনে কঠিন পথ। চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে আজকের ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, এটা বিশেষ এক রাত, দেশের সমর্থকরা এ রাতটির দিকে বিশেষভাবে নজর রাখছে। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে খেলছি। ইংল্যান্ড-ফ্রান্স বলেই কথা, দুই দেশের ইতিহাস বিবেচনায় এটি সব সময়ই বড় এক লড়াই।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছর আমরা ফ্রান্সকে নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ করেছি। তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং আমরা দেখতে চেয়েছি যে ঠিক কী জিনিসগুলো তাদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছে। সেখান থেকে আমরা ভালো কিছু তথ্য পেয়েছি।

বড় কোনো টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে এ প্রথম দেখা হচ্ছে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের। আজ আল বাইতে উচ্চ মানসম্পন্ন লড়াইয়ের আভাস মিলছে। নিজেদের সেরাটা যারা নিংড়ে দিতে পারবে তারাই হাসবে শেষ হাসি। এ লড়াইয়ের মধ্যে থাকছে একাধিক খণ্ড লড়াই।

রাইট ব্যাকদের অগ্নিপরীক্ষা: যখন আপনি ফ্রান্সকে থামানোর কথা ভাববেন তখন ফোকাসটা নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে কিলিয়ান এমবাপ্পের দিকে। ফ্রান্সের সর্বশেষ সাতটি গোলে ছিল এমবাপ্পের ছোঁয়া—হয় তিনি গোল করেছেন, নইলে অ্যাসিস্ট করেছেন। তাই টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ আসরের সেমিফাইনালে উঠতে হলে ইংলিশ ডিফেন্ডারদের সফলভাবে থামাতে হবে এমবাপ্পেকে।

বড় আসরে (বিশ্বকাপ ও ইউরো) এমবাপ্পে যে ১৩টি ম্যাচে মূল একাদশে ছিলেন সেই ম্যাচগুলোয় ফ্রান্স অপরাজিত, এর মধ্যে নয়টিই এসেছে জয় এবং ম্যাচগুলোর ১২টি গোলের সঙ্গে তিনি কোনো না কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, কাতার বিশ্বকাপে টানা দুই জয়ে শেষ ষোলোর টিকিট নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর তিউনিশিয়া ম্যাচে অসংখ্য পরিবর্তন আনে ফ্রান্স। ওই ম্যাচে বেঞ্চে বসে ছিলেন এমবাপ্পে, তাই ফরাসিরাও শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ১-০ গোলে।

এমবাপ্পের অভাব অপূরণীয়। তিনি মাঠে থাকা মানেই প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষার মুখে। তিনি ফ্রান্সের আক্রমণভাগের মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। এরই মধ্যে প্রতিপক্ষের গোলে শট নিয়েছেন ২০টি, প্রতিপক্ষের পেনাল্টি এরিয়ায় বল টাচ করেছেন ৪৬ বার, ফ্রান্সের ৩৬টি আক্রমণের অংশ ছিলেন এ ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।

বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ ও সুযোগ তৈরিতে ফ্রান্সের সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে ইংল্যান্ডের। উভয় দলই বাম প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ পছন্দ করে। দুটি দলই বাম প্রান্ত নিয়ে ৪১ শতাংশ আক্রমণে গিয়েছে। আর ফ্রান্সের থিও হার্নান্দেজ (নয়) ও ইংল্যান্ডের লুক শ (ছয়) বাম প্রান্ত দিয়ে যতগুলো সুযোগ তৈরি করেছেন তা অন্য কোনো দলের কেউ পারেনি। ফ্রান্সের যতগুলো সুযোগ তৈরি হয়েছে তার অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে বাম প্রান্ত দিয়ে।

ইংল্যান্ড একাদশে ডান প্রান্তে কাইল ওয়াকার ও কিয়েরান ট্রিপিয়ারের খেলা মোটামুটি নিশ্চিত। এর মধ্যে ওয়াকার আত্মবিশ্বাসী। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে তিনি এমবাপ্পের মোকাবেলা করেছেন সফলভাবে, যেখানে প্রতি ৯০ মিনিটে তিনি শূন্য দশমিক ৭ শট নিয়েছেন, যেখানে চলতি বিশ্বকাপে এ গড় ৬ দশমিক ৪!

মিডফিল্ডের লড়াই: দুই দলের মধ্যমাঠের লড়াইও জমবে বেশ। সেনেগালের বিপক্ষে জুড বেলিংহামের পারফরম্যান্স দেখে সতীর্থ ফিল ফডেন বলেছেন, একদিন বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার হবেন তিনি। মিডফিল্ডারদের ২৬টি ডুয়াল ও ১১টি আক্রমণে জিতেছেন ১৯ বছর বয়সী বেলিংহাম। আজ তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ফ্রান্সের ২২ বছর বয়সী ইঞ্জিন অরেলিয়েঁ চুয়ামেনি ও ৩১ বছর বয়সী আতোয়াঁ গ্রিজম্যানের সঙ্গে।

বল দখলে রাখা, সুযোগ তৈরি ও অ্যাসিস্ট করায় উভয় দলের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন গ্রিজম্যান। এমবাপ্পের গোলের রসদের মূল জোগানদাতা গ্রিজম্যান আর চুয়ামেনি। ইংল্যান্ডকে জিততে হলে এ সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে হবে।

স্ট্রাইকারদের লড়াই: ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ার জিরু তিন গোল করে ফ্রান্সের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন কাতারে। এ আসরে ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেন করেছেন এক গোল। জিরুর মতো তারও মোট গোলসংখ্যা ৫২। আর একটি গোল করলেই তিনি ওয়েন রুনির রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন। আজ ফ্রান্স বাধা টপকাতে কেনের কাঁধে বড় দায়িত্ব।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.