Sylhet Today 24 PRINT

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় সম্ভাবনার হিসেব নিকেশ

এশিয়া কাপ ২০১৬

এনামুল হক এনাম |  ০৫ মার্চ, ২০১৬

নিজেদের মাঠে দাপট, শাবকের পূর্ণাঙ্গ বাঘ হওয়া আর নিজেদের দলের খারাপ পারফরমেন্স যে যাই বলুক, রবিবার (৬ মার্চ) ভারতের সাথে ফাইনালে বাংলাদেশই মুখোমুখি হচ্ছে। নিকট অতীতে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্য সহজেই বলে দেয় বড় দলকে হারানো আমাদের জন্য আর কোনো দৈব ঘটনা নয়, এও সবার জানা যে এশিয়া কাপের ফাইনালে আমরা নতুন কোনো দল নেই, অতীতে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা নিয়েই যাচ্ছি রবিবারের ম্যাচে।

ফাইনাল ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, জয়। জয় ছাড়া কোনো বিকল্প আমাদের তৃপ্ত করতে পারবে না। ভালো খেলা, মাঝে মধ্যে জেতা আর সম্মানজনক হারের দিন আমরা অনেক আগেই পেছনে ফী এসেছি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ভারতই উপমহাদেশে একমাত্র যোগ্য দল যারা ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হওয়ার যোগ্যতা রাখে। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং এ তারা টি-২০ বিশ্বে যে কোনো দলের জন্য দুঃস্বপ্ন। নিকট অতীতে ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাঠে অস্ট্রেলিয়াকেই ৩-০ তে হারিয়ে এসেছে। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব যদি প্রমাণ করতেই হয় তবে সবচেয়ে ভালো দলকে হারিয়েই তা প্রমাণ করতে হবে, যা টি-২০ বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ দলকে দেবে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস।

২৮৯৭ পয়েন্ট নিয়ে ১২৬রেটিং টি-২০তে এক নম্বরে থাকা ভারত দলকে হারানো রেটিং এ আফগানিস্তানের পেছনে থাকা দলের পক্ষে কতটা বাস্তব?

উত্তরটা এখনই বলে দিতে পারি, খুবই সম্ভব এবং বাস্তব। দলগত শক্তির শতভাগ দেয়ার কথা অনেকেই বলবেন, আমি বলি পারফরমেন্সের ৮০-৯০ভাগ দিতে পারলেও ভারতকে হারানো আমাদের পক্ষে অবশ্যই অসম্ভব কিছু নয়। যে দেশের মাশরাফির মত একজন দলপতি আছেন, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার আর নিজেদের সময়ের সেরা অবস্থানে ব্যাটসম্যান আর বোলাররা আছে, মাঠ ভর্তি দর্শক আছেন... তাদের পক্ষে জয় শুধু মাত্র বাস্তবায়নের ব্যাপার।

কিভাবে আসবে সেই জয়?

সেরা দল গঠন
সেরা খেলোয়াড়দের নিয়েই বর্তমানে আমাদের স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে। হয়তো দলের পরিক্ষিত অনেক খেলোয়াড় নিজেকে ঠিক মেলে ধরতে পারছেন না। কিন্তু আমরা সবাই জানি, সঠিক সময়ে নিজেকে শত ভাগ উজাড় করে দিয়ে একাই দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার ক্ষমতা এই স্কোয়াডে অনেকেরই রয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে মূল একাদশ গঠনে আমি পেসারদের উপর বেশি জোর দেবো। চাই চার জন্য পেসারকে নিয়ে বাংলাদেশ, সাথে সানি স্পেশালিষ্ট স্পিনার এবং ব্যাটিং অলরাউন্ডার কাম স্পিনার হিসেবে সাকিব আল হাসান।

মুস্তাফিজ ইনজুর্ড, তাই মাশরাফি, আল আমিন আর তাসকিনের সাথে দেখতে চাই নতুন সেনসেশন আবু হায়দার রনিকে। চাইবো বাংলাদেশ এই ইয়র্কার মাস্টারকে নিয়ে ফাইনালে নামুক, নতুন বলে নতুন পেসার নিয়ে অতীতেও আমরা ভারতের বিপক্ষে অনেক সাফল্য পেয়েছি। মুস্তাফিজের বিকল্প না হলেও ভারতকে চমকে দেয়ার জন্য আবু হায়দার সুন্দর উদাহরণ হতে পারে। এতে একজন স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান কম খেলালেও অসুবিধা নেই, অতীতের ম্যাচগুলো বিশ্লেষণে দেখা যায় ভারতের বিপক্ষে বিজয়ে বোলারদের অবদানই বেশি। এক্ষেত্রে বলি দিতে হবে মিথুনকে। সৌম্যর সাথে তামিম অপেন করবেন, ওয়ান-ডাউনে সাব্বির, তারপর রাইট-লেফট কম্বিনেশনে মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ। চার পেসার, এক স্পিনার, ছয় ব্যাটসম্যান। দলের প্রয়োজনে এরা ছাড়াও শেষের দিকের প্রায় সবাই ব্যাটিং-এ চলনসই, প্রয়োজনে হাত ঘুরিয়ে উইকেট নিতে পারেন একাধিক খেলোয়াড়, সাথে বোনাস হিসেবে আছে মাশরাফির ম্যাজিক ব্যাটিং। এই টিমই হয়ে উঠতে পারে চমৎকার উইনিং কম্বিনেশন।

ভারতের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই স্পিন খেলায় পটু, স্পিন দিয়ে ভারতকে আটকানোর বুদ্ধি খুব একটা কাজে আসবে না, উইকেটে স্পিন ধরলে কথা ভিন্ন। সেক্ষেত্রে সানি, সাকিবের সাথে সাব্বির, মাহমুদুল্লাহ কার্যকর হবেন। তবে মূল দায়িত্বটাই থাকবে পেসারদের উপর। শুরুতে ৩-৪টি উইকেট নিয়ে ভারতের মিডল অর্ডারকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে হবে। মধ্য ওভারগুলোতে স্পিনার পেসার সমন্বয়ে চাপটা ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে ভারতের ব্যাটিং-লাইন আপে মাহমুদুল্লাহের মত ব্যাটসম্যান নেই যে ৬-৭ এ নেমে গেম চেঞ্জ করে দিতে পারে। ভারতের মূল রানই কিন্তু আসে টপ-অর্ডার থেকে। তাদের টেলএন্ডারদের রানের গড় ফিজি বা পাপুয়ানিউগিনির ব্যাটসম্যানদের থেকেও খারাপ।

মনে রাখতে হবে, ভারত ব্যাটিং এ আক্রমণাত্মক খেলে, তাই প্রতিউত্তরে আক্রমণাত্মক বোলিংই করতে হবে। আইপিএল খেলে তাদের ব্যাটসম্যানদের আত্মবিশ্বাস আকাশচুম্বী। যে কোনো সময়ে একটি সুযোগের বিনিময়েই তারা একজনই গেম চেঞ্জ করে দিতে পারে। রোহিত শর্মাকে সেই সুযোগ গ্রুপ ম্যাচে দিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে বাংলাদেশ দলের।

আইপিএলের মত অতো বড় আসরের অভিজ্ঞতা আমাদের না থাকলেও বিপিএল এর অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে।

নো ক্যাচ মিস!
ফিল্ডিং এ চান্স মিস করা যাবে না, উপরন্তু হাফ চান্সগুলোকে ফুল চান্সে পরিণত করতে হবে। গ্রাউন্ড ফিল্ডিং এ যদি ১০-১৫রানও বাঁচিয়ে দেয়া যায়, তবে টি-২০ ফর্মেটে রান অনেকটাই আয়ত্তের ভিতরে চলে আসে। এবং নিশ্চিত ভাবেই ফিল্ডিং এ ভারত থেকে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত ভালো দল। ওভার প্রতি টাইট ফিল্ডিং এক রান করে সেইভ করতে পারলেও ২০ ওভারে ২০রান সেইভ হয়ে যায়। আমরা চাইবো, ছক্কাটা ব্যাটসম্যান নিজের শরীরের জোরে, দক্ষতাই মারুক, কিন্তু মাঠ কামড়ে বল বাইরে যেতে হলে আমাদের ফিল্ডারকে বলে যেতে হবে।

ব্যাটিং এ তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মাশরাফি আমাদের পরিক্ষিত সৈনিক। মুশফিক, সাকিব হয়তো ততটা ছন্দে নেই, কিন্তু দলের প্রয়োজনে বিশ্বাস করি সৌম্য সরকারের মত জ্বলে উঠবেন। তামিম, সৌম্য আর সাব্বিরের চোখ ধাঁধানো সব স্কোরিং শট, মুশফিকের নির্ভরযোগ্যতা (মানুষটা ছোট হলেও ছক্কাটি কিন্তু বড়ই হাঁকান), সাকিবের সিঙ্গেল-ডাবলস আর বাউন্ডারিতে ব্যস্ত ক্রিকেট, ফিনিশার হিসেবে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়া মাহমুদুল্লাহ আর মাশরাফির “ধরে দিবানি” টাইপ ব্যাটিং... আর কি চাই!!! নাসিরকে মূল একাদশে রাখতে পারছি না বলে খারাপ লাগছে, তবে নির্দিষ্ট দিনে আবহাওয়া এবং উইকেট দেখে তার নাম ঘোষণা শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার। আর হ্যাঁ, একটি ব্যাপার খেয়াল রাখা প্রয়োজন মনে করছি, চার-ছক্কা মারতে গিয়ে আমরা অনেক ডট বল দিয়ে দেই। মাত্র ১২০বলের খেলা, চেষ্টা করতে হবে অপেক্ষাকৃত কম ডট বল দেয়ার।

সব শেষে বলতে চাই, আমাদের মূল শক্তি মাঠের বাইরে, আমাদের দর্শক। তাদের উপস্থিতিই আমাদের মূল প্রেরণা, তাদের কারণেই আমাদের ক্রিকেট আজ এতো দূর এগিয়েছে। আর ভারতকে কখনোই এতো বেশি প্রতিপক্ষ দর্শকের মাঠে ফাইনাল খেলতে হয় না। আমাদের হারানোর কিছু নেই, প্রথম সুযোগেই চাপটা ভারতের কোর্টে দিতে হবে।

আর প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি মাঠে খেলোয়াড়দের জন্য টনিকের মত কাজ করবে। ইনশাআল্লাহ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়বো আমরা। জয় বাংলা।

এনামুল হক এনাম : প্রভাষক, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.