Sylhet Today 24 PRINT

‘যদি স্বর্গ দেখতে চাও, বাংলাদেশে এসো’

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ০৪ জুন, ২০১৬

সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বাংলাদেশের নাগরিক ছিলেন। এ দেশকে তিনি 'স্বর্গ' মনে করতেন। জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্র তাড়িয়ে দিলে এদেশেই আশ্রয় নেবেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

‘আমাকে যদি আমেরিকা থেকে বের করে দেওয়া হয়, দুঃখ নেই। আমার আরেকটি ঘর আছে।’

বাংলাদেশকে নিয়ে এভাবেই বলেছিলেন সর্বকালের সেরা বক্সার মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি। নতুন দেশটির বয়স তখন মাত্র সাত বছর। পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার পর ততদিনে গাছে নতুন পাতা গজিয়েছে, বোমা-শেলে বিধ্বস্ত দেয়ালের গায়ে লেগেছে নতুন ইট-সুরকি। ঠিক এই সময়েই বাংলাদেশে পা রেখেছিলেন আলী।

সপ্তাহব্যাপী এই সফরে সঙ্গী ছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ওভেরোনিকা পোরশে, মেয়ে লায়লা আলী, ভাই, বাবা ও মা।

আলী আসছেন। তাকে একঝলক দেখতে প্রায় দুই লক্ষ বাংলাদেশি তখন ঢাকার বিমানবন্দরে। প্রখর রোদের মধ্যেও মুখে নেই এতোটুকু বিরক্তি। চোখে আনন্দের ঝিলিক। একটু পরেই যে আকাশ থেকে নেমে আসবেন তাদের ‘নায়ক’!

বাংলাদেশের পতাকা লাগানো বিমান যখন মাটি ছুঁয়েছে, ততক্ষণে আলীর জন্য অপেক্ষারত ভক্ত-সমর্থকদের উল্লাস তার কান পর্যন্তও পৌঁছে যাওয়ার কথা। যখন বাইরে আসলেন, সবাই অবাক হয়ে দেখেছেন।  

কিন্তু বাংলাদেশিদের চেয়েও বেশি অবাক হয়েছিলেন আলী নিজেই। তার চিন্তাতেও আসেনি, তৃতীয় বিশ্বের মাত্র স্বাধীন হওয়া একটা দেশ থেকে এমন ভালোবাসা পাবেন তিনি। সবসময়ে রোদচশমা পরে থাকতেন। না, শুধু এদেশের চামড়া পোড়ানো রোদের কারণে নয়। তার বাংলাদেশ ভ্রমণ নিয়ে তৈরি ডকুমেন্টারিতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘আলী সবসময় রোদচশমা ব্যবহার করতেন। যতটুকু না রোদ থেকে বাঁচতে, তার চেয়েও বেশি অশ্রু লুকাতে। পাছে, রিংয়ে যুদ্ধ করা শক্ত আর ভয়ঙ্কর আলীর আবেগ বাংলাদেশি সমর্থকদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়।’

বাংলাদেশে এসেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমন্ত্রণে। তখন আলীর ক্যারিয়ারের ভরা মৌসুম চলে। নিজের জনপ্রিয়তা টের পেয়েছিলেন বাংলাদেশে এসে। ঘুরে ঘুরে দেখেছিলেন বাংলাদেশের দর্শনীয় সব স্থান। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, বাঘ সংরক্ষণাগার, সিলেটের অপরূপ সুন্দর চা বাগান, রাঙামাটি আর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার।

মজার ব্যাপার হলো, সরকারী অতিথি হলেও যেখানেই গেছেন সেখানেই তার সাথী হয়েছে মানুষের ঢল। বাংলাদেশের মানুষ তাকে জয় করেছে। তিনিও জয় করেছেন সবার মন। তাদের সঙ্গে হেসেছেন, হাসিয়েছেন, কেঁদেছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে এসে সবচেয়ে মজার কাণ্ডটাও আলী ঘটিয়েছিলেন বক্সিং রিংয়েই। পল্টনের যে মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম, সেটির উদ্বোধন সেবার এসে নিজেই করেছিলেন। স্টেডিয়ামের উদ্বোধনের দিন গ্লাভস পরে রিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। বিপক্ষে বক্সিংয়ে লড়েছিল ১২ বছর বয়সী এক ক্ষুদে বক্সার। মহানরা হেরে জয় করেন। মন জয় করেন। আলীও সেটাই করেছিলেন। ওই ক্ষুদে বক্সারের কাছে হারার ভান করছিলেন। বিনোদন দিয়েছিলেন দর্শকদের।

আলীকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করে তৎকালীন সরকার। রাষ্ট্রপতি জিয়া বিশ্বখ্যাত বক্সার আলীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের সনদপত্র ও পাসপোর্ট তুলে দেন ।

মাত্র কয়েকদিনের ভ্রমণে বাংলাদেশকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে আসার সময়ে যেমন মানুষের ঢল নেমেছিল, আমেরিকার বিমানে ওঠার দিনও একইরকম। বিমানে ওঠার আগে আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন কিংবদন্তি আলী। ক্যামেরার দিকে বাংলাদেশ থেকে পাওয়া পাসপোর্টটা নাড়িয়ে বলেছিলেন, ‘যদি স্বর্গ দেখতে চাও, বাংলাদেশে এসো’।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.