Sylhet Today 24 PRINT

মোহাম্মদ আলির কিংবদন্তী হয়ে উঠার নেপথ্যে ছিলো এক সাইকেল চোর

স্পোর্টস ডেস্ক |  ০৪ জুন, ২০১৬

১৯৫৪ সাল। কেন্টাকির লুইসভিলের একটি বাড়ির বাইরে নিজের বাইসাইকেল রেখে ভেতরে প্রবেশ করলো ১২ বছর বয়সী এক বালক। উদ্দেশ্যে ফ্রি ক্যান্ডি এবং পপকর্ন সংগ্রহ করা। ফ্রি জিনিস পেতে একটু সময় লাগলো। এর মধ্যেই বাইসাইকেলটা হাওয়া হয়ে গেলো। কোন এক বেরসিক চোর চুরি করে নিয়ে গেলো ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়র নামে বালকটির বহু শখের বাইসাইকেল।

নিজের সাইকেল হারিয়ে বেজায় খেপে গেলো বালক ক্লে। সোজা চলে গেলো ওই বিল্ডিংয়েরই বেজমেন্টে অবস্থিত কলম্বিয়া ট্রেনিং সেন্টারে। যেখানে একটি বক্সিং প্রোগ্রাম আয়োজনের দায়িত্ব ছিলেন জো মার্টিন নামে এক পুলিশ অফিসার। তিনি আবার বক্সিং কোচও বটে।

বালক ক্যাসিয়াস ক্লে সোজা তার কাছে গিয়ে হাজির। চোখে-মুখে সমস্ত রাগ ফুটিয়ে নিজের সাইকেল হারিয়ে যাওয়ার কাহিনী বর্ণনা করলেন এবং বললেন, তিনি ওই চোরকে সাজা দিতে চান। মারতে চান একটি বক্সিং পাঞ্চ। বালকের চোখে-মুখে ক্রোধ আর হিংসার প্রতিমুর্তি দেখে কোচ জো মার্টিন যেন সোনা চিনে ফেলেন।

মুহুর্তে কৌশল অবলম্বন করে তিনি বললেন, ‘বেশ! পাঞ্চ মারতে চাও ভালো কথা। তার আগে যে তোমাকে পাঞ্চ মারার নিয়ম-কানুন, কলা-কৌশল শিখতে হবে! না হয় উল্টো পাঞ্চ খেয়ে হাসপাতালের বিছানায় যেতে হবে।’

বালক রাজি হয়ে গেলেন। শুরু হলো বক্সিং শেখার পালা। সেই শুরু। এক সাইকেল চোর শুরু করে দিয়ে গেল এক কিংবদন্তীর সর্বকালের সেরা হয়ে ওঠার গল্প। দেখা গেলো, ভাগ্য কিভাবে বদলে দেয় একজন মানুষের জীবন!

১২ বছর বয়সী সেই ক্যাসিয়াস ক্লে জুনিয়রই একদিন হয়ে উঠলেন কিংবদন্তী বক্সার মোহাম্মদ আলি- অ্যাথলেট অব দ্য সেঞ্চুরি। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড তাকে নির্বাচিত করেছে গত শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবীদ হিসেবে। বিশ্বব্যাপি সাধারণ মানুষের কাছে দ্য গ্রেটেস্ট অ্যাথলেট অব দ্য আর্থ। পৃথিবীর সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবীদ। ১৯৪২ সালে যার জন্ম। ৭৪ বছরের জীবন পাড়ি দিয়ে অবশেষে ২০১৬ সালে চলে গেলেন পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।

১৯৫৪ সালে সাইকেল চোরের কল্যাণে বক্সিং শেখা শুরু করেন জো মার্টিনের কাছে। কেন্টাকির এই বক্সিং কোচ মোহাম্মদ আলিকে শিখিয়েছিলেন, কিভাবে প্রজাপতির মত নেচে নেচে মৌমাছির মত হুল ফোটাতে হয়।

বিবিসির বক্সিং কমেন্টেটর মাইক কস্টেলো তার স্পেশাল নিবন্ধে লিখেছেন, ক্যাসিয়াস ক্লের সাইকেল চুরির ঠিক ৫০ বছর পর কেন্টাকির সেই ফ্রিডম হলে তিনি গিয়েছিলেন মাইক টাইসন এবং ড্যানি উইলিয়ামসের লড়াই নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য। সেই হলটিতেই ১৯৬০ সালের অক্টোবরে প্রথম হেভিওয়েট বক্সিংয়ে অভিষেক ঘটে মোহাম্মদ আলির। একই বছর তিনি রোম অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক জিতে নেন।

মাইক কস্টেলো বলেন, ‘মাইক টাইসন আর ড্যানি উইলিয়ামসের লড়াই দেখার ফাঁকে কথা হয়েছিল আলির বড় ভাই রহমানের সঙ্গে। তিনি আবার আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন শহরের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত তাদের পুরনো বাড়িতে। সেখানেই স্মৃতিচারণ করেন মিস্টার রহমান। তিনি বলেন, আমাদের মাত্র দুটি বেডরূম ছিল। মা এবং বাবা থাকতেন এক রুমে। অন্য রুমে থাকতাম আমি এবং ক্যাসিয়াস এবং আমরা প্রায় সময়ই দুই ভাই মিলে এখানে (বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা) এসে মার্বেল খেলতাম।’

মোহাম্মদ আলির ভাই বলেন, ‘আমার মনে আছে ১৯৬০ সালে যখন সে অলিম্পিক স্বর্ণপদক জিতে আসলো, তখন সব জায়গায় শুধু মানুষ আর মানুষ।’ ১৯৬৪ সালে মিয়ামিতে, ২২ বছর বয়সেই সারা বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে হৈ চৈ ফেলে দেন মোহাম্মদ আলি। যখন তিনি বিশ্ব হ্যাভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে হারিয়ে দেন সনি লিস্টনকে। এরপরই নিজের নাম এবং বক্সিংয়েরই ভাগ্য বদলে দিতে থাকেন মোহাম্মদ আলি।

১৯৭৫ সালে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ আলি। তার আগে ১৯৭১ সালে জো ফ্রেজারের সঙ্গে লড়েন ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি।’ নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ার গার্ডেনে এই লড়াইটি প্রায় ৩০ কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছিল।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.