Sylhet Today 24 PRINT

মরিনহো এখন ‘পিসফুল ওয়ান’

স্পোর্টস ডেস্ক |  ২২ মার্চ, ২০১৭

২০০৪ সালে চেলসিতে প্রথমবার যখন এসেছিলেন, নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ বা ‘বিশেষ একজন’ বলে। ২০১৩ সালে দ্বিতীয়বার লন্ডনের ক্লাবটিতে এসে নিজেকে বলেছিলেন, ‘দ্য হ্যাপি ওয়ান’।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দায়িত্ব নেওয়ার আট মাস হয়ে গেল, একটা শিরোপাও জিতে ফেলেছেন, তবু হোসে মরিনহো এখানে নিজের গায়ে তকমা দেননি।

বাকি পড়ে যাওয়া ‘কাজটা’ এবার সেরে ফেললেন। ‘স্পেশাল’ ‘হ্যাপি’ ওসব তকমায় ইউনাইটেড কোচের এখন আর আগ্রহ নেই। তিনি এখন ওসবে নিরাসক্ত। এখন তিনি নিজেকে বলছেন, ‘পিসফুল ওয়ান’!

ইংলিশ ফুটবলে ধারাটা তিনিই শুরু করেছিলেন—নিজেই নিজেকে কোনো একটা বিশেষ নাম দিয়ে দেওয়া। এখন এমন হয়েছে, নতুন কোনো বিখ্যাত কোচ ইংলিশ কোনো ক্লাবে এলেই সাংবাদিকদের প্রশ্ন তালিকায় ওপরের দিকে থাকে এই প্রশ্নটি, ‘মরিনহো নিজেকে “স্পেশাল ওয়ান” বলেছিলেন, আপনি নিজেকে কী নাম দেবেন?’

কিন্তু আশ্চর্য! সেই মরিনহোই ইউনাইটেডে ‘বেনামি’! এ কারণেই কিনা, ফ্রেঞ্চ ফুটবল ম্যাগাজিন পর্তুগিজ কোচকেই জিজ্ঞেস করল, রেড ডেভিলদের কোচ হিসেবে নিজেকে কীভাবে পরিচয় করাবেন মরিনহো? তাতে ৫৩ বছর বয়সী কোচের উত্তর, ‘আমি বলব, শান্ত একজন!’

ইউনাইটেডে আট মাসের মধ্যেই অবশ্য দুবার মাঠ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন, জরিমানাও গুনেছেন। সেগুলো মনে রেখেই মরিনহো বলছেন, ‘সবাই ভেবেছিল আমি কেবল ঝামেলা বাধাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটাই ঝামেলা করেছি, একবারই পানির বোতলে লাথি মেরেছিলাম। এটাই আমার সমস্যা। একটু হতাশ হয়ে পড়ি। বোতলে লাথি মারি। কিন্তু এখানে আসার পর আট মাসে এই একবারই রাগ দেখিয়েছি। তাই বলব, এখন আমি “শান্ত” হয়ে গেছি। অবশ্য এখন এটা বলছি, কালকেই আবার দেখা গেল মাঠ থেকে বহিষ্কৃত হলাম।’

তবে মাঠের পাশে যে মরিনহোকে দেখেন, মাঠের বাইরে তিনি অন্য মানুষ। পর্তুগিজ কোচ নিজেই বললেন, ‘মানুষ মরিনহো কোচ মরিনহোর সম্পূর্ণ বিপরীত। সে (মানুষ মরিনহো) শান্ত, যত্নশীল, যে কিনা সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে। বাড়ি ফিরে ফুটবল না দেখে থাকা, ফুটবল নিয়ে না ভাবা আমার জন্য সহজ। আমি পারি এটা। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পারতাম না। সব সময়ই ফুটবলের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলাম। ২৪ ঘণ্টার ২৪ ঘণ্টাই।’

৫৩ বছরের জীবনে কম তো আর দেখেননি। বয়সের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বেড়েছে, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করাও শিখেছেন। কিসে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, সেটিও এখন ভালো বোঝেন। নিজেই বললেন, ‘পরিণত হওয়ার উপায় খুঁজতে হয়েছে আমাকে। আজ একজন মানুষ হিসেবে আমার যেমন ব্যক্তিত্ব, তাতে আমি খুশি। আগের চেয়ে পরিণত, অনেক শান্ত। একটা জয় এখন আর চাঁদে যাওয়ার অনুভূতি দেয় না, হারও নরকযন্ত্রণা দেয় না। আমার মনে হয় নিজের এই শান্ত-সমাহিত ভাবটা খেলোয়াড়দের মধ্যেও পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় আছি। তবে উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখনো আগের মতোই আছে। আগের মতোই দলের সবকিছুতে জড়িয়ে আছি, আগের মতোই পেশাদার। তবে আবেগ আগের চেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।’

তা এই পরিণত মরিনহো পারবেন অ্যালেক্স ফার্গুসন-উত্তর ইউনাইটেডকে আবার শীর্ষে ফেরাতে? এই প্রশ্নের উত্তরেও বাস্তবতাবোধের পরিচয়, ‘এমন একটা ক্লাবে এসেছি, যাদের গর্ব করার মতো দুর্দান্ত ইতিহাস আছে। কিন্তু ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলো এখন আর্থিকভাবে অনেক ক্ষমতাবান, এখানে (দলবদলের) বাজার সবার জন্যই খোলা।’ তুলনা দিলেন জার্মান লিগের সঙ্গেও, ‘জার্মানিতে বায়ার্নকেই দেখুন। এক মৌসুমে ওরা বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সেরা খেলোয়াড় মারিও গোটশেকে নিয়ে এল, পরের মৌসুমে রবার্ট লেভানডফস্কিকে, গত মৌসুমে ম্যাটস হামেলসকেও। কিন্তু ইংল্যান্ডে কোনো ক্লাবই এখন আর স্থায়ীভাবে দাপট দেখাতে পারবে না। সেটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হোক বা লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটিই হোক। শক্তিটা ভাগ হয়ে গেছে।’

এত এত ভাগের মধ্যে ইউনাইটেডকেই সবচেয়ে শক্তিশালী করার চ্যালেঞ্জে ‘শান্ত’ থাকতে পারবেন তো মরিনহো?
সূত্র: ডেইলি মেইল ও ডেইলি মিরর

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.