Sylhet Today 24 PRINT

ব্যাটিং ব্যর্থতায় আড়াই দিনেই শেষ ব্লুমফন্টেইন টেস্ট

স্পোর্টস ডেস্ক |  ০৮ অক্টোবর, ২০১৭

১৪৭ আর ১৭২; দেখে মনে হতে পারে কোন ব্যাটসম্যানের ব্যক্তিগত রান। না ভুল, ওগুলো আসলে বাংলাদেশ দলের সম্মিলিত সংগ্রহ দুই ইনিংসে। ফলাফল ইনিংস ও ২৫৪ রানে বিশাল পরাজয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ।

টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরুতে সমালোচনার মুখে থাকা মুশফিকের জন্যে আক্ষেপের প্রতিশব্দ হতে পারে এ টেস্ট, কিন্তু ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে কী এমন পরিবর্তন আসত দলে। দলের প্রত্যেকেই যেখানে উইকেটে থাকার চাইতে বাইরে থাকাটাকেই শ্রেয় ভেবেছিলেন! ফলে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে বাংলাদেশ অলআউট মাত্র ১৭২ রানে, ৪২.৪ ওভার খেলে। প্রথম ইনিংসে খেলেছিল বাংলাদেশ ৪২.৫ ওভার; রান করেছিল সর্বসাকুল্যে ১৪৭।

২০১৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ২৪৮ রানে হারার পর এই প্রথম ইনিংস ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সর্বোচ্চ হার। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় হার এটিই। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে প্রোটিয়াদের জয় ছিল ইনিংস ও ২০৫ রানে। 

প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের বিশাল পরাজয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে যেখানে প্রতিরোধ আর ফিরে আসার মিশনে নামার কথা ছিল বাংলাদেশের সেখানে হয়েছে আরও করুণ পরাজয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানের জবাবে দুই ইনিংস মিলিয়ে ধারেকাছেও যেতে পারে নি মুশফিকের দল।

ব্লুমফন্টেইন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান তোলে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৪৭ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৪২৬ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে পুরোনা ব্যর্থতার ধারায় ফিরে যায় বাংলাদেশ দল। দলের একজন ব্যাটসম্যানও টেস্ট মেজাজে খেলতে পারেন নি, চেষ্টাও করেন নি উইকেট আঁকড়ে পড়ে থাকতে।

প্রথম ইনিংসে ৪২৬ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ শুরুতেই সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসকে হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ১০০ রানের আগেই ইমরুল ও মুশফিক ফিরে গেলে সেই চাপ আরো বেড়ে যায়। লিটন দাস ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। তবে পরপর দুজনের বিদায়ে দলকে ঠেলে দেন খাদের কিনারে, সেখান থেকে বেরুতে পারে নি দল।

সৌম্য ৩, মুমিনুল ১১, ইমরুল ৩২ ও মুশফিক ২৬, সাব্বির ৪, তাইজুল ২, রুবেল ৭ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন। এছাড়া লিটন ১৮ এবং মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৪৩ রান করে। এছাড়া শুভাশীষ অপরাজিত থাকেন ১২ রানে, আর সবশেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মোস্তাফিজ ৭ রান করে।

দ্বিতীয় ইনিংসেও রাবাদা নেন ৫ উইকেট; ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়া হলো তার। ২২ টেস্টে ৫ উইকেট নিলেন এনিয়ে ৭ম বার। ম্যাচ ১০ উইকেট তৃতীয়বার।

রোববার টেস্টের তৃতীয় দিন বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। দিনের শুরুতেই দলীয় ১৩ রানের মাথায় ক্যাগিসো রাবাদার বলে দ্বিতীয় স্লিপে ফাফ ডু প্লেসিসের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য।

সৌম্যর বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন মুমিনুল। তবে তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। রাবাদার করা নবম ওভারের পঞ্চম বলে ডিপ স্কয়ার লেগে কেশব মহারাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে সৌম্যকে অনুসরণ করেন মুমিনুল। তার বিদায়ের পর ইমরুলের সঙ্গে ক্রিজে যোগ দেন মুশফিক।

শুরুতেই দুই উইকেট হারানোর পর দারুণ খেলছিলেন ইমরুল-মুশফিক। তবে বেশিদূর এগোতে পারেনি এই জুটি। ডোয়াইন অলিভিয়ের করা ১৬তম ওভারে লেগ সাইডের বাইরের বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কুইন্টন ডি কককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ইমরুল। ইমরুলের বিদায়ের পর ক্রিজে মুশফিকের সঙ্গী হন মাহমুদউল্লাহ।

এই দুজন দারুণই খেলছিলেন। তবে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত মুশফিক পারনেলের করা ২৪তম ওভারের চতুর্থ বল প্যাড দিয়ে ডিফেন্ড করতে গিয়ে আউট হন। বল লাইন মিস করে বেরিয়ে যাবে বলেই ভেবেছিলেন তিনি। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়ররা জোরালো আবেদন করলে তাতে সাড়া দিতে দেরি করেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মুশফিকের।

মুশফিকের বিদায়ের পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও লিটন। তবে বোকামির খেসারত দিয়ে লিটন ফিরে গেলে সেই প্রতিরোধ ভেঙে যায়। দলীয় ১৩৬ রানের মাথায় আন্দিলে ফেলুকওয়াইয়োর করা ৩৩তম ওভারে পঞ্চম বল ছেড়ে দিতে গিয়ে বোল্ড হন লিটন। রাবাদার করা পরের ওভারের শেষ বলে 'গালি' অঞ্চলে ডিন এলগারের দুর্দান্ত ক্যাচের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ।

দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড়ের জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যাটিংয়ে বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ ১০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কার মুখে পড়ে। তবে লিটন দাসের হাফসেঞ্চুরির ওপর ভর করে ১৪৭ রান করতে সক্ষম হয় টাইগাররা। বাংলাদেশের হয়ে লিটন দাস সর্বোচ্চ ৭০ এবং ইমরুল কায়েস করেন ২৬ রান। এছাড়া তাইজুল ইসলাম ১২ ও রুবেল হোসেন ১০ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ক্যাগিসো রাবাদা সর্বোচ্চ পাঁচটি উইকেট নেন। এছাড়া ডোয়াইন অলিভিয়ে তিনটি এবং ওয়েন পারনেল ও কেশব মহারাজ নেন একটি করে উইকেট।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.