Sylhet Today 24 PRINT

মানুষজনের বিদ্রূপে ট্রফি রেখে পালিয়েছিল শ্রীনি, আনন্দবাজারকে কামাল

সিলেটটুডে স্পোর্টস ডেস্ক |  ২৪ জুন, ২০১৫

শ্রীনিবাসন আর আ হ ম মুস্তাফা কামালের দ্বন্দ্ব বিশ্বকাপ থেকেই চলে আসছে। মুলত আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসনের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন কামাল। 

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচে বিতর্কিত আম্পায়ারিং নিয়ে গণমাধ্যমে মন্তব্য করে ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন আইসিসির তৎকালীন সভাপতি মোস্তফা কামাল। বিতর্কের রেশ গড়ায় বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত। সেখানেই থেমে থাকেনি এ বিতর্ক। দ্বন্দ্ব শুরু হয় আইসিসি সভাপতি ও চেয়ারম্যানের। বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরে পদত্যাগ করেন মোস্তফা কামাল।

এরপর আইসিসির চেয়ারম্যান এন. শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন তিনি। এখন সুযোগ পেলেই আইসিসি চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসনকে একহাত নিতে পিছপা হন না সাবেক আইসিসি প্রেসিডেন্ট।

সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল, আইসিসি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী কামাল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেটে যে দু’জন প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের একজন আপনি। লোকে বলে, আলি ব্যাকারের সঙ্গে আপনি জুটি না বাঁধলে বাংলাদেশ ক্রিকেট এই জায়গায় পৌঁছত না। আজ মনে হচ্ছে, আপনার সে দিনের যুদ্ধ এতোদিনে সার্থক হল?
কামাল: এটা ঠিক যে, আমাদের দেশে ক্রিকেট এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, আগে তা ছিল না। একটা সময় মাঠে আড়াই’শ লোক হত ক্রিকেট দেখতে। ফুটবলের অবস্থা রমরমা তখন। আমি ক্রিকেট প্রশাসনে আসার পর ভেবেছিলাম কী করে সব পাল্টানো যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার ভদ্রলোকের সঙ্গে তখনই দেখা হয়। উনি বললেন, ক্রিকেটের উন্নতি ঘটাতে হলে মাঠে লোক আনতে হবে। তারকা আনো ঘরোয়া ক্রিকেটে। আনলাম। ফেয়ার ব্রাদারকে নিয়ে এলাম ‘৯২ সালে। তারপর অনেকেই এসেছে। আকরাম এসেছে। আফ্রিদি এসেছে। শোয়েব মালিক তো শোয়েব মালিক হল ঢাকায় খেলে।

প্রশ্ন: রবিবার রাতে আপনি মিরপুরে বসে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাস দেখলেন। কোথাও মার্চের মেলবোর্ন মনে পড়ল?
কামাল: আমি মেলবোর্ন নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। বিশ্বকাপে মেলবোর্ন থেকে ফিরে এসে আমি আইসিসি থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। কিন্তু পদত্যাগের সময় আমার কিছু অবজারভেশন ছিল। ক্রিকেট টিম, দেশের বোর্ডের কাছে কিছু বক্তব্য ছিল। আমি যা কিছু আবেদন করার, টিমের কাছে করেছিলাম। বলেছিলাম যা আমি পারিনি, তোমাদের করে দেখাতে হবে। ওরা আমার চোখের জল সেদিন দেখেছিল। সেটা ওরা সারা জীবন মনে রাখবে।

প্রশ্ন: মেলবোর্নে ঢুকবেন না বলেও মেলবোর্ন নিয়ে এত কিছু বলে ফেললেন। আজ মনে হয়, সেদিন যদি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত বিরুদ্ধে না যেত, বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল জিতে টিম মাঠ ছাড়ত?
কামাল: সেটা তো কখনও লুকোইনি। হার-জিত অন্য কথা। কিন্তু খেলাটাকে সে দিন যেভাবে চালানো হয়েছিল, অভাবনীয়। শুধু ওই ম্যাচটায় কোনও প্রযুক্তি ব্যবহার হয়নি। কোনও ক্যামেরা ব্যবহার হয়নি। বড় পর্দায় (জায়ান্ট স্ক্রিনে) লিখে দেওয়া হয়েছিল, ইন্ডিয়া জিতবে। এসব চালাতে পারত দু’জন। আইসিসি প্রেসিডেন্ট বা চেয়ারম্যান। আমি আইসিসি প্রেসিডেন্ট যখন, নিশ্চয়ই এ সব করতে পারতাম না। তা হলে পড়ে থাকল কে? আমি সন্দেহ করেছিলাম, খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে। তারপর দেখলাম, ঘটেই যাচ্ছে। অন্যায় দেখলে আমি চুপ করে থাকব কেন? আইসিসি প্রেসিডেন্ট হতে পারি, লৌহমানব তো নই। যা বলেছি, সব সত্যি।

প্রশ্ন: মানে, পরিচ্ছন্ন ক্রিকেট হলে আপনারা মেলবোর্ন কোয়ার্টার ফাইনালও জিততেন?
কামাল: দৃঢ় বিশ্বাস, জিততাম। বিশ্বকাপে যে ক’টা বাংলাদেশ টিম আজ পর্যন্ত গিয়েছে, তার মধ্যে ওটাই সেরা ছিল। আমি মনে করি, অন্যায়-অবিচার না হলে আমরা আরও ভাল করতে পারতাম। তবে এখন আর ও সব মনে রেখে কী হবে? বললাম তো, ও সব ভুলে গিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনি বলছেন ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশ তো ভোলেনি। রবিবার প্রেস কনফারেন্স করতে যাওয়ার সময় গ্যালারি থেকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে ‘মওকা, মওকা’ বলে বিদ্রুপ করা হয়েছে।
কামাল: আপনি যেটা বলছেন ঠিক নয়। ওটুকু এক্সপ্রেশন হয়েই থাকে। কিন্তু ভারতীয় খেলোয়াড় বা ভারত নিয়ে একজন দর্শকও আজেবাজে মন্তব্য করেননি। দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি। আমার লোক ছিল। প্রত্যেক মিনিট মনিটরিং হয়েছে।

প্রশ্ন: একটা কথা বলুন। আপনি ভারতীয় বোর্ডে নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন জামানা দেখেছেন। এখন জগমোহন ডালমিয়া জামানা দেখছেন। দু’টার কী তফাত?
কামাল: ডালমিয়া সাহেব সম্পর্কে আমাদের ধারণাটা অন্য রকম। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন, ভোলা সম্ভব নয়।

প্রশ্ন: আর শ্রীনি? আইসিসি চেয়ারম্যান পদ থেকে তো এখনও সরানো গেল না। গতকালও ওয়েস্ট ইন্ডিজে আইসিসির সভায় গেলেন চেয়ারম্যান হিসেবে।
কামাল: এখন আমি আর আইসিসিতে নেই। এখন আর কিছু বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, ওর জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এতদিনে আত্মহত্যা করতাম! বিশ্বকাপ ট্রফি দিতে গেল, লোকে এমন বিদ্রুপ করল যে ট্রফি ফেলে পালিয়ে গেল। তারপরেও এখনও আছে। গায়ের জোরে আইসিসি মিটিংয়ে চলে যাচ্ছে, যাবেও। ন্যায়-অন্যায় বোধ তো ওর নেই। থাকলে কোয়ার্টার ফাইনালের পর আমাকে বলত না, বক্তব্য তুলে নিতে। ক্ষমা চাইতে। যেখানে ওর চেয়ারম্যানশিপ আমিই এনডোর্স করেছিলাম। তবে যা-ই করুক, ওর বিচার হবেই।

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.