Sylhet Today 24 PRINT

রাশিয়ায় এশিয়ান বিপ্লব!

চয়ন চৌধুরী |  ২০ জুন, ২০১৮

পোল্যান্ড-সেনেগাল ম্যাচ দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে ৩২ দলের একটি করে ম্যাচ শেষ হয়। এক সপ্তাহ বয়সী রাশিয়া বিশ্বকাপ ইতিমধ্যে অনেক চমক দেখিয়েছে। তারপরও গ্রুপ পর্বে প্রথম রাউন্ডের শেষ ম্যাচের আগে পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকিয়ে চমক লাগল। রাশিয়া, ইরান, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, সুইডেন, বেলজিয়াম ও জাপান নিজেদের গ্রুপের শীর্ষে!

টপ ফেবারিট ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, স্পেন প্রথম ম্যাচে ড্র করে ঝুঁকিতে রয়েছে। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি তো হেরেই গেছে! ফেবারিট তকমাধারী ফ্রান্স জিতলেও মন ভরাতে পারেনি। ফেভারিটদের মধ্যে বেলজিয়াম ব্যতিক্রম হলেও বিশ্বকাপ ঐতিহ্যে তারা আবার কুলীন নয়! সব মিলে পুতিনের দেশে ফুটবল ঈশ্বর কোন চমক দেখাবেন?

ব্রাজিল ও জার্মানির ব্যতিক্রম বাদ দিলে ১৮ বারই আয়োজক মহাদেশেই শিরোপা থেকেছে। ভৌগলিকভাবে ইউরেশিয়া ভূখণ্ডে অবস্থিত হলেও রাশিয়া মূলত ইউরোপের অন্তর্ভুক্ত। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রথম রাউন্ডে এক ম্যাচ আগে আটটি গ্রুপের মধ্যে ছয়টিতেই শীর্ষে আছে ইউরোপের দল। তারচেয়েও বিস্ময়কর আর বাকি দুটিতে আমেরিকা নয়, শীর্ষে আছে এশিয়ার প্রতিনিধি।

বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচের পর পয়েন্ট টেবিলের এই হিসেব নিকেশ অনেক বদলে যাবে নিশ্চিত। কিন্তু পুতিনের দেশে বিশ্বকাপ পুঁচকে দলের হাতি বধের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। ফুটবলের বৈশ্বিক আসর মানেই চমক; অতীতে প্রায় প্রত্যেক আসরেই তার প্রমাণ মিলেছে। অতীতে দু’একটি চমক দেখা গেলেও এবার যেন চমকের পসরা সাজিয়ে বসেছে বিশ্বকাপ।

কাগজে-কলমে এবং ফুটবল ঐতিহ্যে ‘বড়’ দলের এমন অপ্রত্যাশিত শুরু নিয়ে সমর্থকেরা চরম উদ্বেগে। ফুটবল পণ্ডিতেরাও নানা হিসেব-নিকেশ, বিচার-বিশ্লেষণ করে কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন। আর টপ ফেবারিট দলের কোচ-খেলোয়াড়দের অবস্থা তো তথৈবচ। অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন, শুরুতেই হোঁচট খাওয়ায় ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে দলগুলো।

শেষপর্যন্ত যাই হোক; শুরুতে এমন বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা কী? প্রথমত অবশ্যই বছরব্যাপী ইউরোপিয়ান ফুটবলের প্রভাব। আজকাল স্পেন, ইংল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন লিগে কথিত ‘বড়’ দলের পাশাপাশি ‘ছোট’ দলের অনেক খেলোয়াড় নিয়মিত খেলছেন। এতে বড় আসরে ‘ছোট’ দলের খেলোয়াড়ের খেলার অভিজ্ঞতার ফলে পার্থক্য অনেকখানি কমে যাচ্ছে।
 
দ্বিতীয়ত আধুনিক ফুটবলে ম্যান মার্কিংয়ের বদলে জোনাল মার্কিং পদ্ধতির প্রসার। পেলে-ম্যারাডোনাদের যুগে ফুটবলে ম্যান টু ম্যান মার্কিংয়ের প্রচলন থাকায় তারকারা মাঠে একটু বেশি সুযোগ পেতেন। নিজের মার্কারকে ফাঁকি দিলেই মাঠে ভয়ঙ্কর হওয়ার সুযোগ ছিল তাদের সামনে। কিন্তু বর্তমান জোনাল মার্কিংয়ের যুগে পুরো মাঠজুড়েই থাকে চ্যালেঞ্জ।

তারপরও যে মাঠে নিজের জাত চেনানো যায়; তার প্রমাণ অবশ্য শুরুতেই দিয়েছেন পর্তুগালের রোনালদো। তবে সমর্থনের দিক দিয়ে এগিয়ে থাকা আর্জেন্টাইন মেসি বা ব্রাজিলের নেইমার সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেননি। সেই ক্লাব বা দেশের ফুটবলের পার্থক্য তাদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। আশা করি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারাও মানিয়ে নেবেন সতীর্থ ও পরিস্থিতির সঙ্গে।

অবশ্য গ্রুপ পর্ব শেষে যদি এশিয়ার দু’একটি দল প্রথম ম্যাচের মত পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ দুইয়ে থাকে, মন্দ কী! অন্তত শুরুতে প্রিয় দলের অপ্রত্যাশিত ফলাফলের বিপরীতে আপাতত মরক্কোর বিরুদ্ধে ইরান এবং কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের জয় উপভোগ করতে তো আপত্তি নেই!

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.