Sylhet Today 24 PRINT

সাফ অনুর্ধ-১৬ ফুটবল: ফাইনালে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক |  ১৬ আগস্ট, ২০১৫

সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন নেপালের কোচ উপেন্দ্র মানসিং। ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ম্যাচ নিয়ে বলার পর সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চাইলেন বাংলাদেশ-আফগানিস্থানের ম্যাচ কাকে এগিয়ে রাখবেন। জবাবে উপেন্দ্র যা বললেন তা অনেকটা এরকম- ‘দু’দলই সেমিফাইনালে নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এসেছে। তাই আগে থেকে কিছু বলা সম্ভব না। তবে বাংলাদেশ কিছুটা এগিয়ে থাকবে। তাদের দুটো প্লেয়ার- সাদ আর নিপু, এককথায় দূর্দান্ত। যেমন গতি তেমন ড্রিবলিং। আফগানদের জিততে হলো এই দু’জনকে সামলাতে হবে।’

উপেন্দ্র এই কথাগুলো বলেছিলেন শনিবার বিকেলে, সেমিফাইনালপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে। অথচ কী আশ্চর্য রোববার প্রথম সেমিফাইনাল যেনো উপেন্দ্র’র বিশ্লেষনেরই হুবুহু প্রতিফলন! সাদ আর নিপুকে আটকে রাখতে পারেনি আফগানিস্তান। ফলাফল ফাইনালে বাংলাদেশ। ০-১ গোলে আফগানদের পরাজয়।

কর্দমাক্ত হয়ে পড়া মাঠ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলো ৪ দলই। টানা তিনদিনের বৃষ্টির পর কাল হেসে উঠলো রোদ। হাসি বাফুফে’র কর্মকর্তাদের মুখেও। রোদের হাসির সুযোগ মাঠটাকে একটু শুকিয়ে নিতে চাইলেন তারা। ফলে একঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া হলো খেলা। ৩ টার বদলে ৪ টায়। অথচ ঠিক ৩ টা থেকেই ফের বৃষ্টির বাগড়া।

ফলে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের কাদাময় মাঠেই প্রথম সেমিফাইনাল খেলতে নামতে হলো বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানকে। মাঠ খেলার অনুপযোগী হওয়ায় বেগ পেতে হলো দুই দলকেই। নৈপুণ্য আর কৌশলের বদলে শারিরীক শক্তিই প্রধান হয়ে উঠলো খেলায়। বাংলাদেশ কোচ জিলানী আগের দিনই বলেছিলেন, শারিরীক শক্তিতে আফগানদের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। কাল খেলার মাঠে কোচের এই স্বীকারোক্তির প্রমা মিললো। বারবার মাঠে কাতরাতে দেখা গেলো বাংলাদেশী কিশোরদের। এমন শারিরীক শক্তি প্রয়োগের কারণে এ ম্যাচে টুর্ণামেন্টের সর্বোচ্চ ৬ টি হলুদ কার্ড দেখাতে হলো রেফারি প্রিয়ব্রত সিংকে।

তবে নিপু আর সাদ তো অন্য ধাতুতে গড়া। নেপালের কোচের ভাষায়- দুর্দন্ত। কেনো তারা দুর্দান্ত তার প্রমাণ মিললো কালও। কাদাময় মাঠ, শারিরীক শক্তিময় ফুটবলে প্রদর্শনী সত্ত্বেও এই দুই ক্ষুদে তারকার গতি আর ড্রিবলিং কালও মুগ্ধ করলো বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া হাজার বিশেক দর্শকদের।

বল পেয়েই দুর্দান্ত গতিতে বারবার প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ঢুকে পড়ছিলেন নিপু। দু’বার তো গোল রক্ষককে একা পেয়েও দূর্ভাগ্যজনকভাবে গোল করতে পারেননি তিনি।

নিপুর শর্ যখন কিছুতেই জাল খুঁজে পাচ্ছিলো না তখন সাদের গোলের বিজয় উল্লাসে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই চমৎকার সব ড্রিবলিংয়ের মাধ্যমে বোকা বানাচ্ছিলেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের। কিন্তু কিছুতেই গোলের দেখা পাচ্ছিলেন তা সাদ। খেলার ৫৪ মিনিট শেষ। তখন গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে- তবে কি গোল শূণ্য থেকে যাবে নির্ধারিত সময়ের খেলা। এই গুঞ্জন ডালপালা মেলার আগেই পুরো গ্যালারিে উল্লাসে মাতিয়ে তুললেন সাদ। খেলার ৫৪ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে তার দুর্দান্ত একটি শট যে আফগান গোলকিপারকে পরাস্ত করে খোঁজে নিয়েছে জাল।

বল জালে জড়িয়েই ভূ-দৌড় দিলেন সাদ। তার পিছু পিছু ছুটলেন মাঠের বাকী ১০ কিশোর। যেনো গোপন কিছু লুকিয়ে নিয়ে পলায়নপর সহপাঠীকে তাড়া করছে তার বন্ধুর দল। তারপর কাদাময় মাঠে লুটোপুটি। একের অপরের উপরে আছড়ে পড়ে উদযাপন। মাঠে যখন এই অবস্থা গ্যালরিতে তখন কানে তালা লেগে যাওয়া চিৎকার। বাংলাদেশ বাংলাদেশ ধ্বণি। আর উর্ধে তুলে ধরা সেই বস্রখন্ড, যার সবুজ জমিনে লাল বৃত্ত।

এবার একটু পেছনে যাওয়া দরকার। খেলার ৩৮ মিনিটে। এইসব উল্লাস, এই সব চিৎকার যে তখনই থেমে যেতে পারতো। বাংলাদেশী রক্ষণভাগের এক খেলোয়াড়ের ভুলে পেনাল্টি পেয়ে যায় আফগানরা। পেনাল্টি শট নিতে আসেন আফগান অধিনায়ক অমিদ হায়দার। পুরো গ্যালারি তখন চুপ। পুরো গ্যালারি তখন দাঁড়িয়ে। যেনো কারো শোকজ্ঞাপন করছে সবাই। এরকম মিনিটখানেক। মিনিটখানেক পরই একসাথে চিৎকার করে উঠলো সবাই। অমিতের পেনাল্টি শট যে ততক্ষণে গোল বারের উপর দিয়ে গিয়ে পড়েছে গ্যালারিতে।

পেনাল্টি মিসের বেদনায় যখন পুড়ছে আফগান শিবির বাংলাদেশ শিবিরে তখন স্বস্থির নিশ্বাস।

সাদ গোল করার পর এই স্বস্থি রুপ নেয় উচ্ছ্বাসে। এরপর আর কোনো গোল হয়নি। বলার মতো তেমন কোনো আক্রমনও তৈরি করতে পারেনি কোনো দল। ফলে ১-০ গোলের জয়েই প্রথমবারের মতো সাফ অনুধ-১৬ ফুটবলের ফাইনালে বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ফাইনাল ম্যাচ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.