Sylhet Today 24 PRINT

ক্রিকেটারদের যে ১১ দাবি

স্পোর্টস ডেস্ক |  ২১ অক্টোবর, ২০১৯

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অসন্তোষ জানিয়ে সব ধরনের ক্রিকেটীয় কার্যক্রম বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন দেশের ক্রিকেটাররা। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিক বাড়ানো, ক্রিকেটারদের প্রতি বোর্ডের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো সহ মোট ১১ দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছেন দেশের শীর্ষ ক্রিকেটাররা। তাদের সাফ কথা- দেশের ক্রিকেট ঠিক পথে নেই।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই ঘোষণা দেন ক্রিকেটাররা। দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট খেলা, ক্যাম্প, অনুশীলন থেকে বিরত থাকবেন জাতীয় ক্রিকেটাররা।

প্রথম দাবি উপস্থাপন করলেন সিনিয়র ক্রিকেটার নাঈম ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা আপনাদের সামনে এসেছি, কারণ ক্রিকেটারদের কিছু সমস্যা আছে, কিছু দাবি-দাওয়া আছে যা আপনাদের মাধ্যমে আমরা জানাতে চাই। প্রথমত বলতে চাই সম্মানের ব্যাপার। আমাদের মনে হয়, ক্রিকেটার হিসেবে যে সম্মান আমাদের প্রাপ্য, আমার মনে হয় না আমরা তা পাই।

নাঈম ইসলাম বলেন, আমাদের যে প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আছে, কোয়াব, তারা ক্রিকেটারদের পক্ষে কথা বলবে, সেটির কোনো কিছু আমরা তাদের কার্যক্রমে পাইনি। আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, কোয়াবের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, যারাই আছেন, তাদের অনতিবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। যেহেতু এটা প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, আমরা ক্রিকেটাররাই নির্বাচনের মাধ্যমে পছন্দ করব, কারা এখানে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হবেন।

উল্লেখ্য, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা কোয়াব-এর দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। সংগঠনের সভাপতি সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান একই সঙ্গে বিসিবি পরিচালকও। সহ-সভাপতি খালেদ মাহমুদও বিসিবি পরিচালক।

দ্বিতীয় দাবি উপস্থান করতে এসে জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বলেন, আপনারা সবাই জানেন, গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পরিস্থিতি কেমন। যেভাবে এই লিগ হচ্ছে, তাতে সব ক্রিকেটারই অসন্তুষ্ট। এখানে পারিশ্রমিকের একটি মানদণ্ড বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, পাশাপাশি ক্রিকেটারদের অনেক সীমাবদ্ধতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যেভাবে আগে প্রিমিয়ার লিগ খেলতাম, যেভাবে ক্রিকেটাররা ক্লাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে ডিল করতেন, যেভাবে নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে এবং কোন ক্লাবে খেলবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, আমাদের দাবি, প্রিমিয়ার লিগ যেন আগের মতো করে আমরা ফিরে পাই।’

তৃতীয় দাবির উত্থাপন করেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তিনি বলেন, আমাদের তৃতীয় দাবি বিপিএল সংক্রান্ত। এবার বিপিএল অন্যভাবে হচ্ছে, যেটিকে আমরা সম্মান করি। আমাদের মূল দাবি, আগের যে নিয়মে বিপিএল হচ্ছিল, সেটি যেন পরের বছর থেকে চলে আসে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, বিদেশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে স্থানীয় ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের সামঞ্জস্য যেন থাকে।”

মুশফিক বলেন, আমরা সবসময় দেখি যে বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটারদের অনেক পারিশ্রমিক দেওয়া হয়, স্থানীয়দের ওভাবে দেওয়া হয় না। এটা অবশ্যই করতে হবে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার, বিশ্বের অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হয়, যেখানে ক্রিকেটাররা ড্রাফটে নিজেদের গ্রেড নির্ধারণ করতে পারেন যে তারা কোন গ্রেডে থাকবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদেরও এই অধিকার থাকা উচিত। তারপর নিলামে কেউ না থাকলে তাদের ব্যাপার। কিন্তু সম্মানটুকু ক্রিকেটারদের দেওয়া উচিত।

চতুর্থ ও পঞ্চম দাবি উপস্থাপন করেন টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। সাকিব বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমাদের ম্যাচ ফি অন্তত ১ লাখ টাকা হওয়া উচিত। আমরা এই দাবি অবশ্যই জানাচ্ছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের বেতন অনেক কম। সেটি অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে।

সাকিব বলেন, ক্রিকেটারদের অনুশীলন সুবিধা বাড়াতে হবে। জিম-মাঠ সবকিছু বাড়াতে হবে। ১২ মাসের জন্য কোচ-ফিজিও-ট্রেনার নিয়োগ দিতে হবে এবং তারাই প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের একটি সিস্টেমের ভেতর নিয়ে আসবে, তাদের পরিকল্পনামতোই ক্রিকেটাররা কাজ করবে। এবং এটি প্রতিটি বিভাগে করতে হবে। আমরা চাই না সবাইকে সব ট্রেনিং সেশন ঢাকায় করতে হবে। অবশ্যই বিভাগীয় পর্যায়ে নিজেদের ঘরের মাঠে করবে সবাই, তাহলেই আমাদের ক্রিকেটের প্রসার হবে। এটা হয়তো আজকেই হবে না। তবে পরের মৌসুমের আগে নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, আরও কিছু ছোট ছোট ব্যাপার আছে, আমাদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ও সংস্কৃতি বদলানোর জন্য যেগুলো জরুরি। যেমন বল। যেটা আমাদের অনেক বড় সমস্যা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা মানসম্মত বল পাই না। ওটা নিয়ে আমাদের অনেক ভুগতে হয়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসার পর অন্য বলে আবার মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়। এটা যেন না করতে হয়।

“দৈনিক ভাতা মাত্র ১৫০০ টাকা। যে ফিটনেস দাবি করছে, তাতে অনেক স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ভালো হোটেলে থাকতে হবে। যেখানে খাবার ও যে কোনো জিনিসের দাম বেশি। সেটা বিবেচনা করে যে পরিমাণ ভাতা ঠিক করলে ভালো হয়, সেটি যেন করা হয়। “ভ্রমণ ভাতা কেবল ২৫০০ টাকা। এখন যে রাজশাহী থেকে কক্সবাজার যাবে খেলতে, তার তো বাসে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই! এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন ক্রিকেটাররা বিমান ভাড়া পায়। আর কোনো ভ্রমণ ভাতা দরকার নেই। বিমানের টিকেট বিভাগ করুক বা যে করুক, আমাদের আপত্তি নেই।”

“টিম হোটেলে জিম ও সুইমিংপুল অবশ্যই দরকার। কারণ চার দিনের ম্যাচে একজন ক্রিকেটারের অনেক কষ্ট হয়। দিন শেষে তার রিকভারির জন্য জায়গা থাকতে হবে। ওয়ান বা টু স্টার হোটেলে, কোনো রকমে শুধু রুম আছে, সেখানে সম্ভব নয়।”

“আরেকটি হলো টিম বাস। মাঠে যে ধরনের বাসে আমরা যাওয়া-আসা করি, তা খুবই হতাশাজনক। অন্তত এসি বাস বা যে বাস ক্রিকেটাররা কমফরটেবল থাকবে, সেরকম একটি বাসে যেন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়।”

ষষ্ঠ দাবি উপস্থাপন করেন এনামুল হক জুনিয়র। তিনি বলেন, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারের সংখ্যা এখন অনেক কম, এটি ৩০ জন করা উচিত। করতে হবে এবং বেতন বাড়াতে হবে। তিন বছর ধরে বেতন বাড়ানো হয় না।

ব্যাটসম্যান এনামুল হক দাবি উপস্থাপন করতে এসে বলেন, আমরা দুটি চার দিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট খেলি, জাতীয় লিগ ও বিসিএল। কিন্তু একদিনের ম্যাচের টুর্নামেন্ট কেবল একটি। শুধু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। আরেকটি টুর্নামেন্ট বাড়ানো উচিত। আগে জাতীয় লিগে চার দিনের ম্যাচের পর একদিনের ম্যাচ হতো। জাতীয় লিগের ওয়ানডে টুর্নামেন্ট আমরা আবার খেলতে চাই। তাহলে এই সংস্করণে ম্যাচ আরও বেশি খেলতে পারব। পাশাপাশি বিপিএলের বাইরে আরেকটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হওয়া উচিত, যেটি হতে পারে বিপিএলের আগ মুহূর্তে।

উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটের জন্য আমাদের একটি সুনির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। সেটি থাকলে আমরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারব।”

ব্যাটসম্যান জুনায়েদ সিদ্দিক বলেন, বিপিএল ও প্রিমিয়ার লিগের পাওনা টাকা যেন আমরা সময়মতো পাই। শেষবারের লিগ থেকে, আমরা ব্রাদার্স ইউনিয়নে যারা খেলেছি, এখনও ৪০ ভাগ টাকা পাইনি। বোর্ডে অনেকবার যাওয়া হয়েছে, কোয়াবকে অনেকবার বলা হয়েছে। বারবার আসা-যাওয়া ক্রিকেটারদের জন্য এটি আসলে দৃষ্টিকটু। আমরা আশা করব, যে সময়টি দেওয়া থাকবে, সে সময়ের মধ্যেই যেন টাকা শোধ করা হয়।

অলরাউন্ডার ফরহাদ রেজা বলেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের ক্ষেত্রে দুটির বেশি টুর্নামেন্টে খেলতে না দেওয়ার একটি নিয়ম আছে। কিন্তু জাতীয় দলের খেলা না থাকলে যদি খেলতে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা খেলতে পারব ও অনেক কিছু শিখতেও পারব।

সবশেষে সাকিব আল হাসান আবারও বলেন, এখানে যেহেতু আমাদের ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে, আমাদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগের মান আমরা সবাই জানি। বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে এসেছে। ম্যাচে যাওয়ার আগেই অনেক দল জেনে যায় যায় যে কোন দল জিতবে, কোন দল হারবে। এটা খুবই দুঃখজনক। এটি ঠিক করা খুবই জরুরী। ভালো বলে একজন ক্রিকেটার আউট হেতই পারেন। কিন্তু পরপর তিন ম্যাচে কেউ যদি বাজে বলে আউট হয়ে যায়, তার পর একটা ভালো বলে আউট হয়ে গেল, তার ক্যারিয়ার ওখানেই শেষ। একজন ক্রিকেটারকে উঠে আসতে হলে, আমাদের পাইপলাইন ভালো করতে হলে, এই জায়গাটা ঠিক করতে হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.