Sylhet Today 24 PRINT

সিলেটে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক |  ০১ মার্চ, ২০২০

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৬৯ রানের ব্যবধানের বড় জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করা ৩২১ রানের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের ইনিংস থামে ১৫২ রানে। এটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। এরআগে টাইগাররা সর্বোচ্চ ১৬৩ রানের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলো।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে লিটন দাসের অসাধারণ সেঞ্চুরি, মোহাম্মদ মিঠুনের হাফ সেঞ্চুরি এবং শেষ মুহূর্তে সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ৩২১ রানের বিশাল স্কোর গড়ে তোলে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুইয়ানদের ওপর শুরু থেকেই বিধ্বংসী বোলিং করতে শুরু করেন সাইফউদ্দিন। তার সঙ্গে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মাশরাফি, মোস্তাফিজ এবং তাইজুলরা। এদের বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখে ৩৯.১ ওভারেই ১৫২ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।

এদিন জিম্বাবুয়ের ইনিংসের শুরুতে স্কোরবোর্ডে ১ রান যোগ হতেই টিনাশে কামনোহুকামওয়েকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ে শিবিরে আঘাতের শুরু করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। যদিও প্রথম ওভারেই তার উইকেটটা পেতে পারতেন মোস্তাফিজুর রহমান। কামনোহুকামওয়েকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। তবে আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার কুমারা ধর্মসেনা। রিভিউও নেয়নি তারা। রিপ্লেতে দেখা গিয়েছিল পরিষ্কার আউট হয়েছিল তারা।

অষ্টম ওভারে দ্বিতীয় উইকেটও তুলে নেন সেই সাইফউদ্দিনই। পরের ওভারে আঘাত হানেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে ফেরান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তার ভালো লেন্থে ফেলা ডেলিভারিটি ঠিকভাবে খেলতে পারেননি চামু চিভাবা। ব্যাটে-বলে সংযোগ ঠিক না হওয়ায় ক্যাচ ওঠে মিড অনে। আর দারুণভাবে তা লুফে নিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ স্বস্তি এনে দেন মাশরাফিকে।

আগের দশ ম্যাচে মাশরাফির নামের পাশে উইকেটের সংখ্যা ছিল কেবল একটি। সেই হতাশা কাটিয়ে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে উইকেট পান ডানহাতি পেসার। ২০১৯ সালের ৮ জুন বিশ্বকাপের ম্যাচে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ উইকেটটি নিয়েছিলেন তিনি। এরপর টানা পাঁচ ম্যাচে উইকেটশূন্য ছিলেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ খ্যাত পেসার। সময়ের হিসেবে প্রায় আট মাস পর ওয়ানডেতে উইকেট পেলেন টাইগার অধিনায়ক।

এরপর সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের সঙ্গে দলের ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন ওয়েসলি মাধাভেরে। কিন্তু স্কোরবোর্ডে ২১ রান যোগ হতেই টেইলরকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। তবে সফরকারীদের হয়ে লড়াইটা সিকান্দার রাজাকে নিয়ে করছিলেন মাধাভেরে। পঞ্চম উইকেটে ৩৫ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু রাজাকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর। এরপর আরেক সেট ব্যাটসম্যান মাধাভেরেকে অধিনায়ক মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। ফলে ৮৪ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে যায় দলটি। পরে ১০৬ রানে জিম্বাবুয়ের সপ্তম উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ রান আউট করে। নাজমুল হোসেন ও মুশফিকুর রহিমের যোগসাজশে স্ট্রাইকার্স এন্ডে রিচমন্ড মুতুম্বামি আউট হন ১৭ রানে।

দুই ওভার পর ডোনাল্ড তিরিপানো ফিরতি ক্যাচ তুলে দেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। মাত্র ২ রান করেন তিনি। এরপর সাইফ তার শিকার বানান কার্ল মুম্বাকে ১৩ রানে বোল্ড করে। মাশরাফি তার সপ্তম ওভারে তিনোতেন্দা মুতুম্বোজিকে আউট করলে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়। অধিনায়ক হিসেবে এটি মাশরাফির শততম ওয়ানডে উইকেট। ওয়াসিম আকরাম (১৫৮), শন পোলক (১৩৪), ইমরান খান (১৩১) ও জেসন হোল্ডারের (১০১) পর পঞ্চম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডেতে উইকেটের সেঞ্চুরি করলেন তিনি। ম্যাচ শেষ করেছেন দুটি উইকেট নিয়ে, সমান উইকেট মিরাজের। তিন উইকেট পেয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার সাইফ।

এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। যা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরও বটে। এর আগে ২০০৯ সালে বুলাওয়েতে ৮ উইকেটে ৩২০ রান করেছিল বাংলাদেশ। তবে সবমিলিয়ে এটা বাংলাদেশের অষ্টম সর্বোচ্চ সংগ্রহ। দারুণ এক সেঞ্চুরি তুলে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১২৬ রান করার ইনজুরিতে পড়ে মাঠ ছাড়েন লিটন। শেষ দিকে মোহাম্মদ মিঠুনের ৫০ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ২৮ রানের ইনিংসে পুঁজিটা বড় হয় টাইগারদের।

শনিবার ইনিংসের শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাট করছিলেন লিটন। তবে অন্য প্রান্তে তার ওপেনিং সঙ্গী তামিম ইকবাল যেন রানের জন্য হাঁসফাঁস করছিলেন। তবে দুইজনের সৌজন্যে বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভালো। ৬০ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর ওয়াসলে মাধেভেরের বলে এগিয়ে রক্ষণাত্মক ঢঙে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তামিম। শুধু তাই নউ রিভিউটাও খুইয়ে আসেন তিনি। যার খেসারত দিয়েছেন পরবর্তীতে নাজমুল হোসেন শান্ত।

দ্বিতীয় উইকেটে লিটনের সঙ্গে দারুণ ব্যাট করছিলেন শান্ত। তবে টিনিটেনডা মুটমবোডজির অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে থাকা বল এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন। রিপ্লেতে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে পিচ ইমপ্যাক্ট অনেক বাইরে ছিল কিন্তু রিভিউ না থাকায় ব্যক্তিগত ২৯ রানেই শেষ হয় তার ইনিংস। ভাঙে ৮০ রানের জুটি।

তবে অপর প্রান্তে ঠিকই সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটি মাত্র ৯৫ বলে স্পর্শ করেন তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল এদিন আরও বড় কিছু করবেন এ ব্যাটসম্যান। কিন্তু দুর্ভাগ্য তার। ক্র্যাম্পের কারণে (পায়ের পেশিতে টান লাগা) তাকে ৩৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আহত অবসরে যেতে হয়েছে। ওই ডেলিভারিতে অভিষিক্ত স্পিন অলরাউন্ডার ওয়েসলি মাধেভেরেকে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যাথায় কুঁকড়ে ওঠেন তিনি। সাজঘরে যাওয়ার আগে দ্যুতি ছড়িয়ে লিটনের সংগ্রহ ১২৬ রান। ১০৫ বলের ইনিংসে ১৩ চারের সঙ্গে ২ ছক্কা মারেন তিনি।

অবশ্য এর আগে সাজঘরে ফিরে যান মুশফিকুর রহিমও। লিটনের বাইরে যাওয়ায় দুই নতুন ব্যাটসম্যান উইকেটে নামেন। ফলে রানের গতিতে কিছুটা লাগাম দিতে পারে জিম্বাবুয়ে। তবে মোহাম্মদ মিঠুন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ৬৮ রানের জুটিতে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। ৩৬.১ ওভারে দুইশ রান করা দলটি তিনশ স্পর্শ করে ৪৯ ওভারে। তাও এসেছে শেষদিকে সাইফউদ্দিনের ঝড়ো ব্যাটে। ১৫ বলে ৩টি ছক্কায় অপরাজিত ২৮ রান করেন তিনি। তবে ৫০ রানের কার্যকরী একটি ইনিংস খেলেছেন মিঠুন। ৪১ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২১/৬ (লিটন ১২৬ আহত অবসর, তামিম ২৪, শান্ত ২৯, মুশফিক ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৩২, মিঠুন ৫০, সাইফ ২৮*, মিরাজ ৭, মাশরাফি ০*; এমপোফু ১০-০-৬৮-২, মুম্বা ৮-০-৪৫-১, মাধেভেরে ৮-০-৪৮-১, টিরিপানো ৭-০-৫৬-০, রাজা ১০-০-৫৬-০, মুটুমবোদজি ৭-০-৪৭-১)
 
জিম্বাবুয়ে: ৩৯.১ ওভারে ১৫২ (কামুনহুকামউই ১, চিবাবা ১০, চাকাভা ১১, টেইলর ৮, মাধেভেরে ৩৫, রাজা ১৮, মুতুমবামি ১৭, মুটুমবোদজি ২৪, টিরিপানো ২, মুম্বা ১৩, এমপোফু ৯*; মুস্তাফিজ ৬-০-২২-১, সাইফ ৭-০-২২-৩, মাশরাফি ৬.১-০-৩৫-২, তাইজুল ৯-২-২৭-১, মিরাজ ৮-১-৩৩-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১২-০)

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.