ক্রীড়া প্রতিবেদক | ০৫ মার্চ, ২০২০
মাশরাফি বিন মর্তুজা এক আইডলের নাম। একজন যোদ্ধা, একজন দেশ প্রেমিকের নাম। সারাবাংলা থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে তার ভক্তক। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম জুড়েই ছড়িয়ে আছেন মাশরাফি-ভক্তরা। তামিম-সাকিব থেকে শুরু করে মিরাজ-সৈকতরা সেই ভক্তকূল। বিশ্বের প্রতিটি ক্রিকেট দলেই খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছে অলিখিত একটা বিভেদ। যে বিভেদের দাবানল প্রায়ঃশই ছড়িয়ে পড়ে ড্রেসিং রুমে। কিন্তু ব্যতিক্রম শুরু ম্যাশ। নিজের আলোয় আলোকিত করে রাখেন টাইগারদের ড্রেসিং রুম।
বৃহস্পতিবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের আগের দিন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ঘোষণা দিয়ে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন মাশরাফি। যে সতীর্থদের লম্বা সময় নেতৃত্ব দিয়েছেন, মাশরাফির সিদ্ধান্ত তারা জেনেছেন সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টা খানেক আগে। আর তাতেই সবাইকে ছুঁয়ে গেছে অধিনায়কের বিদায়ের ঘোষণা। অনুশীলন শেষে ক্রিকেটাররা জানালেন প্রতিক্রিয়া। সবার কথায় ফুটে উঠেছে অধিনায়ক মাশরাফির বিশালত্ব, এই দলে ও দেশের ক্রিকেটে তার অবদান।
মুশফিকুর রহিম
মাশরাফি ভাইয়ের রিপ্লেসমেন্ট কখনও আসবে না। পাশাপাশি এটিও বলব, মাশরাফি ভাই পরিবারেরই একটি অংশ। মাশরাফি ভাই শুধু আমাদের জন্য বড় ভাই-ই নন, আমাদের একাংশ। অধিনায়ক হিসেবে অনেক মিস করব। উনি অধিনায়ক হওয়ার পর আমাদের দল আমুল বদলে দিয়েছেন। মাঠের ভেতরই নয় শুধু, মাঠের বাইেরও অনেক বদলে দিয়েছেন। অবশ্যই অনেক মিস করব। আশা করব, উনি যতদিন পারেন যেন খেলা চালিয়ে যেতে পারেন। উনার নেতৃত্বে খেলা বা উনার সঙ্গে খেলার অন্যরকম মেজাজ আছে। আশা করি বাংলাদেশে ভবিষ্যতেও অনেক কিছু দিতে পারবেন।
তামিম ইকবাল
এত অল্প সময়ে মাশরাফি ভাইকে নিয়ে কথা বলা কঠিন। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য উনি যা করেছেন তা কোনো ক্রিকেটার, ক্রিকেট বোর্ড, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সমর্থক কারও কোনোদিন ভোলা উচিত নয়। আমাদের সবার মনের ভেতর থাকা উচিত। ২০১৫ সালে আমরা একটি জায়গায় ছিলাম, ২০১৯ সালে একটা অবস্থা এসেছি। উনার হাত ধরেই। ওয়ানডেকতে বিশেষ করে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব আমাদের এখন যেভাবে মূল্যায়ন করে, এটা উনার জন্যই সম্ভব হয়েছে। আমার জন্য, আমাদের জন্য যা করেছেন, কখনোই ভোলার নয়।
আমার পক্ষ থেকে উনাকে শুভ কামনা জানাই। খেলোয়াড় হিসেবে তাকে কখনও পাব আমরা। আশরা করি আরও অনেক দিন তাকে পাব আমরা
মাহমুদউল্লাহ
আমি যেটা বলতে চাই, মাশরাফি ভাই যখন অধিনায়ক ছিলেন, ভাই, বন্ধু বা অধিনায়ক যাই বলেন, আমি পুরো সময়টা খুব উপভোগ করেছি। আজ প্রায় ছয় বছর হলো উনি অধিনায়কত্ব করেছেন। মাশাআল্লাহ অনেক সাফল্যও পেয়েছেন। তো আমি ওনার পরবর্তী জীবনের জন্য শুভকামনা জানাচ্ছি এবং এটায় কোনো সন্দেহ নেই যে উনি বাংলাদেশের একজন কিংবদন্তি।
লিটন কুমার দাস
মিস তো করবই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেরা অধিনায়ক তিনি। ক্রিকেটারদের যেভাবে সমর্থন করে গেছেন, এটা বলার মতো নয়। বিশেষ করে জুনিয়র ক্রিকেটোরদের। আমার যখন অভিষেক হয়, উনার নেতৃত্বে খেলেছি। আমার জন্য সেটি বড় পাওয়া। আমার পাশে থেকেছেন সবসময়। নতুন যারাই আসে দলে, সবাইকে সমর্থন করেন। অধিনায়ক যখন একজন ক্রিকেটারকে এত জোর দিয়ে পাশে থাকে, সেটা অনেক বড় ব্যাপার। উনার ভেতর এই ব্যাপারটি অনেক বেশি আছে। আমরা তাকে অনেক মিস করব।
মোস্তাফিজুর রহমান
জানার পর থেকেই মন খারাপ। ভাইয়ের কোনো ব্যাখ্যা নাই আমার কাছে। আমাকে তিনিই নিয়ে এসেছিলেন দলে। আমার মন এখনও খারাপ।
মোহাম্মদ মিঠুন
আমরা সবাই জানি অধিনায়ক হিসেবে তিনি ক্রিকেটারদের কাছে কেমন ছিলেন। বড় ভাই হিসেবে তিনি অসাধারণ। আমরা যে কোন সমস্যা হলেই তাঁর কাছে যেতাম। তিনি বুদ্ধি দিয়ে হোক, নিজে চেষ্টা করে হোক, সবসময় যে কোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। আমি কিছুক্ষণ আগেই শুনেছি, উনি আর অধিনায়কত্ব করছেন না। এটাই শেষ ম্যাচ। অবশ্যই উনাকে অনেক বেশি মিস করব। তারপরও তাঁর সঙ্গে যেখানেই খেলব, অধিনায়ক না থাকলেও সবাই তাকেই নেতা হিসেবে চিন্তা করব।
তাইজুল ইসলাম
আমার ক্ষেত্রে বলবো না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা খেলোয়াড়ের জন্যই মাশরাফি ভাইয়ের প্রভাবটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যখন নতুন জাতীয় দলে ঢুকছি, আসলে তখনের সহায়তাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটা যেকোনো পর্যায়ের ক্রিকেটারের জন্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এদিক থেকে মাশরাফি ভাইয়ের সাপোর্টটা একটু অন্যরকম ছিলো। আর আমরা অধিনায়ক বলেন আর ব্যক্তি মানুষ হিসেবেই বলেন, আমরা তাকে অনেক মিস করবো।
আল আমিন হোসেন
অধিনায়ক হিসেবে তো বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল। তিনি যতদিন খেলেছেন আমাদের আগলে রেখেছেন। কখনও অভ্যন্তরীণ বা বাইরের নেতিবাচক বিষয়গুলো আমাদের বুঝতেই দেননি, তিনি দারুণভাবে সব সামলেছেন। তিনি অধিনায়ক হিসেবে আরও কিছুদিন আমাদের সাথে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু এ বিষয়গুলো নীতিনির্ধারক যারা আছে, তারা যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করবে। অধিনায়ক হিসেবে কালকেই ম্যাচটাই তার শেষ। আমি দোয়া করবো, ভাই যেনো খেলোয়াড় হিসেবে হলেও আরও কিছুদিন আমাদের সঙ্গে থাকেন।
মেহেদী হাসান মিরাজ
অনেক গুলো ওয়ানডে খেলেছি। প্রায় ৪০টার মতো ওয়ানডে খেলা হয়েছে। যে কয়দিনই ছিলাম, খুবই আগলে রেখেছে সবাইকে। আমরা বেশিই মিস করব। বিশেষ করে আমরা। আমরা তো তাঁকে অল্প পেয়েছি। তারপরও যতটুকু পেয়েছি, নিজেকে সৌভাগ্যবান বলতে হয়। তাঁর নেতৃত্ব খেলেছি, এটা তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া ছিল। অনেক সিরিজ জিতেছি তাঁর নেতৃত্বে। অনেক মিস করব।