Sylhet Today 24 PRINT

বড়লেখায় ব্যবসায়ী হত্যায় গ্রেপ্তার ৫, দুজনের স্বীকারোক্তি

বড়লেখা প্রতিনিধি |  ২০ মে, ২০২০

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ব্যবসায়ী সমছ উদ্দিন (৩৪) হত্যায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। যাদের মধ্যে দুই জন বড়লেখা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

সোমবার (১৮ মে) প্রযুক্তির সহায়তায় দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি ধারালো দা উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সমছ উদ্দিন উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের মধ্যগ্রামতলা গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের রহমানীয়া চা বাগানের সত্য নায়েকের ছেলে শচিন নায়েক জগাই (৩৫), মোহাম্মদনগর গ্রামের আজির উদ্দিনের ছেলে হাফিজুর রহমান (২৮) একই গ্রামের জহুর আলীর ছেলে হেলাল উদ্দিন হেলাই (৩৫), জমির আলীর ছেলে মোক্তার আলী (৪৫) ও জহির আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন (৪২)।

তাদের মধ্য থেকে হেলাল উদ্দিন হেলাই (৩৫) ও জসিম উদ্দিন (৪২) মঙ্গলবার (১৯ মে) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বড়লেখা আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (ম্যাজিস্ট্রেট) হরিদাস কুমারের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর এই দুইজনসহ অন্য আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় নিহত সমছের বাবা আমির উদ্দিন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সমছ উদ্দিন নিখোঁজের পর তার বাবা আমির উদ্দিন থানায় জিডি করেন। এ জিডির প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাউসার দস্তগীরের নির্দেশে থানার ওসি মো. ইয়াছিনুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ সমছের খোঁজে নামে। স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে রাত সোয়া ১২টায় সমছের খামারের অদূরে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে সমছ উদ্দিনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। এরপর লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ রহমানীয়া চা বাগানের শচিন নায়েক জগাই ও মোহাম্মদনগর গ্রামের হাফিজুর রহমানকে আটক করে।

তাদের দেওয়া তথ্যে পুলিশ হেলাল উদ্দিন হেলাইকেও আটক করে। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে তার কাছ থেকে পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায়। পরে তার দেওয়া তথ্যে পুলিশ মোক্তার আলী ও জসীম উদ্দিনকে আটক এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি দা উদ্ধার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রাথমিকভাবে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বড়লেখা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে হাজির করেন। সেখানে হেলাল উদ্দিন ওরফে হেলাই (৩৫) ও জসিম উদ্দিন (৪২) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আট মাস আগে সমছ উদ্দিন উপজেলার পূর্ব মোহাম্মদনগর এলাকার রহমানীয়া চা বাগান-সংলগ্ন স্থানে কিছু জায়গা কিনেন। কেনা জায়গার কিছু অংশে দুটি মৎস্যখামার গড়ে তোলেন। প্রায়ই রাতের বেলা খামারে যাওয়া-আসা করতেন। গত শনিবার রাতে তিনি বাড়ি থেকে খামারের উদ্দেশে বের হন। এরপর আর বাড়ি ফেরেননি। রোববার দুপুরে পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে গিয়ে একটি বাড়ির সামনে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল দেখতে পান। কিন্তু তার কোনো সন্ধান পাননি। এদিন সন্ধ্যায় সমছের বাবা বড়লেখা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর রোববার রাত আড়াইটার দিকে খামারের কাছে পরিত্যক্ত ঘরে তার লাশের সন্ধান পায় পুলিশ।

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘ভিকটিমের পিতার জিডির প্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক সন্ধান করতে গিয়ে তার মরদেহ পাওয়া যায়। রাতেই এডিশনাল এসপি স্যারের নেতৃত্বে প্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহভাজন দুজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে আরও ৩জনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে সমছ উদ্দিন হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ৩টি ধারালো দা উদ্ধার করা হয়। পরে ভিকটিমের পিতার দেওয়া হত্যা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে তাদের গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়। দুজন স্বেচ্ছায় হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করে। নারীঘটিত কারণে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে জানিয়েছে। স্বীকারোক্তি শেষে দুজনসহ অন্য আসামিদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.