Sylhet Today 24 PRINT

তিন হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলেন ব্যবসায়ী

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৫ জুন, ২০২০

অসুস্থ হয়ে পড়ায় একে-একে তিনটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো সিলেট নগরীর ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকা (৫৪) কে। কিন্তু কোনো হাসপাতাল ভর্তি করেনি তাকে। অবশেষে শুক্রবার সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।

মারা যাওয়া ইকবাল হোসেন নগরীর বন্দরবাজারের আরএল ইলেকট্রনিকসের স্বত্বাধিকারী। তিনি সিলেট নগরের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

এর আগে গত ১ জুন সিলেটের ছয়টি হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান নগরীর কাজিরবাজার মোগলটুলা এলাকার লেচু মিয়ার স্ত্রী মনোয়ার বেগম (৬৩)। এনিয়ে তীব্র সমালোচনার মধ্যে আবারও এমন ঘটনা ঘটলো। এবার হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেলেন এক ব্যবসায়ী।

বিজ্ঞাপন

যদিও গত ২৪ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত একটি নির্দেশনায় বলা হয়, সকল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ৫০ বা তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট, তারা বাধ্যতামূলকভাবে কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন ও সাধারণ রোগীদের জন্য পৃথক চিকিৎসা ব্যবস্থা চালু করবেন।

মারা যাওয়া ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকার ছেলে তিহাম হোসেন বলেন, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বাবার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তাকে সোবাহানীঘাট এলাকার আল হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বার বার তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করলেও রোগীকে ফেলে রেখে সময়ক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে জানান তারা রোগীকে রাখবেন না, নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যেতে। অনেক অনুরোধের পরও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দেননি তারা।

তিনি বলেন, এরপর বাবাকে দক্ষিণ সুরমার নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে গেলে কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের হাসপাতালে সিট খালি নেই, রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তখন পরিচিত এক চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি পরামর্শ দেন শহীদ ডা. শামসুদ্দিন হাসপাতালে যাওয়ার জন্য।

তিহাম বলেন, শামসুদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে সবকিছু বন্ধ দেখতে পাই। ১০-১৫ মিনিট পর এক নিরাপত্তাকর্মী গেটে এসে জানান, হাসপাতালের সবাই ঘুমে। এরপর আমরা রোগী নিয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। সেখানে জরুরি বিভাগে যাওয়ার পর রোগীকে সিসিইউতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন কর্তব্যরতরা। তবে ওয়ার্ডের ভেতরে না নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় একটি ইসিজি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার বাবাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

নিহতের ভাই জাকির হোসেন জানান, গত কয়েকদিন আগেও আমার ভাই আল হারামাইন হাসপাতালে প্রায় ২০ হাজার টাকার পরীক্ষা করিয়েছেন। কিন্তু আজ তারা রোগীকে চিকিৎসা দিতেই রাজী হয়নি।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ প্রসঙ্গে আল হারামাইন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক নাহিয়ান চৌধুরী বলেন, সকালে যে সময় ওই রোগী আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন তখন তার আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল৷ তিনি গত ৩-৪ দিন আগে আমাদের হাসপাতালে ডা. শাহেদ আহমদকে দেখিয়েছিলেন। তখন ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট দেন এবং জ্বর, শ্বাসকষ্ট থাকায় করোনা পরীক্ষা করারও পরামর্শ দেন। আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড থাকলেও আইসিইউ ব্যবস্থা নেই। তাই আমরা তাকে দ্রুত নর্থ ইস্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলি। আমাদের আইসিইউতে ৫-৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় আমরা করোনা সন্দেহভাজন রোগী কিভাবে আইসিইউতে নেব।

এ ব্যাপারে নর্থইস্ট হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটের সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, আমরা করোনা ইউনিট চালু করার পর থেকে জানামতে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী ফিরিয়ে দেইনি। রোগীদের জন্যই আমরা এই ইউনিট চালু করেছি। তবু যে অভিযোগ এসেছে তা আমরা তদন্ত করে দেখবো।

সিলেটের সরকারি শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালকে করোনা আইসোলেশন সেন্টার ঘোষণা করে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন খোকাকে ভর্তি না করার অভিযোগ অস্বীকার করে এই হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) সুশান্ত মহাপাত্র সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ভোরে এই রোগী আসার কথা একজন চিকিৎসক আমাকে ফোনে জানান। সাথে-সাথেই আমি জরুরী বিভাগকে প্রস্তুত থাকতে বলি। কিন্তু অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও রোগী আসেনি।

সুশান্ত বলেন, পরে শুনলাম রোগীর স্বজনরা আমাদের বিরুদ্ধে ভর্তি না করার অভিযোগ তুলেছেন। তখন আমরা বিষয়টি খোঁজ নেই। খোঁজ নিয়ে দেখি, ভোর পৌনে ছয়টার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের মূল গেইটের সামনে এসে দাঁড়ায়। এরপর দুজন ব্যক্তি অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে কিছু আলাপ করেন। তারা মূল গেইট পেরিয়ে হাসপাতাল চত্বরেই ঢুকেন নি। প্রায় তিন মিনিট পর অ্যাম্বুলেন্সটি চলে যায়।

তিনি বলেন, যে রোগী হাসপাতালে আসেইনি তাকে আমরা ভর্তি করবো কি করে। এখন কেউ মিথ্যে অভিযোগ করলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। সব হাসপাতালকে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে দেখবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.