Sylhet Today 24 PRINT

গানের আসর থেকে খেলার মাঠ- সবখানেই সরব ছিলেন কামরান

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৫ জুন, ২০২০

ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহিত

গানের অনুষ্ঠান চলছে। হঠাৎ করেই মঞ্চে উঠে পড়লেন কামরান। মাথার টুপিটা পকেটে ঢুকিয়ে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে শুরু করে দিলেন তার প্রিয় সুবীর নন্দী কিংবা কোনো বাউলের গান- এমন দৃশ্যের সাথে পরিচিত সিলেটের প্রায় সকলেই। সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন বদরউদ্দিন কামরান। কেবল সঙ্গীতানুষ্ঠান নয়, নির্বাচনী মাঠেও গান গেয়ে গেয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে তাকে।

সিলেটের সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে তার ছিলো নিবিড় যোগাযোগ। সিলেটের যেকোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কামরানের উপস্থিতি ছিলো অনেকটা অনিবার্য।

ছিলেন ক্রীড়ানুরাগীও। ফুটবলে  তার প্রিয় দল ছিলো আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের সময়ে একাধিকবার আর্জেন্টিনার জার্সি পরে ফুটবল মাঠে নেমেছেন তিনি। ব্যাট-প্যাড নিয়ে ক্রিকেট খেলতেও দেখা গেছে তাকে। আর ক্রিকেট বাংলাদেশ দলের যে কোনো বিজয়ই সকলের মতো আনন্দে ভাসাতো কামরানকেও। বাংলাদেশের বিভিন্ন জয়ে বিজয় মিছিলেও অংশ নিয়েছেন কামরান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বদরউদ্দিন আহমদ কামরান করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে মারা গেছেন। প্রিয় এই নেতার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান পুরো সিলেট। দলমত নির্বিশেষে কামরানের জন্য বিলাপ করছে সবাই। নগরীর সকলেরই প্রিয় ছিলেন কামরান। ছিলেন জনতার নেতা।

রাজনীতির বাইরেও ক্রীড়া-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অঙ্গনেই ছিলো কামরানের সরব উপস্থিতি। ফলে তার মৃত্যুতে সকল অঙ্গনেই শোকের ছায়া।

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের মৃত্যুকে সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্য বিরাট ধাক্কা উল্লেখ করে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, সংস্কৃতি অঙ্গনের সাথে তার বহু স্মৃতি। আজকে নাট্য পরিষদ যে একুশের চেনতায় নাট্য উৎসব করে তাতে কামরান ভাইয়ের মাধ্যমে সিটি করপোরেশন সম্পৃক্ত হয়েছিলো। অদ্যাবদি সিটি করপোরেশনের আর্থিক সহায়তায় আমরা প্রতিবছর এ উৎসব করে আসছি। তিনি সারদা হলের পাশে সংস্কৃতি কেন্দ্র গড়ে তুলেন। যেখানে এখন নাট্য পরিষদের মহড়া কক্ষ হয়েছে। সকল সাংস্কৃতিক সংগঠন তার সয়াহতা পেয়েছে। আমাদের সকল আন্দোলনে তিনি সাহস জুগিয়েছেন। এমনকি 'পাগলা গারদ' নামে একটি নাটকে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন



রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, কামরান ভাইয়ের মৃত্যুতে আমরা এক বটবৃক্ষকে হারালাম। অভিভাবক শূন্য হলাম। এই শূ্ন্যস্থান সহজে পুরণ হবার নয়।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর অসহায়তার মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসেন কামরান। প্রতিদিনই বিভিন্ন জনকে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন। জনপ্রতিনিধি না হয়েও ছিলেন মানুষের পাশে। সিটি নির্বাচনে পরপর দুবার হেরে গেলেও জনগন থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন হননি কামরান। নগরীর সকল আয়োজনে, যে কারো ডাকেই হাজির হতেন তিনি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের টানা দুইবারের মেয়র কামরান গত ৫ জুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। পরদিন তার শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শরীর আরও খারাপ হলে ৭ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যোগে তাকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৮ জুন কামরানের শরীরে প্লাজমা থেরাপিও দেওয়া হয়েছিলো।

তবে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার ভোরে মারা যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক এই সভাপতি। সোমবার দুপুরে নগরীর মানিকপীর কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয় তাকে।

এরআগে গত ২৭ মে কামরানের স্ত্রী আসমা কামরানেরও করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তিনি অনেকটা সুস্থ রয়েছেন এবং বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.