Sylhet Today 24 PRINT

আশ্রয়ের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুুরছে অসহায় এক পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৮ জুন, ২০২০

থাকার একমাত্র আশ্রয়স্থল বসতঘরটি ভেঙে গেছে অনেক দিন আগেই। এতোদিন থাকতেন চাচার আশ্রয়ে। চাচার আর্থিক দুরবস্থার দরুণ এখন সেখানেও ঠাঁই হচ্ছে না হতদরিদ্র শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ও তার পরিবারের। ঘর না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

একটু থাকার আশ্রয়ের জন্য এখন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধরণা দিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। তারা দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুন্দরপই গ্রামের বাসিন্দা।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, পরিবারটিতে এখন একমাত্র কর্মক্ষম বলতে গৃহিনী রহিমা খাতুন রয়েছেন। তার স্বামী ফিরোজ আলী মারা গেছেন প্রায় ১৮ বছর আগে। স্বামীর অবর্তমানে ২ মেয়ে ও ১ ছেলের ভরণপোষণ এবং সাংসারিক খরচ যোগাতে প্রতিদিনই কাজের সন্ধানে বের হতে হয়েছে রহিমা খাতুনকে। অভাবের মধ্যেই বড় মেয়েকে অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে প্রাথমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও সাংসারিক আর্থিক টানাপোড়নে পড়াশোনা ছাড়তে হয়েছে তাকে। এখন সে মামার বাড়িতে আশ্রয়ে আছে।

একমাত্র ছেলে রফিকুল ইসলাম। ভাইবোনদের মধ্যে সে দ্বিতীয়। রফিকুল নি‌জেই শহরে টিউশনি করে তার নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করে আসছে। সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সে। বর্তমানে করোনা সঙ্কটে তার পড়াশোনার খরচ চালানোর একমাত্র অবলম্বন শহরের টিউশনিটুকুও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব গুটিয়ে এলাকায় চলে আসতে হয়েছে তাকে। বসতঘর না থাকায় এলাকায় এসে একটু আশ্রয়ের জন্য আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বাড়িতে ধরনা দিতে হচ্ছে রফিকুল ও তার মা রহিমা খাতুনকে।

আর্থিক টানাপোড়ন থাকলেও এতোদিন পর্যন্ত চাচার আশ্রয়ে থেকে কষ্টে কোনোরকমে দিন পার করতেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া অপরদিকে বসতঘর না থাকায় থাকা-খাওয়া নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে এই অসহায় পরিবারটি।

রফিকুল ইসলাম জানান, 'বাবা মারা যাওয়ার পর মা-ই একমাত্র আমাদের সবকিছু দেখভাল করে আসছেন। মায়ের কাজ বন্ধ, আমার টিউশনি বন্ধ। বসতঘর নেই। অর্থাভাবে ঘর নির্মাণ করাও সম্ভব হচ্ছে না। আজকে বাড়িতে, কালকে মামার বাড়িতে এভাবে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে থেকে এখন সময় পার করছি। এভাবে আর কতদিন থাকবো? সামনের দিনগুলি কীভাবে কাটবে তা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।'

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে অধ্যয়নরত দোয়ারাবাজার উপজেলার শিক্ষার্থীদের সংগঠন দোয়ারাবাজার স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের সাবেক আহবায়ক আব্দুল সালাম মাহবুব জানান, আমরা রফিকুল ও তার পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছি। তারা একদম অসহায়। একটা থাকার ঘরের ব্যবস্থা করা যেতে পারলে এই পরিবারটি অনেক উপকৃত হবে। অন্তত থাকার আশ্রয়টুকু পাবে। তাদের সহযোগিতায় প্রশাসনসহ এলাকা ও এলাকার বাইরের সুহৃদয়বান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান, এই অসহায় পরিবারটিকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আনা যেতে পারে। এখানে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা ভূমি অফিস এ বিষয়টি তদারকি করেন। উনারা চেষ্টা করলে একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। আমি পরিবারটির খোঁজ নেব এবং তাদের খাদ্যসামগ্রী সহায়তা লাগলে সহযোগিতা করব।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.