Sylhet Today 24 PRINT

নতুন ঘরে পেলেন বড়লেখার লায়লা বেগম

বড়লেখা প্রতিনিধি  |  ২৫ জুন, ২০২০

নড়বড়ে মাটির ঘর। সেই ঘরেই পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিসহ লায়লা বেগমের বাস। ঝড়-বৃষ্টিতে ভয়ের শেষ নেই। কখন ভেঙে পড়ে। কখন ঝড় উড়িয়ে নেয় চাল। সেই আশংকাটাই একদিন বাস্তব হয়ে গেল। ঝড়ে বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি ভেঙে পড়ে ঘরের উপর। তাতেই দুমড়েমুচড়ে যায় ঘরটি। সেদিন সবাই কোনোমতে প্রাণে বাঁচলেও হারিয়ে যায় মাথা গোঁজার ঠাঁই।

এই অবস্থায় পাশের বাড়িতে সাময়িক আশ্রয় হলো ঠিকই। কিন্তু নতুন করে ঘর তৈরির দুশ্চিন্তা আর মাথা থেকে যায় না লায়লা বেগমের। দিনমজুর ছেলের আয়ে কোনোভাবে টেনেটুনে চলে সংসার। এরমধ্যে করোনাকাল। এই সংকটে ঘর তৈরির টাকা কোথায়! এই পরিস্থিতিতে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘর তৈরির আশ্বাস দিয়েছে। তবু যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না নতুন ঘর হবে। এত অল্প সময়ে নতুন ঘরে ওঠতে পারবেন। ভেঙে পড়ার মাত্র দুসপ্তাহের মাথাতেই নতুন ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। নতুন ঘরে লায়লা বেগম এখন ফিরে পেয়েছেন ফের শান্তির ঘুম।

বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের করমপুর গ্রামে গত ৩ জুন দুপুরের দিকে ঝড়ের সময় ট্রান্সফরমারসহ বিদ্যুতের একটি খুঁটি ভেঙে পড়ে লায়লা বেগমের বসতঘরে। ঘরটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পান ওই বসতঘরের বাসিন্দারা। এদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লায়লা বেগমের ঘর ভেঙে পড়ার খবরে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্দেশে পরদিন ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি ঘর হারানো অসহায় পরিবারটিকে তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি পেঁয়াজ এবং ১ কেজি তেল এবং ৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করেন। ইউএনও প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ঘরটি নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হবে বলে পরিবারটিকে আশ্বস্ত করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে দুসপ্তাহের মাথায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের “আশ্রয়ণ-২” প্রকল্পের আওতায় ‘যার জমি আছে ঘর নাই-তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ কর্মসূচি থেকে সেমি-পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। একলাখ টাকায় টিনের চাল ও বেড়া মেঝেসহ আধা পাকা ঘর, পাকা বারান্দা ও একটি শৌচাগার নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বড়লেখা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেও নগদ টাকা এবং খাদ্যসামগ্রী দিয়েছেন।

গত সোমবার (২২ জুন) সরেজমিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নতুন ঘরে জিনিসপত্র গোছানোর কাজ করছেন লায়লা বেগম। ছেলে ঘরের দরজা জানালায় রং করছেন।

নতুন ঘর পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাইলে লায়লা বলেন, ‘ঘর ভাঙার পর চিন্তায় পড়ে যাই। অসহায় বাচ্চাইন লইয়া এ-ঘরে ওঘরে রইছি। কি কষ্ট। ঘুম লাগছে না। শরীরের অবস্থা নাই। কিসের ঘুম, কিসের নিদ্রা। পেটে ভাত দিতাম পাররাম না। ঘর বানাইতাম কিলা। ঘর ভাঙার পরে এই চিন্তা ছিল। নতুন ঘর অইব বিশ্বাস করছি না। সরকারের সবার লাগি দোয়া করিয়ার। সবার যেন শান্তি অয়। আমি গরিব রে যে শান্তি দিছইন ঘর দিয়া। ঘর পাইয়া মনে অনেক শান্তি লাগের। আগে বৃষ্টির সময় জাগিয়া থাকতাম রাতে। ঘুমাইতে পারতাম না। এখন আর ঘুমের কষ্ট হবে না।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লায়লা বেগমের ঘর ভেঙে পড়ায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের নির্দেশে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এসময় ঘর হারানো অসহায় পরিবারটিকে তাৎক্ষণিক খাদ্য সহায়তা এবং ৫ হাজার টাকার একটি চেক প্রদান করি। তাদের পুরো ঘর ভেঙেচুরে যায়। নতুন করে ঘর বানানোর সামর্থ্য ছিল না তাদের। তাই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে নতুন একটি ঘরটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.