Sylhet Today 24 PRINT

করোনাকালেও বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে থেমে নেই মহিষের চোরাচালান

বড়লেখা প্রতিনিধি |  ২৬ জুন, ২০২০

করোনাকালেও থেমে নেই সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান। মৌলভীবাজারের বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে প্রতিনিয়ত আসছে ভারতীয় মহিষ। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে মহিষগুলো দেশের অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়া মোটরসাইকেল, মদ, ইয়াবা, হরলিক্স, সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানও রয়েছেই। মাঝে মধ্যে কিছু ধরা পড়ে। আবার নানা কায়দায় বেশিরভাগই বাজারজাত হয়।

এই সীমান্ত দিয়ে মহিষ আনতে গিয়ে গত এক দেড়বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে কয়েক দফায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন আহত হয়েছেন। গত বছরের আগস্টে আব্দুর রউফ নামে এক যুবক গুলিতে নিহত হয়েছেন।

চোরাচালান নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে প্রশাসনের স্থানীয় সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানোও হয়েছিল, কিন্তু তারপরও থেকে নেই চোরাচালান।

বিশেষ করে করোনার এই সংক্রমণের সময় দুই দেশের চোরাকারবারিরা কৌশলে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যাওয়া-আসা করছেন। এতে করে স্থানীয় লোকজনের মাঝে সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) বড়লেখা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গঙ্গারজল এলাকা থেকে চোরাই পথে আসা ৩০টি ভারতীয় মহিষ আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ সময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারি দল পালিয়ে যায় বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিয়ানীবাজার বিজিবি (৫২ ব্যাটালিয়ন) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যের একটি টহলদল উপজেলার গঙ্গারজল এলাকায় অবস্থান নেয়। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সীমান্ত এলাকা থেকে চোরাকারবারিরা বড়লেখা শহরের দিকে মহিষ নিয়ে যাচ্ছিল। এসময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা মহিষ রেখে পালিয়ে যায়। পরে বিজিবি টহলদল মালিকবিহীন অবস্থায় ৩০টি ভারতীয় মহিষ আটক করে। গঙ্গারজল এলাকাটি ভারত সীমান্তের ১৩৮২/৪- এস পিলার হতে ৭ কিলোমিটার অভ্যন্তরে। অভিযানে বিজিবির জুড়ী কোম্পানি’র টহল কমান্ডার জেসিও-৭১০০ সুবেদার মো. ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে বিওসিটিলা, লাতু এবং বোবারথল বিওপি’র বিজিবি সদস্যরা অংশ নেন। এসব মহিষের আনুমানিক সিজার মূল্য ১৮ লাখ ২০ হাজার হাজার টাকা। আটককৃত মহিষগুলো জুড়ী কাস্টমস হাউজে জমা দেওয়া হয়। নিলামে পরে এক মহিষ ব্যবসায়ী এগুলো কিনে নেন বলে জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিজিবির হাতে আটক হওয়া মহিষগুলো ছাদ উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর। সীমান্ত দিয়ে আসা মহিষ চোরাচালানে টাকা বিনিয়োগে জড়িত থাকার বিষয়ে ছাদ উদ্দিন নামের ওই ব্যক্তির নাম জানা যায়। সীমান্ত দিয়ে আসা মহিষগুলোকে বৈধ করতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাগজ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা, ভারত থেকে অবৈধপথে মহিষ ও অন্য চোরাই পণ্য আনার টাকা পাঠানোর সাথেও জড়িত থাকার বিষয়টিও জানা যায়।

উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর, সদর ও উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকা দিয়ে মহিষ, গরু, মোটরসাইকেল, মদ, ইয়াবা, হরলিক্স, সিগারেটসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য চোরাই পথে আসার খবর স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে অভিযানে মহিষসহ পণ্য উদ্ধার হয়। কিন্তু এর সাথে জড়িত প্রকৃত মালিক ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। এনিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতে যারা পণ্য আনতে ঢুকে তাদের স্থানীয় ভাষায় দৌড়াল (সোর্স) বলে। এরা টাকার বিনিময়ে জীবনের ঝুঁকি নেয়। এদের কেউ কেউ ধরা পড়ে আহত হয়। কেউ গুলিতে মারা যায়। কিন্তু যারা নেপথ্যে টাকা বিনিয়োগ করে তারা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাত ১২টা থেকে ভোরের মধ্যে চোরাই পথে এসব মালামাল আনা হয়। প্রতি রাতে ওপারের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোনে আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয় মালামাল আনার প্রক্রিয়া। এরপর পণ্য আনার জন্য ব্যবসায়ীর বিশ্বস্ত দৌড়াল (সোর্স) লোকজন জোগাড় করে সীমান্তের দিকে রওয়ানা দেয়। পণ্য আনা-নেওয়াকে কেন্দ্র করে আবার দৌড়াল বা সোর্সদের মাঝে প্রায়ই মারামারির ঘটনাও ঘটে।

মহিষ আসার বিষয়ে বিয়ানীবাজার বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা আমাদের টহল কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। আরও বৃদ্ধি করবো। নজরদারি থাকায় বৃহস্পতিবার বড় একটি চালান আটক করা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.