Sylhet Today 24 PRINT

তাহিরপুরে ত্রাণের জন্য বন্যার্তদের হাহাকার

তাহিরপুর প্রতিনিধি  |  ১৩ জুলাই, ২০২০

সুনামগঞ্জে তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে দ্বিতীয় দফায় বন্যার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষেরা। হাওরের চারদিকে থৈ থৈ করছে বানের পানি। এ কারণে হাওর এলাকার শিশু, নারী ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছেন। বন্যায় মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছেন শ্রমজীবী লোকজন। আয় রোজগার করতে না পারার ফলে ঘরে খাবার নেই।
 
শুকনো খাবারের প্রয়োজন হলেও প্রত্যান্ত এলাকায় এখনও সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগে ত্রান সামগ্রী পাচ্ছে না কেউ।

উপজেলার দুর্গম হাওর এলাকার মানুষ জন জানান, হাওরের উত্তাল ঢেউ থেকে বসত ভিটে রক্ষার জন্য বাঁশের খুঁটি পুঁতে দিচ্ছেন বাড়ির চারপাশে মানুষজন। এর পরও হাওরের ঘোলা জল বাড়ি ও আঙিনায় ঢুকে পড়ে ৫ থেকে ৬ ফুট পানিতে তলিয়ে আছে। আবার কোনো কোনো বাড়ির উঁচু ভিটেমাটি ধুয়ে ফেলে দিয়েছে হাওরের উত্তাল ঢেউ। বানবাসী শিশু, নারী, পুরুষ ও বয়স্ক লোকজন ঘরের ভেতরে চৌকিতে বসে গৃহবন্দি অবস্থায় কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। টিউবওয়েল ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নষ্ট হওয়ায় বানবাসী লোকজন কোমর পানিতে হেটে দূরদূরান্তের টিউবওয়েল থেকে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ আবার নিকটস্থ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে পরিবার পরিজন ও গোবাদি পশুসহ আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু প্রয়োজন অনুযায়ী শুকনো খাবার ও ত্রাণ পাচ্ছেন না তারা।

অনেকে অভিযোগ করে বলেন, দুর্গম হাওর এলাকা দুর্গত লোকজন ত্রাণ সামগ্রী এমনকি শুকনো খাবারও পাচ্ছেন না। কারণ দুর্গম এলাকায় কেউ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যেতে চান না।

জানা যায়, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের রজনীলাইন, রাজাই, শান্তিপুর, চানপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের পুরান খালাস, সাদেরখলা, চতুর্ভজ, কাউকান্দি, জামলাবাজ, বালিজুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, পাতারি, তিওরজালাল, লোহাচুরা, বড়খলা, মাহতাবপুর বাদাঘাট ইউনিয়নের ঘাগড়া, ঘাগটিয়া, পাঠানপাড়া, গড়কাটি, তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের জামালগড়, চিকসা, গোবিন্দশ্রী, গাজীপুর, টাকাটুকিয়া, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা, পাঠাবুকা, মারালা, নোয়ানগর, রাজধরপুর, পৈন্ডপ, নোয়াগাঁও, সন্তোষপুর, ইকরামপুর, লামাগাঁও, দুমাল, ভবানীপুর, শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চিলানিতাহিরপুর, জয়পুর, গোলাবাড়ি, বাগলী, দুদের আউটা, ইন্দ্রপুর, মন্দিয়াতাসহ ৬০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন



তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৩১টি আশ্রায় কেন্দ্রে ৯৮টি পরিবারের ৩৯২জন নারী পুরুষ আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা ১৬,২৭০টি। উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও অসহায়দের জন্য প্রথম দফায় ৭ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর পাশাপশি শুকনো খাবার হাওর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বিতরণ করা হচ্ছে।

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাবজল আহমেদ বলেন, হাওর এলাকার বসতবাড়ির তিল পরিমাণ জায়গা নেই, যেখানে বানের পানি প্রবেশ করেনি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হাওর এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলো দেখা দিয়েছে শুকনো খাবারের সংকট। আয়রোজগার বন্ধ থাকায় খেটে খাওয়া মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। দুর্গম হাওর এলাকায় এখনো পৌঁছেনি পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী।

এদিকে, গো খাদ্যের খড় পানিতে ভিজে পচে গেছে। ফলে গরুর খাবার নিয়েও মহা বিপদে পড়েছেন মানুষ জন।

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের চিলানি তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা হাদিউজ্জামান জানান, ঘরে চাল থাকলেও রান্নাঘর বসতঘর পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় কেউ রান্না করে খাবার খেতে পারছে না। থেমে থেমে বর্ষণের কারণে গ্রামের লোকজন কর্মহীন অবস্থায় ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছেন। দুর্গত মানুষেরা ত্রাণ পাওয়ার প্রহর গুনছেন। হাওর পাড়ের মানুষজন খুব কষ্টে আছে।       

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদ্মাসন সিংহ বলেন, বন্যার শুরু থেকেই উপজেলার সদর ইউনিয়ন ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে জরুরী ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলার ইউনিয়নগুলোর প্রত্যান্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনসহ সবাই সার্বক্ষিন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের খোঁজ খবর রাখছি।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, কোন মানুষ যেনো বন্যায় কষ্ট না করে সে দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হচ্ছে। বন্যা আক্রান্ত মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, বন্যা পরিস্থিতি গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, বন্যায় আক্রান্তদের জন্য জেলার প্রতিটি উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.