Sylhet Today 24 PRINT

ঘর পানির নিচে, আশ্রয়কেন্দ্রেই তাদের ঈদ

তাহিরপুর প্রতিনিধি |  ০১ আগস্ট, ২০২০

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম। বন্যায় তলিয়ে গেছে তার বাড়িঘর। প্রায় পনের দিন ধরে স্থানীয় জয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রই তার ঠিকানা। সেখানেই এবার ঈদ পালন করলেন নুরজাহান।

পালন বলতে তেমন কিছু নয় আসলে। সবাই বলেছে- আজ ঈদ। নুরাজাহানের তাই মনে হলো- আজ ঈদ। ঈদের দিন বলে দূর্ভোগ-দুর্দশা তো আর কমলো না!

নুরজাহান বেগম বলেন, করোনার মধ্যেই আবার বন্যা। এখনো ঘর-বাড়িতে পানি। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছি। বসত বাড়ি ছাইড়া এইভাবে কি ঈদ করা যায়? এখন দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্য দিয়ে দিন কাটছে। এবারের ঈদ আনন্দ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

একই আশ্রয়কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শহিদুর রহমান। তিনি বলেন, সবাই মিলে সকালে আশ্রয়কেন্দ্রেই ঈদের নামাজ পড়লাম। এবারের ঈদ পালন এইটুকুই। বাড়িঘর যাদের তলিয়ে গেছে পানিতে তাদের আবার ঈদ কিসের?

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় এবার ঈদ ছিলো এমন নিরানন্দময়।  হাওরাঞ্চলে তিন দফা বন্যায় থমকে গেছে ঈদের সকল আয়োজন। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়া মানুষের একটা অংশ এখনও আশ্রয়কেন্দ্রে। বাকীরা নিজেদের বসতভিটায় পানিবন্দি। ফলে এবারের ঈদ হাওরপাড়ের মাণুষদের কাছে উৎসবের চাইতে অনেক বেশি দুর্ভোগের।

বিজ্ঞাপন



বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা সেখানেই ঈদ পালন করেছেন। ঈদ পালন বলতে কেবল ঈদের নামাজ আদায়। আর সকল আয়োজনই ভেস্তে গেছে বন্যায়।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাড়িতে পানি উঠে সহায়-সম্বল হারিয়ে এখনও জেলার ২৬১টি আশ্রয়কেন্দ্রে হাওরপাড়ের এক হাজার ৯৫০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ঈদের দিনও তাদের সেখানেই কাটছে।  

টাংগুয়ার হাওর পাড়ের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা আয়েশা বেগম জানান, দু’বেলা দু’মুঠো ভাতই জোগাড় করতে পারি না, আমাদের আবার কিসের ঈদ। সামনের দিনগুলা কেমনে চলব সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না।

বন্যায় তাহিরপুর উপজেলার নিন্মাঞ্চলের মানুষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। পানিবন্দী মানুষগুলোর শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া রয়েছে পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। পানি ধীর গতিতে নামায় সমস্যা হচ্ছে হাওরাঞ্চলে বাসিন্দাগনের।    

তাহিরপুর উপজেলার পরিষদ চেয়ারম্যান করুনাসিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, পরপর তিন বার বন্যা ও পানি ধীর গতিতে নামায় অনেকেই নিজের বসতভিটায় ফিরতে পারছেন না। এই ঈদেও তাদের আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটাতে হচ্ছে। ফলে কষ্টটা একটু বেশি। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.