Sylhet Today 24 PRINT

‘মেয়র আরিফ আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন’

সংবাদ সম্মেলনে জগন্নাথপুরের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৬ আগস্ট, ২০২০

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কোরবানি দেয়া পশুর চামড়া সিলেটের আম্বরখানায় ফেলে যাওয়ার বিষয়টিকে বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছেন ৩নং মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক শেরীন। বুধবার (৫ আগস্ট) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটি দাবি করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুল হক অভিযোগ করে বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)-এর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর আম্বরখানায় কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে আমাকে মানসিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ১ আগস্ট ঈদ উল আযহা উদযাপিত হয়েছে। এই ঈদের সময় মুসলমানরা ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। আমার নির্বাচনী এলাকা সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ৩ নং মিরপুর ইউনিয়নটি প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। এই এলাকার শতশত মুসলমান এইদিন পশু কোরবানি দিয়েছেন। যার অধিকাংশ কোরবানি সম্পন্ন হয়েছে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থে। ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে স্থানীয় প্রশাসন সভা করেছেন। সভায় সরকারের নির্দেশনার অন্যতম ছিলো কোরবানি দেয়া পশুর চামড়া কোনোভাবে নষ্ট করতে দেয়া যাবে না। কোনো অবস্থাতেই কোরবানির চামড়া মাটিতে পুতে ফেলা যাবে না। ভাসিয়ে দেয়া যাবে না নদীতে। জনপ্রতিনিধিরা ওই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।

তিনি বলেন, সরকারের ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঈদের দুই দিন আগে থেকে এলাকায় কাজ শুরু করি। আমার ইউনিয়নের প্রত্যেক মেম্বার ও মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে এলাকার সর্বস্তরের মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয় কোনোভাবেই চামড়া নষ্ট করা যাবে না। ওই বিষয়ে প্রতিটি মসজিদ থেকেও মাইকিং করা হয়। কোরবানির পশুর চামড়া সাধারণত মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানায় দান করা হয়। স্বাভাবিক নিয়মে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ, এতিমখানা কর্তৃপক্ষ ও মসজিদ কর্তৃপক্ষ পৃথকভাবে ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করেন। কয়েকজন ডিলার চামড়া ক্রয় করার আশ্বাস দেন। ঈদের দিন দুপুরের দিকে আগ্রহী ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করে চামড়া ক্রয়ের সিদ্ধান্ত জানতে চান মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার লোকজন। কিন্তু আগ্রহী ডিলাররা জানিয়ে দেন তারা চামড়া ক্রয় করবেন না। ওই অবস্থায় পশুর চামড়া বিক্রেতারা বিপাকে পড়েন। তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেন। আমি ডিলারদের সাথে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো ডিলারই চামড়া ক্রয়ে আগ্রহ দেখাননি। শেষ পর্যন্ত সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ওই চামড়া সিলেট এনে বিক্রি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী সকল মাদরাসা, মসজিদ ও এতিমখানার চামড়া জড়ো করে চারটি ট্রাকযোগে সিলেট পাঠাই।

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুল হক বলেন, মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার ৬৩০ টি চামড়া আমার নিজ অর্থায়নে সিলেটে প্রেরণের ব্যবস্থা করি। বিভিন্ন আড়তে নিয়ে ওই চামড়া বিক্রয়ের চেষ্টা করা হয়। রাত ১২ টা পর্যন্ত চামড়া বোঝাই ট্রাক সিলেট নগরীর প্রতিটি ডিলারের দোকানে গেছে। কিন্তু কেউ চামড়া ক্রয় করেননি। রাত ১২ টার দিকে ওইসব চামড়া সিলেট নগরীর আম্বরখানার একটি প্লটে নিয়ে রাখা হয়। রাতেই সিদ্ধান্ত নিতে হয় চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত করার জন্যে। এজন্যে লবণ সংগ্রহ করা হয় ৫ বস্তা। রাতে আর কোনো লবণ পাওয়া যায়নি। রাতেই চামড়াগুলো প্রক্রিয়াজাত শুরু হয়। রোববার সকালে আরও ৩৫ বস্তা লবণ ও শ্রমিক সংগ্রহ করি। কিন্তু লবণ ও শ্রমিক আসার আগেই চামড়াগুলো জব্দ করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।

তিনি আরও বলেন, রোববার (২ আগস্ট) বেলা ১ টা ২৪ মিনিটে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ফোন করেন আমাকে। ফোন করে চামড়ার বিষয়ে জানতে চান। আমি মেয়র সাহেবকে জানাই চামড়াগুলো মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার। এগুলো বিক্রি করতে না পারায় প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। কিন্তু মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী অনেকটা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, চামড়াগুলো জব্দ করা হলো। এসময় তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেয়র সাহেবকে পুরো বিষয়টি বলার পরও তিনি চামড়াগুলো ডাম্পিং ইয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন। এর আগে তিনি আবাসন কোম্পানির গেইট ভেঙ্গে ফেলেন বুলডোজার দিয়ে। মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানার ওই চামড়া নিয়ে এখন আমি বিব্রতকর অবস্থায় আছি।

মাহবুবুল হক বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, জগন্নাথপুর থেকে হাজার হাজার চামড়া সিলেটে এনে ডাম্পিং করছেন চেয়ারম্যান। মেয়র ওই বক্তব্য অসত্য।

তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে কোরবানি দেয়া পশুর চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমাকে মানসিক ও সামাজিকভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এছাড়া একটি অঞ্চলের প্রতি সিসিক মেয়র যে আচরণ দেখিয়েছেন তা অবশ্যই ঘৃণিত।

এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথপুর মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাসুদুর রহমান, বডিং সুপার মাওলানা হুসাইন আহমদ, জামেয়া ইসলামিয়া লহড়ি মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান, ৩নং মিরপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. আব্দুস শহীদ প্রমুখ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.