নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০
করোনা পরিস্থিতিতে আর্থিক সঙ্কটের কারণে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের অভিভাবকরা। সম্প্রতি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের কাছে এমন দাবি জানান তারা। তবে অভিভাবকদের এই দাবি আমলে না নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বকেয়া বেতন পরিশোধের নোটিশ প্রদান করে ব্লু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ।
অভিভাবকদের আবেদনে কোনো সারা না দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধের নোটিশ প্রদান করায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সিলেটের স্বনামখ্যাত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৬ আগস্ট চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফের জন্য অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর লিখিত আবেদন করা হয়। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন- করোনা মহামারিতে তাদের জীবন যাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আর্থিক সংকটে পড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। এমতাবস্থায় মানবিক সহায়তা হিসেবে যেন শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি মওকুফ করা হয়।
বিজ্ঞাপন
অভিভাবকরা জানান, তাদের আবেদনের ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জানতে গত ১০ সেপ্টেম্বর ১৮ জনের একটি দল অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাৎ করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যান। তখন অধ্যক্ষ বা উপাধ্যক্ষ কাউকেই পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারীর মাধ্যমে উপাধ্যক্ষ ব্রজেন্দ্র কুমারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন অভিভাবক প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে রেজানুর রহমান সেলিম। এসময় উপাধ্যক্ষ জানান অধ্যক্ষ অসুস্থ। তিনি সুস্থ হলে গভর্নিং বডির সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে কবে আলোচনা হবে এটা তিনি বলতে পারেননি।
অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের এই আবেদনের কোনো সুরাহা না করেই গত ৮ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন পরিশোধের নোটিশ প্রদান করেন ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
নোটিসে বলা হয়, ‘এতদ্বারা ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের প্রি- নার্সারি শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সম্মানিত অভিভাবকদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আপনার শিক্ষার্থীর বকেয়া/চলতি মাসের বেতন আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।'
এ ব্যাপারে ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর অভিভাবক রেজানুর রহমান সেলিম বলেন, এই করোনাকালে প্রায় সবাই আর্থিক সমস্যার মধ্যে আছেন। তাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের আবেদনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ সারা দিবেন বলে আমরা ভেবেছিলাম। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে এতগুলো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেদনে ন্যূনতম মূল্যায়ন করেননি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। বরং আমাদের আবেদনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেতন প্রদানের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা অভিভাবকরা অধ্যক্ষের সাথে দেখা করতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে তাকে পাইনি। তখন অফিস সহকারীর মাধ্যমে উপাধ্যক্ষে সাথে কথা বললে তিনি জানান, অধ্যক্ষ অসুস্থ, তিনি সুস্থ হলে গভর্নিং বডির সভায় এটা নিয়ে আলোচনা হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা কোনো আলোচনা করেননি।
অভিভাবক রেজানুর রহমান সেলিম আরও বলেন, ইতোমধ্যে স্কুল চলাকালীন অবস্থায় মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়ে গেছে। আমরা জানি শিক্ষার্থীদের এই বেতনের টাকা দিয়ে শিক্ষকদেরও বেতন দেওয়া হয়। তাই তারা আমাদের আবেদন বিবেচনা করে যতটুকু বেতন মওকুফ করা যায় ততটুকু করলেও অভিভাবকরা অনেক স্বস্তি পাবেন। আবেদন করেছি মানে এই না যে পুরো বেতনই মওকুফ করতে হবে। সবদিক বিবেচনা করে কিছু বেতন মওকুফের সিদ্ধান্ত তো তারা দিতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে অভিভাবকদের এই দুরবস্থার সময় কোনো মূল্যায়নই করছেন না।
এ ব্যাপারে ব্লু বার্ড হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হুসনে আরা সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোরকে বলেন, বেতন মওকুফের জন্য অভিভাবকরা একটি দাবি করেছেন। কিন্তু সেই দাবি পূরণের ব্যাপারে এখন কিছু বলা যাবে না। কারণ এটা আমার একার সিদ্ধান্তে হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি যে সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে। তাছাড়া বেতন মওকুফের ব্যাপারে সরকারি ভাবেও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। বেতন মওকুফের ব্যাপারে যদি সরকারিভাবে বা গভর্নিং বডির কোনো সিদ্ধান্ত আসে তবে পরবর্তীতে সেটা সমন্বয় করা হবে। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের এই বেতনের টাকা দিয়েই শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। তাই সবদিকই চিন্তা করতে হবে।