কমলগঞ্জে মনিপুরী নারীর উপর হামলা

ক্ষেতের সবজি চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে মনিপুরী সম্প্রদায়ের এক নারীর উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত নারী কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ঘটনার পর মনিপুরী পল্লীতে আতংক বিরাজ করছে।

জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় উপজেলার ৭নং আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের বাসিন্দা মৃত আব্দুল লতিবের পুত্র উমেদ মিয়া (৫০) মনিপুরী নারী চাউবিহান দেবীকে (৬০) মারধর করেন।

স্থানীয় স‚ত্রে আরও জানা যায়, ওইদিন বিকেলে উমেদ মিয়া তার ক্ষেতের সবজি চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে চাউবিহান দেবীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে সবজি ক্ষেতের মধ্যে লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকেন। তখন চাউবিহানের চিৎকারে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে চাউবিহানকে রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় কমলগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (কমলগঞ্জ থানার জিডি নং ৯০১, তারিখ: ২০/০৯/২০২০ইং) করা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানান, উমেদ মিয়া কর্তৃক মনিপুরী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকিসহ, কাটাবিল গ্রাম থেকে মনিপুরী সম্প্রদায়কে বিতাড়িত করবে বলে হুমকি দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় কাটাবিল গ্রামে সংখ্যালঘু মনিপুরী পল্লীতে আতংক বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট আদমপুর ইউনিয়নের কাটাবিল গ্রামের বাসিন্দা নাতেক সিংহের স্ত্রী চাউবিহান দেবীর (৬০) বসত ঘর থেকে দিবাগত রাতে ১১ মণ ধান চুরি হয়। পরদিন ২৪ আগস্ট সকালে অনেক খোঁজাখুঁজির পর একই গ্রামের বাসিন্দা জনৈক আনসার মিয়া মারফত জানতে পারে, ঐদিন দিবাগত রাত আনুমানিক দেড় টায় কাটাবিল গ্রামের নিয়ামত আহমেদ (২৮), শাকিল মিয়া, শামীম মিয়াসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন ব্যক্তি চাউবিহান দেবীর বাড়ির আশপাশ ঘুরতে দেখেছে।

উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চাউবিহান দেবী স্থানীয় ইউপি সদস্য জুমের আলীর শরণাপন্ন হন। ইউপি সদস্য বিষয়টি স্থানীয় কমলগঞ্জ থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ঘটনাস্থলে এসে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আটক করেন। এ সময়ে তারা ধান চুরির বিষয়টি স্বীকার করে। আসামিদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে গত ২৪ আগস্ট তারিখ চুরিকৃত ৬ মণ ধান পুলিশ উদ্ধার করে জব্দ করেন। পরবর্তীতে পুলিশ আটককৃত ৩জনকে থানায় নিয়ে যায়। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। (যার নম্বর: ১৭, জিআর নং ১৫৭/২০২০খ্রি:, তারিখ: ২৪/০৮/২০২০ইং)।

স্থানীয়রা মনিপুরী সম্প্রদায়ভুক্ত নারীর উপর নির্যাতনকারী উমেদ মিয়াসহ তার সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আহত মনিপুরী নারীকে সোমবার কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে গিয়েছি। ঘটনাটি তিনি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান।