Sylhet Today 24 PRINT

সিলেট ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয়ের জমি দখল চেষ্টার অভিযোগ , গ্রেপ্তার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের প্রধান বিশপ কার্যালয় ও বাসভবনের জন্য ২ একর ৪৫ শতক জায়গা কেনা হয় ২০১৩ সালে। এর চার বছর পর ২০১৭ সালে একটি পক্ষ মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে। সম্প্রতি এই মামলা খারিজ হলে গত ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সেখানে বৃক্ষরোপণ করে অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ স্থগিত ছিল। গত সোমবার নির্মাণকাজ আবার শুরু করার সময় হঠাৎ একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে সেই জায়গা দখলের চেষ্টা শুরু হয়।

সিলেট মহানগরের শাহপরান থানার সুরমাগেট এলাকায় গত সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত জায়গা দখলের এ রকম চেষ্টায় সেখানে বসবাসরত খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজন আতঙ্কের মধ্যে পড়েছেন। এ অবস্থায় শাহপরান থানায় ক্যাথলিক ডায়োসিসের প্রধান বিশপ কার্যালয় একটি মামলা করার পর দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে পুলিশি পাহারা বসিয়ে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। সিলেট মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপকমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার বলেছেন, ভূমি দখলচেষ্টার ঘটনায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় তাঁদের নিরাপত্তায় পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। দখলচেষ্টার ঘটনায় মামলা হওয়ায় দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতেও তৎপর রয়েছে পুলিশ।

ক্যাথলিক ডায়োসিস সূত্র জানায়, বিশপের বাসভবন ও কার্যালয় নির্মাণ করার জন্য জমি কেনার প্রায় চার বছর পর ২০১৭ সালে স্থানীয় কয়েকজন লোক ভূমির মালিক দাবি করে আদালতে মামলা করেন। সম্প্রতি এই মামলা আদালতে খারিজ হলে বিশপ কার্যালয়, বাসভবন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গত ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষ উপলক্ষে পুরো জায়গার চারদিকে বৃক্ষরোপণ করা হয়। এরপর সেখানে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে নির্মাণকাজ সম্প্রতি শুরু করা হলে জমির মালিক দাবিদার একটি পক্ষও সক্রিয় হয়।

বিজ্ঞাপন



ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয়ে কর্মরত ব্যক্তিরা জানান, গত সোমবার রাত থেকে দখলদার পক্ষের লোকজন তৎপরতা শুরু করেন। ওই রাতে রোপণ করা বৃক্ষ উপড়ে ফেলে জায়গার মালিক দাবি করে সাইনবোর্ডও টাঙান তাঁরা। এরপর মঙ্গলবার দফায় দফায় হামলা করে ওই জায়গা থেকে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী চুরি করাসহ নানা রকম দুর্বৃত্তপনা চলে। এ অবস্থায় ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাটি লিখিতভাবে পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে পরে শাহপরান থানায় একটি মামলা করা হয়। ক্যাথলিক ডায়োসিসের অফিস ইনচার্জ ফাদার সরোজ কস্তা বাদী হয়ে ১৯ জনের নামোল্লেখ করে মামলা করেছেন।

তারা চেয়েছিল যাতে আমরা সমঝোতায় এসে তাদের কিছু টাকা দিই। আমরা যথাযথ মূল্যে যাচাই-বাছাই করে জায়গা কিনেছি। তাই আমরা কোনো রকম সমঝোতায় যেতে রাজি হইনি।

শাহপরান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপটন পুরকায়স্থ জানিয়েছেন, মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজহারভুক্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এ দুজন হচ্ছেন খুনিরচক গ্রামের আজিজুর রহমান ও কল্লগ্রামের ইস্রায়েল আলী। দুই আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুজনকে গ্রেপ্তার করায় দখলচেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।

দখলচেষ্টায় টাঙানো সাইনবোর্ডে জায়গার মালিক দাবি করেন ইসরাক আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি ক্যাথলিক বিশপ কার্যালয়ের পক্ষে দায়ের করা মামলারও প্রধান আসামি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ইসরাক আলীর দাবি, মৌরসি সম্পত্তি হিসেবে জায়গার মালিক তিনি। তাহলে কেনাবেচা হলো কেমন করে? এ প্রশ্ন শুনে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আরও দুবার ফোন করলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ জানান, এটি একটি সংঘবদ্ধ ভূমিখেকো চক্রের কাজ। জায়গা কেনার সময় কোনো আপত্তি ছিল না। চার বছর পর মালিক দাবি করে কথিত মামলাটিও ২০১৯ সালে আদালত খারিজ করে দেন। এই ক্ষোভ থেকে চক্রটি সর্বশেষ দখলচেষ্টা হিসেবে সাইনবোর্ড টাঙাতে গিয়ে টানা তিন দিন নানা রকম দুর্বৃত্তপনা করেছে। এতে ক্যাথলিক ডায়োসিস বিশপ কার্যালয়ের প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের প্রধান বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুস বলেন, ‘তারা চেয়েছিল যাতে আমরা সমঝোতায় এসে তাদের কিছু টাকা দিই। আমরা যথাযথ মূল্যে যাচাই-বাছাই করে জায়গা কিনেছি। তাই আমরা কোনো রকম সমঝোতায় যেতে রাজি হইনি। এ জন্য জায়গা দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে দাবি, আমাদের যেন এই বিপদ থেকে রক্ষা করা হয়। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.