Sylhet Today 24 PRINT

শেষ মুহুর্তে চলছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি

তাহিরপুর প্রতিনিধি |  ২০ অক্টোবর, ২০২০

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঘরে ঘরে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা থাকলেও মহামারী করোনার কারণে এবার দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ম্লান। কিন্তু অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার পূজার সেই পুরনো সংস্কৃতি থাকবে অনেকটা অগোচরে। বাইরে ঘুরতে যাওয়া, পূজামণ্ডপগুলোতে আলোকসজ্জাসহ নানা ধরণের আয়োজনে মহালয়া থেকে শুরু করে শারদীয় উৎসবের সব ক্ষেত্রেই থাকছে স্বাস্থ্যবিধির কড়া নির্দেশ।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দেবী দুর্গাকে স্বাগত জানাতে শেষ মুহুর্তে মূর্তি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎ শিল্পীরা।

জানা যায়, ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠী তিথিতে হবে বোধন ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা। পরদিন ২৩ অক্টোবর মহাসপ্তমী পূজার মাধ্যমে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আচার অনুষ্ঠান। ২৪ অক্টোবর মহাঅষ্টমী এবং ২৫ অক্টোবর মহানবমী পূজা। ২৬ অক্টোবর মহাদশমী বা বিজয়া দশমী হবে। এই দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

করোনা পরিস্থিতির কারণে কীভাবে হবে দুর্গাপূজায় উপজেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা যায়, হাওরাঞ্চলে সাম্প্রতিক বন্যা, করোনা প্রাদুর্ভাব, জাদুকাটা ও ৩টি শুল্ক স্টেশন বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মহীন হাওরাঞ্চলের শ্রমজীবী পরিবারে প্রভাব পড়েছে দুর্গাপূজার আয়োজনে। আর মণ্ডপগুলোতে গান বাজনার জন্য জালিয়া ঢুলিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও অন্যান্য বছরের মতো এবার তা আর হচ্ছে না। তবে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী দুর্গার বোধন ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসব।

কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা দেবী দুর্গার প্রতিমার শেষ মূহুর্তে মণ্ডপে মণ্ডপে দ্রুত চলছে রঙ-তুলির আঁচড়ে দুর্গাদেবীর প্রতিমা সাজানোর কাজ। প্রতিমার অবয়বকে আরও সুন্দর করে তুলতে দেবীর মূল অবয়ব গড়ে তোলা হয়েছে রঙতুলির আঁচড়ে, মূর্ত হয়ে উঠছে দেবীর রূপ। যার ফলে দম ফেলার ফুরসত নেই মৃৎশিল্পীদের। দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা কারিগররা।

টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের ইন্দ্রপুর গ্রামে মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণে মৃৎশিল্পী অখিল পাল বলেন, প্রতিটি প্রতিমায় বাঁশ-খড়খুটো দিয়ে তৈরি দেবীর অবয়বের ওপর মাটির প্রলেপ দেওয়ার কাজ শেষে এখন চলছে রঙ তুলির আঁচড়। প্রতিমার কাজ শেষ দিতে হবে,তাই সঙ্গীয়দের নিয়ে অর্ডারকৃত প্রতিটি মণ্ডপেই কাজ চলছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কাজ খুবেই কম।

উপজেলা সদরের খলাহাটি দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ থেকে এসেছেন কারিগর কৃষ্ণ দাস। তিনি বলেন, প্রতি বছর এ সময় ১০-১২টি পূজামন্ডপে কাজ করে থাকি। এ বছর মাত্র চারটি পূজামণ্ডপে কাজ করছি। করোনার কারণে এবার গত বছরের মত উৎসবমুখর পরিবেশ কাজ হচ্ছে না। যার ফলে আমাদের কাজ নেই। করোনা আমাদের সকল আনন্দ,আয়োজন ও কাজে স্থবিরতা এনে দিয়েছে।

বাদাঘাট কালী বাড়ি পূজা কমিটির সভাপতি জগদীশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, এবারের দুর্গাপূজা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে পালিত হবে। বাড়তি আলোকসজ্জা, আরতি, বাদ্য-বাজনা পরিহার করা হবে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ তাহিরপুর উপজেলার সভাপতি সুভাষ পুরকায়স্থ জানান, বন্যা ও বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাব এবারের দুর্গোৎসব অনেকটা ভিন্ন আঙ্গিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এবারের করোনা প্রাদুর্ভাব থেকে গোটা পৃথিবীর মানুষের যেন মুক্তি মেলে মা দুর্গার কাছেই এবারের এটাই চাওয়া।

থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, পূজামণ্ডপগুলোতে কঠোর নজরদারিতে নিরাপত্তায় থাকবে। কোথাও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটনা ঘটতে দেয়া হবে না।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদ্মাসন সিংহ বলেন, উপজেলায় এ বছর ২৯টি মণ্ডপে পালিত হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। করোনা পরিস্থিতি এবারের দুর্গাপূজায় কুমারীপূজা না করা ও আলোকসজ্জা সীমিত এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসব করার নির্দেশনা রয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.