Sylhet Today 24 PRINT

২০ টাকা দিয়ে শুরু করে সফল উদ্যোক্তা, লাবণী এখন অনেকের প্রেরণা

মোসাইদ আহমেদ রাহাত, সুনামগঞ্জ : |  ১০ নভেম্বর, ২০২০

২০ টাকায় সাজসজ্জার সামগ্রী কিনে শুরু করেছিলেন। ৩ বছর পর তার মূলধন এখন দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটাই কঠিন ছিল তার এই যাত্রাপথ। উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াই শুরু করে বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। চাকরির পেছনে না ছুটে ক্ষুদ্র পুঁজি নিয়ে নিজের উদ্যোগে কিছু করার পাশাপাশি আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন। তিনি এখন অনেকেরই প্রেরণা।

পরিশ্রমী ও সফল এই নারী উদ্যোক্তার নাম ফেরদৌসী আক্তার লাবণী। বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রিরামসী চাঁদবোয়ালী গ্রামে। তবে তার বেড়ে ওঠা সুনামগঞ্জ শহরে। পরিবারের বড় মেয়ে লাবণী। তাই ছোটবেলা থেকেই দায়িত্ব শব্দের সাথে পরিচিত। লাবণী সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন। পড়াশুনা শেষ করে চাকরী পাওয়াটা যে সোনার হরিণ সেটা জানাই ছিল। লাবণী তাই অনেক ভেবে চিন্তেই উদ্যোক্তার পথে পা বাড়িয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানের নাম স্টাইল ক্লসেট।

ফেরদৌসী আক্তার লাবণী ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সাজসজ্জার সামগ্রী দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ‘স্টাইল ক্লসেট’ (Style Closet) নামে একটি পেইজ ও গ্রুপ খুলে প্রচারণা শুরু করেন তিনি। শুরুটা মাত্র ২০ টাকা দিয়ে। কিছু সামগ্রী কিনে ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন। এরপর ক্রেতাদের ভালোই সাড়া পান। বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে। পছন্দমতো পণ্যগুলো পৌঁছে দিয়ে আস্থা অর্জন করেন ক্রেতাদের। প্রথম দিকে একাই মানুষের অর্ডার করা পণ্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিলেও এখন ব্যবসা বড় হওয়ায় পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য রেখেছেন কয়েকজন কর্মী।

দেশের পাশাপাশি বিদেশেও যাচ্ছে তার পণ্যগুলো। গত ২ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত পণ্য পাঠাচ্ছেন। সেই সাথে তিনি কাজ করছেন জামদানি কাপড় নিয়ে। লাবণী মানুষের কেনাকাটা সহজ করতে এবং ভালোপণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্রত নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসা।

জামদানি কাপড়ের প্রতি তার টানের বিষয়ে লাবণী বলেন, ‘ঐতিহ্যের গৌরব ও ক্রেতাদের চাহিদার কারণে ব্যবসার ক্ষেত্র হিসেবে জামদানিকে বেছে নিয়েছি। নারায়ণগঞ্জের জামদানিপল্লী ও দেশের বিভিন্ন এলাকার তাঁতিদের কাছে ঘুরে ভালো মানের জামদানি সংগ্রহ করে সেগুলো কাস্টমারদেরকে পৌঁছে দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামদানি দেশীয় পন্য হওয়ায় সেটি বহিবিশে^র কাছে তুলে ধরার একটি আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহ থেকে আমি এই বিদেশে নিজ দেশীয় পণ্যকে আরও পরিচিত করতেই মূলত আমার এ উদ্যোগ নেয়া।’

বর্তমানে করোনার কারণে ব্যবসার পরিসর খুব বেশি না হলেও অল্প সময়ের মধ্যে অনেক ভালো পর্যায়ে যেতে পেরেছেন। দিন দিন ব্যবসার পরিসর বেড়েই চলেছে তার। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে বেশ স্বাবলম্বী। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশে পণ্য সরবরাহ করে আসছেন তিনি নিয়মিত।

তার পণ্যের মধ্যে রয়েছে বাটিক থ্রি-পিচ, ব্লক থ্রি-পিচ, হ্যান্ডপ্রিন্ট ওড়না, ওয়ান পিচ, বিভিন্ন শিশু পোশাক, বেডসীট, কুশন কাভার, নেট কভার, ব্যাগ শো-পিচ, শাড়ি ও উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন পাটের এবং জামদানির তৈরী পণ্য তৈরী করেন বিক্রয় করেন তিনি। অর্ডার অনুযায়ী কাপড় বানিয়ে, কাস্টমাইজ ডিজাইন করে কাপড় বানিয়ে কম খরচে বিদেশে আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাচ্ছেন তিনি এতে করে দেশের অর্থনীতিতে তিনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সামন্য হলেও অবদান রাখছেন একজন সফল উদ্যোক্তা।

লাবণীর বাবা মো. আক্কাছ মিয়া একজন সরকারি কর্মকর্তা। তবে মেয়ের এই কাজ বেছে নেওয়ায় সবচেয়ে খুশি হয়েছেন তিনিই। তাছাড়া লাবণী মা ফারজানা পারভীনও মেয়ের সাহসী কাজের প্রশংসা করছেন সবসময়। লাবণীর এক বোন ও এক ভাই রয়েছেন। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া সৎ ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন তার ব্যবসা। বর্তমানে ফেরদৌসী আক্তার লাবণী ইচ্ছা একটি বড় কর্মসংস্থান তৈরির। যার মাধ্যমে কাজ করবে শতশত মানুষ।

লাবণীর বাবা মো. আক্কাছ মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে বর্তমান সময়ে যে সাহসের সাথে কাজ করে যাচ্ছে আমরা সবাই খুশি। আমি চাইবো আমার মেয়ে যেন মানুষের ভালো করে যেতে পারে সবসময়। যেহেতু মেয়ে মানুষ বাবা-মা চিন্তা থাকবেই তবে আমি আমার মেয়ে সাহসী কাজের প্রশংসা করি। সে তার স্বপ্নে এগিয়ে যাক সেটাই আমরা সবাই চাই।’

আলাপকালে ফেরদৌসী আক্তার লাবণী বলেন, ‘আমি চাই আমার ব্যবসার আরো প্রসার হোক। দেশের প্রতিটি জেলায় যেন আমি শোরুম দিতে পারি। সেখানে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরী করতে পারি। সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা এগুলো কিছু না। আপনি যে কাজ ভালো পারেন এবং আপনার কাছে যত কম টাকাই থাক না কেন, সেটা দিয়েই শুরু করেন। দেখবেন একদিন আপনি সফল একজন উদ্যোক্ত হয়ে যাবেন।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.