Sylhet Today 24 PRINT

বিদ্যুৎবিহীন নগরীতে মানুষের দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক  |  ১৮ নভেম্বর, ২০২০

নগরীর কুমারগাঁওয়ে গ্রিডে আগুন লাগার ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিদ্যুৎবিহীন সিলেটের বেশিরভাগ এলাকা। এ অবস্থায় সন্ধ্যার পর থেকেই পুরো নগর জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। রাত বাড়ার সাথে সাথে অন্ধকার নগর ফাঁকা হতে থাকে। রাস্তাঘাট ও বিপনী বিতানগুলো থেকে লোকজন কমতে শুরু করে। কমে যায় নগরীতে যানচলাচল।

টানা বিদ্যুতহীনতায় বেশি ভোগান্তিতে পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। বিদ্যুৎ না থাকায় দুপুর থেকেই বাসা-বাড়ি, মসজিদসহ নানা স্থানে পানিসহ নানা সংকট সৃষ্টি হয়। বিদ্যুতের অভাবে অনেক গৃহস্থালী কাজ ব্যাহত হয়। হাসপাতাল, ক্লিনিকসহ জরুরি সেবা ব্যাহত হয়। অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ থাকায় যানবাহন জ্বালানি সমস্যায় পড়েছে। বিশাল এলাকায় জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।

মোবাইল চার্জ দেওয়া, ইন্টারনেট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠেছে সিলেটে। রাতে চড়া দামে মোমবাতি বিক্রয় হতে দেখা গেছে।

রাত ১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিদ্যুতের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি।

সরেজমিনে জিন্দাবাজার এলাকায় কথা হয় রিকশাচালক জমির মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘কারেন্ট না থাকায় ভুতের শহর লাগের। রুজিও করতাম পারছি না। দেখরা তো মানুষ নাই। কোন সময় কারেন্ট আইব কেউ কইত পারের না। বাসাত মোমবাতি নিতাম আছলাম। দাম হুনিয়া ডর লাগের। ৫ টেকার মোমবতি কইন ১৫ থেকে ২০টাকা।’

জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ী রাসেল আহমদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় শহরে মানুষ কমে গেছে। এরকম নগরী আমার জীবনে দেখছি না। বিদ্যুৎ কখন আইব এ টেনশনে আছি। বাসা থেকে জানিয়েছে পানির সংকট। পানি বাইরে থেকে কিনে নিতে হবে।’

রিকাবীবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা দেবব্রত রাজন বলেন, ‘বাসায় পানি নেই। বিদ্যুৎ না থাকায় পানি উঠানো যাচ্ছে না। খুব কষ্ট হচ্ছে।’

এদিকে কুমারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রিড ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ উপ কেন্দ্রের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিরূপণে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগ- ২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে এ তদন্ত কমটি গঠন করা হয়।

কমিটিকে আগামী ৩ দিনের মধ্যে নির্বাহী পরিচালক (ওএন্ডএম) পিজিসিবি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের উপ-মহাব্যবস্থাপক (এইচআরএম) রূপক মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ্ জায়েদী স্বাক্ষরিত এক পত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

গ্রিডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন উপ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগুনে প্রায় ৭০ কোটি টাকার ২৫/৪১ এমবিএ দুটি ট্রান্সফরমার পুড়ে গেছে। ট্রান্সফরমারগুলোর বাইরের অংশ পুড়লেও ভেতরে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া ৩৩ কেভি ফিডার ও বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুরো সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে সিলেট নগরী, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা, ছাতক ও সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎহীন রয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষাধিক গ্রাহক দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।

সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন ও বিতরণ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করতে তাদের কর্মীরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট কুমারগাঁওয়ে ১৩২/৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর ৭টি ইউনিট একঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুরের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.