Sylhet Today 24 PRINT

রাধার ১৮ লাখের দায় এখন মোখলেছের ঘাঁড়ে!

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ |  ২২ নভেম্বর, ২০২০

১২ বছর আগে ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন বিশ্বনাখের কাটলিপাড়া গ্রামের মৃত যনেশ্বর মালাকারের ছেলে।

১২ বছরের রাধা মালাকারের (৪০) সুদ ও মামলার খরচসহ ব্যাংক-ঋণ দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

১২ বছর আগে বাড়ির ১৫শতক জায়গা বন্ধক দিয়ে পালিয়ে যান তিনি। আর এতে বিপাকে পড়েন ব্যাংক লোনের সাক্ষী রাধার বড়ভাই রাখাল মালাকার (৫০) ও গ্রামের দরিদ্র বৃদ্ধ মোখলেছুর রহমান (৫৫)। রাধার সঙ্গে সাক্ষী দু’জনকেও আসামি করে সিলেটের যুগ্ম-জেলা জজ ৩য় আদালতে ব্রাক ব্যাংক সিলেটের লালদিঘির পার শাখার ব্যবস্থাপক অলিউল্লাহ অর্থ-ঋণ আইনে মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং ০৯/১৫ইং)।

ব্যাংকের চাপে ২০১৬ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান রাখালও। এরপরও ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৭ সালে তাদের বিরুদ্ধে আরও একটি জারি মোকদ্দমা দায়ের করেন ব্যাংকের আইন ও ঋণ উদ্ধার বিভাগের কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম, (মামলা নং-১৩/২০১৭)।

এরপর ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মারা যান রাখাল। এক সাক্ষীর মৃত্যু আর ঋণ গ্রহীতা পলাতক থাকায় ঋণের দায় এখন চা-বিক্রেতা মোখলেছের ঘাঁড়ে! অর্থঋণের মামলায় ৬ মাস কারাভোগ শেষে গত ১৮মার্চ ছাড়া পান মোখলেছ। তার অভিযোগ সাদিক নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা সপ্তাহে দু’বার তার বাড়িতে গিয়ে ১৮লাখ ২৬ হাজার টাকার অর্ধেক ৯লাখ ১৩হাজার টাকা দিতে চাপ দিচ্ছেন।

ব্যাংক কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর সাথে আলাপ করে জানাগেছে, ১২ বছর আগে ২০০৮ সালের ১৭ নভেম্বর ১৭% সুদে ব্রাক ব্যাংক সিলেটের বিশ্বনাথ শাখা থেকে চুমকি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নামে ৬লাখ ৫০হাজার ৫৪৮টাকা লোন নেন রাধা মালাকার (৪০)। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর ১লাখ ৯২ হাজার ১০৭টাকা টাকা ঋণ পরিশোধও করেন তিনি। ২০১২সালে লাপাত্তা হয়ে ঋণ খেলাপী পর ২০১৫ সালে ব্যাংক কর্মতারা ১৩ লাখ ৪৬হাজার ২৬৪টাকা ঋণ পরিশোধের মামলা করেন। মামলায় ২০১৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারও হন রাধা। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে আবারও লাপাত্তা হয়ে যান। অন্যদিকে ব্যাংক কর্মকর্তারা রাধার সম্পদ জামানত না রেখে লোন দেওয়ায় এখন তারাও পড়েছেন বিপাকে।

কাঠলী পাড়ার রাধার বাড়িতে গেলে কথা হয় প্রয়াত রাখালের স্ত্রী ঝুমু মালাকারের (৩৬) সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, ২০১২ সালে বাড়ি বন্ধক দিয়ে তার দেবর রাধা লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আর ব্যাংকের চাপে ২০১৯ সালে তার স্বামী পাগল হয়ে মারা গেছেন। বর্তমানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ করে পাঁচ সন্তানের মুখে আহার দিতে হিমসিম খাচ্ছেন।

আত্মহত্যার পথ ছাড়া কোন উপায় নেই জানিয়ে বৃদ্ধ মোখলেছুর রহমান বলেন, সাদেক আলী নামের এক কর্মকর্তা বাড়িতে গিয়ে তাকে ৯লাখ ১৩হাজার টাকা ঋণ পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন।

ব্রাক-ব্যাংক বিশ্বনাথের ব্যবস্থাপক সুমন আল-হেলাল বলেন, তৎকালীন সময়ে তিনি ছিলেননা। তবে, বিশ্বনাথ শাখা থেকেই লোন দেওয়া হয়েছে।

রাধা পলাতক নন দাবি করে ব্র্যাক ব্যাংকের বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর ও বালাগঞ্জ শাখার ঋণ উদ্ধারের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সাদেক আলী বলেছেন, সাক্ষী নন, রাধার ব্যাংক লোনের জামিনদার হলেন মোখলেছ ও প্রয়াত রাখাল। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.