Sylhet Today 24 PRINT

দিরাই পৌরসভা নির্বাচন: দুইদলেই প্রার্থী জট, লবিংয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার, দিরাই  |  ২৫ নভেম্বর, ২০২০

আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দিরাই পৌরসভা নির্বাচন। তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই মেয়র পদে নৌকা ও ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা স্থানীয়, জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

আগামী ১ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র জমা দানের শেষ দিন। এর মধ্যেই দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে মরণ কামড় দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা কর্মীদের সাথে আলাপ করে জানাযায়, সরকারি দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে যারা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তারা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা আসাদ উল্লাহ ও দিরাই কলেজের সাবেক ভিপি, পৌরসভার প্যানেল মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বিশ্ব।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক, বিএনপি নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাইয়ূম, দিরাই পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরী।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শ্রেণির নেতাকর্মীদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, প্রকাশ্যে বর্তমান সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ দেখা গেলেও দুই ভাগে বিভক্ত দিরাই আওয়ামী লীগ। এক বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান পৌর মেয়র মোশাররফ মিয়া, অপর বলয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়। প্রদীপ রায় বলয়ে রয়েছেন আসাদ উল্লাহ ও বিশ্বজিৎ রায়। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজী নন। এমনকি দলীয় প্রতীক না পেলে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার কথা নেতাকর্মীদের জানিয়েছেন তারা। তবে আপাতত সংসদ সদস্য জয়া সেগুপ্তার সমর্থন নিয়ে নৌকার প্রতীক পেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, এবার কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। তবে বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া বহুল আলোচিত ট্রিপল মার্ডার মামলার ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে নৌকার মাঝি হওয়ার তার সম্ভবনাই বেশি।

মোশাররফ মিয়া বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের হাত ধরে আজীবন রাজনীতি করে এসেছি। দলের দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করেছি। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রয়াণের পর জয়া সেনগুপ্তার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। নৌকা প্রতীক নিয়ে গত পৌর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দিরাই কলেজ রোড,পৌর ভবন সহ অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমার বিশ্বাস দল আমাকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা সুযোগ করে দিবে। সকলের সহযোগিতায় পৌরসভার উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চাই।

এদিকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হচ্ছেন গত পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী, উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাইয়ুম ও দিরাই পৌর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি,আইনজীবী ইকবাল হোসেন চৌধুরী।

বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, বিগত পৌর নির্বাচনে গুলোতে দলীয় প্রার্থী মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক প্রচুর ভোট পাওয়ার পরও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবির হয়েছে। এ সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা পেলে আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। তবে এবার পূর্বের প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করতে পারেন।

দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরী, তিনি বলেন, আমাদের নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরী তাকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল কাইয়ূমও দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সবকিছু নির্ভর করে আমাদের নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সিদ্ধান্তের উপর ।

ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই জিয়াউর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করে আসছি, দিরাই পৌর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে ছাত্রদল কে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করেছি, দলের দুর্দিনে দলের জন্য কাজ করে জেল জুলুমের শিকার হয়েছি, আমাদের নেতা নাছির উদ্দিন চৌধুরীর নির্দেশে আমি পৌর এলাকা চষে বেড়াচ্ছি, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি পৌরবাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চাই তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে আমি নির্বাচন করবো না।

এছাড়াও পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সমাজকর্মী রশিদ মিয়া। তিনি প্রতিদিনই পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ ও অসহায় হতদরিদ্র মানুষদের সহায়তা করে যাচ্ছেন। অপরদিকে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টি নেতা অনন্ত মল্লিক।

দিরাই উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৯ সালে হাওরের জনপদ দিরাই উপজেলা সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। উপজেলা সদরের ১৭ টি গ্রাম নিয়ে পৌরসভা গঠিত হয়। সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে লোকসংখ্যা ৩২ হাজার ১৫৪ জন। ৬.৫ বর্গমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় বর্তমান ভোটার ২১ হাজার ৩৭৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৫৫২ নারী ১০ হাজার ৮২৭ ভোটার রয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন বর্তমান মেয়র মোশাররফ মিয়া। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মঈন উদ্দিন চৌধুরী মাসুক।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.