Sylhet Today 24 PRINT

‘আব্বা আল্লাহর বাড়ি গেছোইন, আমরার লাগি পোলাও লইয়া আইবা’

কুলাউড়ার সদ্যপ্রয়াত দিনমজুর আতিক মিয়ার পরিবারের মানবেতর দিনযাপন

এস আলম সুমন, কুলাউড়া |  ২৭ নভেম্বর, ২০২০

‘আব্বা আল্লাহর বাড়ি গেছোইন, আমরার লাগি পোলাও লইয়া আইবা।’- বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলে এমনটি বলে ৪ বছরের শিশু তানজিনা। তার বাবা মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা আতিক মিয়া গত মঙ্গলবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এদিক ওদিক তাকিয়ে যেনো বাবার ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে তানজিনা। সে হয়তো বুঝতেই পারেনি তার বাবা এখন না ফেরার দেশের চিরস্থায়ী বাসিন্দা। সরেজমিনে আতিক মিয়া বাড়িতে গেলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আতিক মিয়া রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। মঙ্গলবার ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। মৃত্যুর সময় রেখে যান স্ত্রী রফনা বেগমসহ ২ বছরের এক ছেলে রাফি মিয়া ও ৪ বছরের তানজিনা বেগম এবং ৮ বছরের আয়শা বেগম  নামে দুই কন্যা সন্তান।

আতিক মিয়ার স্ত্রী রফনা বেগম পরিবারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম বাক্তিটিকে হারিয়ের দু’চোখে শুধুই অমানিষার অন্ধকার দেখছেন। মাথার উপরের বিশাল আকাশটা যেনো হঠাৎ ভেঙে পড়লো। যা কিছু জমানো স্বপ্ন-আশা, এক নিমিষেই সব ভেঙে চুরমার হয় গেলো। এক অনিশ্চয়তার চাদরে মোড়া দীর্ঘশ্বাস নিয়ে তিনটি অবুঝ শিশুকে বুকে জড়িয়ে চোখের জল ফেলে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন তিনি। তাঁর শুধু আহাজারী তিনটি অবুঝ শিশুকে কিভাবে খাওয়াবেন, ভাঙা ঘরে কিভাবে থাকবেন, ভবিষ্যত কি হবে?

আতিক মিয়ার দু বছরের অবুঝ ছেলে রাফিও মায়ের কোলে অনবরত কান্নারত অবস্থায় কি জানি খোঁজছে। সে  জানেনা প্রিয় বাবা কোথায়।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, আতিক মিয়া রাজমিস্ত্রীর কাজ করে কোনমতে দুবেলা দু মুঠো ভাত সন্তানদের মুখে তুলে দিয়ে দিন চালাতেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার থাবায় বেকার হয়ে যান তিনি। এরপর ধারদেনা করে কোনমতে সংসার চালাতেন। এসব দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। গত একমাস ধরে হৃদরোগে আক্রান্ত হোন তিনি। টাকার অভাবে সুচিকিৎসাও করাতে পারেন নি। অবশেষে গত মঙ্গলবার ভোরবেলায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

তিন অবুঝ সন্তানকে নিয়ে জরাজীর্ণ ঘরে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিন কাটছে আতিক মিয়ার স্ত্রী রফনা বেগমের। মাটির ঘরের জীর্ণ দেয়াল ধসে যাওয়ার উপক্রম এবং টিনের চালাও নষ্ট হয়ে গেছে দীর্ঘদিন থেকে। বিশাল ফুটো হয়ে গেছে টিনের চালায়। ঘরে নেই কোন বিছানা, তাই মাটির মেঝেতে সন্তানদের নিয়ে রাত যাপন করছেন রফনা বেগম। স্বামী আতিক মিয়া রেখে যাওয়া জীর্ণঘরসহ ছোট্ট একটি ভিটে ছাড়া আর কিছু নেই। স্বামী মারা যাওয়ার দিন ঘরে কোন খাবার ছিলোনা। গ্রামের মানুষের দেওয়া সহযোগিতায় সন্তানদের আহার জুটে।

এতিম সন্তানদের আহার ও অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে দিশেহারা রফনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী  অসুস্থ হয়ে মঙ্গলবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার কষ্টার্জিত উপার্জন দিয়ে আমাদের পরিবার চলতো। এখন তিন বাচ্চাদের নিয়ে আমি ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছি। কিভাবে এই সংসার চালাবো।’

আতিক মিয়ার বড় ভাই এলাইছ মিয়া বলেন, আমার ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে কোনমতে সংসার চালাতেন, কিন্তুু করোনায় কোন কাজ না থাকায় সে বেকার হয়ে যায়। গত একমাসে থেকে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে টাকার অভাবে চিকিতসা করাতে পারেনি। আমাদেরও তেমন সামর্থ্যে নেই। আমার ভাইয়ের পরিবারের কথা চিন্তা করে মানবিক কারণে যদি সরকারের ও সমাজের বিত্তশালী মানুষের পক্ষ থেকে একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং তাদের খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাহলে আমরা চিরঋণী হয়ে থাকবো।
 
বিষয়টি কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটি এম ফরহাদ চোধুরীর নজরে আনলে তিনি বলেন, ‘আপনার মাধ্যমে ওই পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনের বিষয়টি জেনেছি। সরেজমিন এই পরিবারের খোঁজ নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় রফনা বেগমকে বিধবা ভাতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া তার জরাজীর্ণ ঘরের বিষয়ে আমাদের গৃহনির্মাণ প্রকল্প চলমান আছে জমি আছে ভুমি নেই এই প্রকল্পের আওতায় গৃহনির্মানের ব্যবস্থা করা হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করা হবে। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসারও আহবান জানান তিনি।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.