Sylhet Today 24 PRINT

মাধবপুরে ভোটারদের মনে শঙ্কা

পৌরসভা নির্বাচন

তপন কুমার দাস ও হামিদুর রহমান, মাধবপুর থেকে :  |  ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

আগামীকাল ১৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। আজ শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে নির্বাচনি সরঞ্জাম। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে র‌্যাব মোতায়েন থাকবে। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও দায়িত্ব পালন করবেন।

তবুও এ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট হবে কি না, পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যাবে কি না- সেই প্রশ্ন ঘুরেছে ভোটারদের মুখে মুখে। গত মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) পৌর এলাকা ঘুরবার সময় দেখা যায়, ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রবল সন্দেহ-সংশয় রয়েছে। তাদের অনেকেই সহিংসতা ও ভোট না দিতে পারার আশঙ্কা করেছেন। তাদের এই আশঙ্কাটা আরও প্রবল হয়েছে গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে পৌর এলাকায় ককটেল বা এ জাতীয় একটি বিস্ফোরণের আওয়াজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। তবে স্থানীয় প্রশাসন এই শঙ্কা অমূলক বলে উড়িয়ে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের সকল ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত বর্তমান পৌর মেয়র হিরেন্দ্র লাল সাহাকে প্রধান আসামি করে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

গত মঙ্গলবার দিনভর পৌরসভার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভোট নিয়ে কথা হয়। সবজি বাজারে কথা হয় সখি বালার (৬৫) সাথে। এই বয়সেও তিনি জীবিকার দায় মেটাতে বাজারে সবজি বিক্রি করেন। শহরের কাছেই বাড়ি। সংসারে ১ ছেলে ও ৪ মেয়ে তার। সবজি বিক্রি করে বাড়ি ফেরার পথেই হাটতে হাটতে কথা হয় তার সাথে। সখি বালা বলেন, ‘ভোট দিয়া কি করতাম। অনেক কষ্টে বয়স্ক ভাতা পাইছি এইবার। মেয়র যে পাশ করুক আমার তো সবজি বিক্রি করন লাগব। তয় (তবে) ভোট দিতে যামু (যাব)। কাইজ্জা (ঝগড়া) না হলে ভালা। ভোট আইলে তো জোর খাটায়। যার যত ক্ষেমতা (ক্ষমতা) বেশি। শান্তিপূর্ণ হলে খুশি আমি।’

৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অর্জুন দাশ বলেন, ‘ভোটটা শান্তিপূর্ণ হলে খুব খুশি আমি। কিন্তু মনে হয় শান্তিপূর্ণ হবে না। কাইজ্জা অইব। মাইনষে মাতামাতি করে কাইজ্জা হইতে পারে।’

হাসপাতাল রোড এলাকায় কথা হয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফজল মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘কার মনে কি আছে সেটা বলতে পারব না। তবে সুষ্ঠু ভোট চাই।’

হাসপাতাল এলাকায় প্রচারণায় পাওয়া গেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্তকে। তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোয়ন দিয়েছেন। কিন্তু নেত্রী ও দলের সাথে দুজন বেইমানি করে বিদ্রোহী হয়েছেন। এটা ঠিক হয়নি। জনগণ আমার সাথে আছেন। জয় আমার হবে।’

এই এলাকায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মীর্জা ইকরামের সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রার্থী এ পর্যন্ত তিনবার নির্বাচন করাতে সাধারণ ভোটারদের মায়া হয়ে গেছে তার প্রতি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দুজন। একক প্রার্থী হওয়ায় সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালোই দেখতেছি। তবে ভোটের দিন কি হবে বুঝতেছি না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে ধানের প্রার্থী জয়ী হবেন।’ তার মতো একই কথা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলাউদ্দিন আল রনিরও।

আড়ৎ এলাকায় কথা হয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পংকজ সাহার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক গোপাল সরকারের সাথে। তিনি বলেন, ‘পংকজ সাহাকে ঠেকাতে তিন প্রার্থী এক হয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিন প্রার্থী থেকে বেশি ভোট পেয়ে পাশ করবেন পংকজ শাহা।’

রিকশা চালক এনু মিয়া বলেন, ‘আমি পৌরসভার ভোটার নই। তবে রিকশায় পেসেঞ্জাররা আলাপ করেন। তাদের আলাপে বোঝা যায় সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। অনেক শিক্ষিত মানুষ তো রিকশায় ওঠেন। তাদের আলাপ তো সঠিক হবার কথা।’

সোনাই নদীর পারে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘নির্বাচন কেমন হবে, তা প্রশাসন ও সরকার ভালো জানেন। এখন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় না। যার প্রভাব যত বেশি সেই পাশ করে। সে হোক আওয়ামী লীগে আর হোক বিএনপি।’ তবে তাদেরই একজন বলেন, ‘গত নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি। এবার দিব। সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হচ্ছে। প্রশাসন শক্ত আছে।’

আবার এখানে ব্যক্তির চেয়ে দলের গুরুত্ব দিচ্ছেন কেউ কেউ। কেউ খুঁজছেন সৎ প্রার্থী। আবার বিক্ষিপ্ত ভাবনাও আছে। অনেকে মনে করছেন দলের প্রার্থী নির্বাচিত হলে উন্নয়ন হবে।

ঘুরতে ঘুরতে ততক্ষণে বেলা বিকেলের দিকে গড়িয়ে গেছে। প্রার্থীদের প্রচারের মাইক বেরিয়েছে। মাইকে প্রার্থী ও প্রতীকের গুনগানে বাতাস ঝনঝন করে বাজতে থাকে।

মাধবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইকবাল হোসেন শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় বলেন, ‘সবগুলো কেন্দ্রকেই আমরা সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই মোতাবেক প্রতিটি কেন্দ্রেই একজন ইন্সপেক্টরের অধীনে প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসারসহ ২০ জন থাকবেন। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন নির্বাহী ম্যাজস্ট্রেট থাকবেন। এছাড়া মোবাইল টিম, স্ট্রাইকিং ফোর্স, রির্জাভ ফোর্সও থাকবে। যারা সার্বক্ষণিক প্রতিটি কেন্দ্রেই টহল দেবে। এতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এছাড়া ককটেল বা এই জাতীয় একটি বিস্ফোরণের আওয়াজের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের প্রার্থী একটা অভিযোগ দিয়েছেন। ককটেল কি না, বুঝা যাচ্ছে না। আমরা এখনো এফআইআরে নেইনি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’

প্রসঙ্গত, প্রথম শ্রেণির মাধবপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শ্রীধাম দাশগুপ্ত (নৌকা), বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান মানিক (ধানের শীষ), আওয়ামী লীগের দুইবিদ্রোহী প্রার্থী মধ্যে শাহ্ মো. মুসলিম (জগ), ও পংকজ সাহা (নারিকেল গাছ) নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে ৩৭ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৭ জন নারী কাউন্সিলর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ হবে এই নির্বাচনে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ১০৭ জন ও নারী ভোটার ৭ হাজার ৮৮০ জন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.