রিপন দাস, বড়লেখা : | ১৫ জানুয়ারী, ২০২১
সকাল সাড়ে ১০টা। ততক্ষণে কুয়াশা কেটে রোদ ঝলমল করে উঠেছে। পাকা সড়কের পাশের সদ্য কেটে নেওয়া আমনের জমিতে এবড়োথেবড়ো খড়ের ওপর বসতে শুরু করেছে দোকানপাট। কেউ জায়গা চিহ্নিত করছেন, কেউ বা অস্থায়ী ঘর তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাঠ জুড়ে জিনিসপত্রের স্তুপ। কেউ বস্তাখুলে জিনিসপত্র সাজাচ্ছেন, আধাখোলা বস্তায় মালামাল দেখছে উৎসুক শিশুরা। মাঠজুড়ে রাজ্যের ব্যস্ততা। বছরজুড়ে অপেক্ষার পর এ ব্যস্ততা তৈরি করেছে একটা ভিন্ন আমেজ।
এ চিত্র বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) বড়লেখার দাসেরবাজার ইউনিয়নের ঐতিহ্যের বাগীরপার মেলা মাঠের। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা। শিশু থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ সকলের ভিড়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল পুরো মেলা প্রাঙ্গণ। মেলা চলে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। বহু বছর থেকে সনাতন (হিন্দু) সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে চলছে ঐতিহ্যের এ মেলা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মেলা আয়োজনে কোনো রকম প্রচারণা চালানো হয় না। যুগ যুগ ধরে এখানে মেলা চলে আসলেও ঠিক কত বছর তার সঠিক হিসাব নেই তাদের কাছে। এলাকার সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি জানালেন, তার শৈশবে এখানে মেলা হতে দেখেছেন। বাবা-মায়ের কাছে শোনেছেন এ মেলার কথা। আগে পৌষের ৩০ পৌষ অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলা হতো। মেলায় প্রতি বছর অন্যতম আকর্ষণ ঘোড়ার দৌড়। দিন দিন এ মেলায় লোক সমাগমও বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য নিয়ে এখানে আসেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও কারিগরা। এখানে এসে অনেকে তৈরি করেন ছোটদের খেলনা। বছরজুড়ে তারা ঘুরেন বিভিন্ন মেলায়।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মুখরোচক খাবারসহ বিভিন্ন মজাদার খাবারের পসরা নিয়ে বসে আছেন নারী-পুরুষ দোকানী। দোকানগুলোতে মুড়ি, বাতাসা, নাড়ু, ভুট্টা, জিলাপি, মিষ্টি, দই, চানাচুর, মৃৎশিল্পের সামগ্রী, হাতপাখা, মাটির টব, পাটি, ছোটদের খেলনা, আসবাব; ঘর সাজানোর উপকরণসহ নানা পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছেন বিক্রেতারা।
মেলায় বিভিন্ন খাবার পণ্য নিয়ে বসেছেন বয়োজ্যেষ্ঠ বিক্রেতা চরিত্র দাস। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রায় ৩০ বছর ধরে মালামাল নিয়ে যাই। ভালো বিক্রি হয়। সারাবছর বিভিন্ন জায়গা ঘুরি। কিন্তু এ মেলায় আসলে খুব ভালা লাগে। এখানের মেলাটা খুবই জমে উঠে। অনেক পরিচিত মানুষের সাথেও দেখা হয়। আমার বাবাও এখানে মালামাল নিয়ে বিক্রি করেছেন।’
প্রসঙ্গত, মেলা উপলক্ষে আশেপাশের বাসিন্দাদের ঘরে ঘরে চলে পিঠা-পায়েশ তৈরি ও খাওয়ার উৎসব। এ উৎসব ঘিরে প্রতি বাড়িতেই দূর-দূরান্তের আত্মীয়রা আমন্ত্রিত হয়ে আসেন। বিশেষ করে নিমন্ত্রণ হন মেয়ে জামাই, নাতি-নাতনিদের। দিনব্যাপী চলে অতিথি আপ্যায়ন এবং দুপুর থেকে সবাই সমবেত হতে থাকেন মেলা মাঠে।