Sylhet Today 24 PRINT

ফেঞ্চুগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নতুন অর্ন্তভূক্তির চুড়ান্ত প্রতিবেদনের হদিস নেই

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নতুন অর্ন্তভূক্তির ব্যাপারে যাচাই বাছাই শেষে চুড়ান্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। কিন্তু একমাত্র সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যাচাই বাছাই কার্যক্রম শেষেও চুড়ান্ত প্রতিবেদন রহস্যজনকভাবে প্রেরণ করা হয়নি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

এ প্রতিবেদনটি ফাইলবন্দি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পথ রুদ্ধ করা হয়েছে কোনো এক অজানা কারণে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে মঙ্গলবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তালিকায় নাম বাদপড়া কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্যে ফেঞ্চুগঞ্জে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আসাদুজ্জামান বাচ্চুর ছোটভাই মো. মানিকুজ্জামান বলেন, বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের অধীনে ২০১৪ সালে তালিকায় নাম বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম অর্ন্তভূক্তি জন্য অনলাইনে আবেদনের সুযোগ প্রদান করেন। সেই তালিকায় অর্šÍভূক্তির জন্য  বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলার মতো আমরাও গ্রহন করি এ সুযোগ। এরই প্রেক্ষিতে ১২ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে প্রেরিত আবেদন যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়।

পরবর্তীতে এ যাচাই বাছাই চুড়ান্ত শেষে স্মারক নং ০৫.৪৬.৯১৩৫.০০০.১৬.০২৩.২০১৭-১৪০ এর মাধ্যমে গত ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রমের প্রতিবেদন প্রেরণ করেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হুরে জান্নাত। প্রতিবেদন পত্রটি ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেরণ করেন সচিব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, সরকারী পরিবহন পুল ভবন, সচিবালয় সংযোগ সড়ক, ঢাকা বরাবরে। এছাড়া অনুলিপি সদয় অবগতির জন্য পাঠানো হয় মহাপরিচালক, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল ও সিলেট  জেলা প্রশাসক বরাবরে। কিন্তু সারাদেশের তালিকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় যথাযথ দপ্তরে পৌছে অগ্রগতি নিশ্চিত হলেও কেবল মাত্র ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার তালিকাটির কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কর্তৃক প্রেরিত নির্দেশনা অনুযায়ী মাইকিংসহ অন্যান্য প্রচারনার মাধ্যমে যথারীতি সকলকে অবহিত করে এবং নির্ধারিত ফরম বিতরণ করা হয়ছিল। পরবর্তীতে আবেদনকারীগনের মধ্যে সাক্ষাতকারের মাধ্যমে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল কর্তৃক নির্দেশনার আলোকে যাচাই বাছাই করে বাদ পড়া ব্যক্তিগণের তালিকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহিতও হয়েছিল। কিন্তু সারাদেশের সবকটি উপজেলার তালিকা চুড়ান্ত হয়ে অগ্রবর্তী হয়েছে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে, বঞ্চিত আমরা ফেঞ্চুগঞ্জের আবেদনকারীরা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমরা সদয় দৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাক, রনাঙ্গণ, পরবর্তীতে আজ ৫০ বছরের পর্দাপণ করেছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়ে মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় আমাদের নাম অর্ন্তভূক্তি হয়নি আজও। মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার প্রথম শহীদের গৌরব অর্জন করেছিলেন আসাদুজ্জামান বাচ্চু। তৎকালীন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ১নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের মৃত আসকর আলীর সন্তান তিনি। কিন্তু এ শহীদের নাম এখন মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় স্থান পায়নি। এ তালিকা আরো দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গর্বিত সন্তান শহীদ ধীরেন্দ্র কুমার দাস। মাইজগাঁও ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মৃত হরকিশোর দাসের সন্তান তিনি। এছাড়া রয়েছেন শহীদ মো. আবদার আলী। মানিকোনা গ্রামের মৃত আশিদ আলীর পূত্র তিনি। তালিকায় নাম অর্ন্তভূক্ত হয়নি মৃত সৈয়দ মুজাহিদ আলীর। ১ নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনপুর গ্রামের মৃত রিয়াসত আলীর পূত্র তিনি। বদরুল ইসলাম (নিলু)।

 ১ নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের কেএমটিলার মৃত মছফুদ্দোহার পূত্র তিনি। মাইজগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের পিতা মৃত মছব্বির করিম চৌধুরীর পূত্র মৃত শহীদুল করিম চৌধুরীর নাম নেই মুক্তিযুদ্ধের তালিকায়। বাদ পড়াদের তালিকায় অন্যতম হলেন আব্দুল বাছিত চৌধুরী। মাইজগাঁও ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের মৃত আব্দুল লতিফ চৌধুরীর পূত্র তিনি। এছাড়া রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা  মো: আব্দুল লতিফ।  ১ নং ফেঞ্চুগঞ্জ ইউনিয়নের রাজনপুর গ্রামের মৃত আব্দুস ছমেদের পূত্র তিনি। বাদ পড়া দীর্ঘ তালিকার আরো হলেন মৃত নজমুল হোসেন।  মাইজগাঁও ইউনিয়নের নুরপুর জুমাটিলার মৃত আব্দুল গণির সন্তান তিনি। এছাড়াও আছেন ৩ নং ঘিলাছড়া ইউনিয়নের বাদেদৈউলী গ্রামের মৃত তখলিছ আলী পূত্র মুক্তিযোদ্ধা মো: আব্দুল জব্বার।  

কেনো যাচাই বাছাইয়ের পরও তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে দেয়া হলো না, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা॥ অনতিবিলম্বে সরকারের সব এজেন্সি দিয়ে প্রয়োজনে পুনরায় তদন্ত করেও বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভূক্তি করার। পাশাপাশি এ তালিকা যে কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্রে ফাইলন্দি করে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি তাদের।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.