Sylhet Today 24 PRINT

অধ্যক্ষের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় অপপ্রচার

মঈনউদ্দিন মহিলা কলেজের প্রভাষকের সংবাদ সম্মেলন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

প্রতারণা, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন। অবৈধ বাণিজ্য ও বিভিন্ন সময় অনিয়মের মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. মাহবুবুর রউফ (নয়ন)।

তিনি বলেন, তার দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় তিনি আমাকে অবৈধভাবে কলেজ থেকে বরখাস্ত করেন। যা জাতীয় বিশ্ববিতদ্যালয়ের তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে। আইনিভাবে তিনি আমার সাথে পেরে উঠতে না পেরে এখন তিনি আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

লিখিত বক্তব্যে নয়ন বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ জুন বিধি মোতাবেক আমি সিলেকশন কমিটির লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে একই বছরের ২৭ জুন মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের গভর্ণিং বডির অনুমোদন ও পরবর্তীতে জাতীয় বিশববিদ্যালয়ের অনুমোদনক্রমে কলেজে ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ লাভ করি। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কলেজে যোগদান করি। কিন্তু তৎকালীন অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন আমার যোগদানের তারিখ দেখিয়েছেন ২০১৫ সালের ৪ জুলাই। এর বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আমি সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তাকে আসামি করে মামলা (নং ৭১২/২০) দায়ের করি। যা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে গিয়াস উদ্দিনের সাথে অনার্স কোর্সের শিক্ষকদের শতভাগ বেতন-ভাতা নিয়ে আমার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে তিনি আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন।
প্রভাষক মাহবুবুর রউফ নয়ন বলেন, ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারির গভর্নিং বডির সভায় বিবিধ সিদ্ধান্তের আলোকে গিয়াস উদ্দিন তার পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে মিথ্যা, কাল্পনিক, মনগড়া, বানোয়াট ও সাজানো কাহিনী সাজিয়ে আমাকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরবর্তীতে শোকজ করেন। একই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি আমি শোকজের জবাব দেই। আমার লিখিত জবাব পেয়ে কলেজের সাবেক গভর্নিং বডির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আজিজ ও সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন নেতৃত্বাধীন কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি কলেজ চাকুরি শর্তাবলী রেজ্যুলেশন ২০১৫ এর নিয়ম অনুযায়ী ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন না করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন। অত্যন্ত দুঃখজনক জলেও সত্য যে, তথাকথিত এ তদন্ত কমিটি আমার কোনো লিখিত কিংবা মৌখিক বক্তব্য নেয়নি।

এছাড়া কলেজ গভর্নিং কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর্বানুমতি ব্যতিত ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি গভর্নিং বডির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাকে কলেজ থেকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করেন। এ অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবরে একই বছরের ১৪ মার্চ লিখিতভাবে আমি আপিল দায়ের করি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপিল বোর্ড উভয় পক্ষের শুনানী শেষে ২২ অক্টোবর আমার পক্ষে চূড়ান্ত রায় দেন। কিন্তু গভর্নিং বডির নিকট ওই রায়ের বাস্তবায়ন চেয়ে সর্বমোট ৫ বার লিখিভাবে আবেদন করার পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন ও তার সহযোগী ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও আমার সহকর্মী সৈয়দা ফাতেমা সুলতানা কর্তৃক আমাকে পুলিশি হয়রানি করার জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, কাল্পনিক ও মনগড়া তথ্য দিয়ে ২০১৯ সালে বিভিন্ন তারিখে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় ৩টি জিডি করেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট তন্তকারী কর্মকর্তা সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাননি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের গভর্ণিং বডির এক সভায় দাতা সদস্য মহসিন মানিক কর্র্তৃক স্বাক্ষরিত এক পত্রে সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের গ্র্যাচুয়্যাটির টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলে। পরবর্তীতে চাপে পড়ে গিয়াস উদ্দিন আত্মসাতকৃত টাকা কলেজ ফান্ডে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। এছাড়া গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে কলেজ ফান্ড থেকে ব্ল্যাঙ্ক চেকের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরেন ওই সদস্য। গিয়াস উদ্দিন এ ঘটনার জন্য আমাকে দায়ী করেন। কিন্তু এতে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
তিনি অভিযোগ করেন, শিক্ষামন্ত্রণালয় ও মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের নিয়ম অনুযায়ী সাবেক অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিনের চাকুরির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ। ২০১৮ সালের কলেজের গভর্নিং বডির এক সভায় তিনি অবসরের সুযোগ সুবিধা নিয়ে কলেজের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল আজিজের নিকট আবেদন করেন। যদিও তিনি ২ বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে অধ্যক্ষ পদে তখন কর্মরত ছিলেন। আমি তার বিরুদ্ধে সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেই। আমার দায়ের করা এই অভিযোগের সত্যতা পায় জেলা প্রশাসন। ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর জেলা প্রশাসক জনাব এম কাজী এমদাদুল ইসলাম কর্তৃক স্বাক্ষরিত গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভুতভাবে কলেজ পরিচালনাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে প্রেরণ করেন।
 
গিয়াস উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় ও স্বউদ্যোগে কলেজের অধ্যক্ষ পদ ছেড়েছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন কলেজের সাধারণ শিক্ষকদের ক্ষোভের মুখে (তিন মাস বেতন না পাওয়ায়) ও সমালোচনার মুখে গভর্নিং বডির ২০২০ সালের ২১ অক্টোবরের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। যা পত্র পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এসেছে। গিয়াস উদ্দিন ২০০৯ সালের ১ নভেম্বর যোগদান করেন।

একটানা প্রায় ১১ বছর অধ্যক্ষ থাকাবস্থায় সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বিভিন্ন দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন। যারাই তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তার রোষানলে পড়েছেন। অনেককে শোকজ, বিভিন্ন কমিটি থেকে প্রত্যাহার, এমনকি অনেকে বরখাস্তও হয়েছেন। তিনি প্রায়ই নবীন শিক্ষকদের বলতেন গভর্নিং বডি আমার কথায় চলে। চাকরি করতে হলে আমার কথার বাইরে যাওয়া যাবে না। অন্যথায় ঝামেলায় পড়তে হবে। গিয়াস উদ্দিন (চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের) পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাসিক সম্মানী ৯১ হাজার ৮৫০ টাকা করে কলেজ ফান্ড থেকে উত্তোলন করেন। যা বিধিসম্মত নয় এবং অনৈতিক। অথচ কর্মরত অনার্স শিক্ষকরা ন্যায্য বেতন ভাতা দাবি করলেই তিনি প্রায়ই বলতেন কলেজ ফান্ডে টাকা নাই। তিনি এও বলতেন তোমাদের বেতন-ভাতা দিতে আমি বাধ্য নই। কলেজে মাটি ভরাটের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত ১ লক্ষ টাকা (২০১৮-১৯ অর্থ বছরের, স্মারক নং ১১৯) তিনি আত্মসাত করেন। ২০১৯ সালে কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন না করায় জেলা প্রশাসন কর্তৃক সতর্ক করা হয়। প্রকৃতপক্ষে গিয়াস উদ্দিন জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্যই যথাযথ মর্যাদায় শোক দিবস পালন করেননি।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.