Sylhet Today 24 PRINT

ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে সুবিধাবঞ্চিতদের খাবার বিলি করেন রাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়েন তিনি। সড়কে খোঁজে খোঁজে বের করেন সুবিধাবঞ্চিতদের। তারপর গাড়ি থেকে খাবার প্যাকেটটি বিলিয়ে দেন তাদের।

এই খাবার বিতরণের অর্থ পুরোটাই আসে তার ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে। ব্যবসার লাভের অংশ তিনি বিলিয়ে দেন সুবিধাবঞ্চিতদের খাবার বিলানোর কাজে।

বলছিলাম নবীন নারী উদ্যোক্তা চৌধুরী জান্নাত রাখির কথা। তিনি হোম কিচেন ও অনলাইনে কাপড়েরর ব্যবসা করেন। সেই ব্যবসা থেকে যে লাভ আসে তার একটি অংশ নিজে খাবার তৈরি করে বিলিয়ে দেন সুবিধাবঞ্চিতদের। প্রতি মাসের মতো মঙ্গলবার দুপুরেও তিনি খাবার নিয়ে সিলেট নগরের সড়কে সড়কে ঘুরে বেড়ান। হাতের সামনেই সুবিধাবঞ্চিত যাকেই পান তাদের মধ্যেই খাবার বিলিয়ে দেন।  

সোমবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিলেট নগরীর ওসমানি মেডিকেল রোড, বাগবাড়ি, মদিনা মার্কেট, আখালি, টুকের বাজার, সুবিধবাজার এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত প্রায় ৮৫ জনের মধ্যে খাবার বিতরণ করেন তিনি। এসময় আলাপ হয় তার সঙ্গে।

তিনি জানান, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, বিফ খিচুরি, জামতলা, কমলাভোগ মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাবার ঘরে তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। তার হোম কিচেন শপ ম্যাজিকাল ফুড থেকে এসব খাবার ডেলিভারি দিয়ে থাকেন। আর এই খাবার বিক্রির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ তিনি ব্যয় করে থাকেন সুবিধাবঞ্চিতদের সেবায়। প্রতিমাসের লভ্যাংশ দিয়ে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। কোনো মাসে ৫০ প্যাকেট, কোনো মাসে ১০০ প্যাকেট। তার পুরোটা নির্ভর করে লাভের অংশের উপরে। সিলেট নগর এবং নগরের আশপাশে ঘুরে ঘুরে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের খোঁজে বের করে খাবার বিতরণ করেন চৌধুরী জান্নাত রাখি।

সিলেট নগরীর নবাবরোড এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) কোয়াটারে স্বামী সন্তানসহ বসবাস করে চৌধুরী জান্নাত রাখি। স্বামী প্রকৌশলী শামছ ই আরেফিনের চাকুরীর সুবাদে সিলেট এসেছেন তিনি। নিজের পরিচিতি, আত্মনির্ভরশীল ও ভাল কিছু করার তাগিদে তিনি শুরু করেন হোম কিচেন ও অনলাইনে কাপড়ের বিজনেস।

চৌধুরী জান্নাত রাখি মনে করেন প্রতিটি নারীর নিজস্ব পরিচিতি থাকা উচিত। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। পাশাপাশি দেশ ও সমাজের ভালোর জন্য কিছু করা দায়বদ্ধতা থাকা দরকার প্রতিটি মানুষের। তাই তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন ও ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নবীন এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমি মনে করি প্রতিটি নারীর আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। তাই আমি হোম কিচেন ও অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। আমি চাইলে ঘরে বসে শুধু গৃহস্থালির কাজ করে সময় কাটাতে পারতাম। স্বামীর টাকা দিয়ে আয়েশ করার সুযোগও আছে আমার। কিন্তু তা করিনি। আমার মনে হয়েছে আমাকে স্বাবলম্বী হতে হবে। সেই তাড়না থেকে আমার এই উদ্যোগ।

তিনি বলেন, প্রতিটি মানুষেরই দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য আছে। আমারও আছে তাই আমি আমার ব্যবসার লভ্যাংশ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেই। প্রতি মাসের সেইলের লভ্যাংশ থেকে আমি সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের খাবারের জন্য একটা ইভেন্ট করি। যে মাসে যতটুকু লাভ হয় সেই লাভের একাংশ দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।

এ ব্যাপারে তার স্বামী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট ডিবিশন -২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামছ ই আরেফিন বলেন, প্রতিটি নারীর এমন সাবলম্বি হওয়ার চিন্তাভাবনা থাকা উচিত। তাছাড়া রাখি বরাবরই সামাজিক কাজ করতে অনেক পছন্দ করে। মানুষকে সাহায্য করা তার নেশা বলা যায়। তাই তার ব্যবসার লভ্যাংশ ব্যবহার করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য যে খাবারের ইভেন্ট শুরু করেছে সেটাতেও মাঝে মাঝে কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করি।

সিলেট জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নিবাস রঞ্জন দাস বলেন, একজন ব্যক্তি যদি তার লাভের পুরো অংশটাই সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যানে ব্যয় করেন তাহলে স্বভাবতই বোঝা যায় তিনি বিশাল ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি আসলে বিশাল মনের মানুষ। তার বিষয়ে তেমন কিছুই বলার থাকে না, তার কাছে নিজেকেই ছোট মনে হয়। আমরা অভিনন্দন জানাই তাকে। তার এই কাজ প্রশংসার দাবিদার। তাকে আমরা উৎসাহ দেই, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো ধরণের সুবিধা করার সুযোগ থাকে তাহলে আমরা করবো।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.