Sylhet Today 24 PRINT

সবাই ফোনে ছবি তুলেছে, কেউ সাহায্য করতে আসেনি

দুর্ঘটনা কবলিত লন্ডন এক্সপ্রেসের এক যাত্রীর মুখে রশিদপুরের দুর্ঘটনার বর্ণনা

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

শুক্রবার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের রশিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন ৮ জন। এতে আরও ১৫ জন আহত হন।

সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী এনা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষ এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা কবলিত লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রী ছিলেন সায়মন। শুক্রবারের দুর্ঘটনার বিবরণ জানিয়েছেন তিনি। সায়মনের মুখ থেকে দুর্ঘটনার বিবরণ শুনে তা ফেসবুকে লিখেছেন তার এক বন্ধু।
যা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

দুর্ঘটনা সম্পর্কে লন্ডন এক্সপ্রেসের যাত্রী সায়মন বলেন, আমরা রাত ১১ টাই সিলেটের উদ্দেশ্যে নটরডেমরর সামনে থেকে লন্ডন এক্সপ্রেস এ উঠি। আমার সিট নাম্বার ই-১। সব ঠিকঠাক চলছিল। ভোর ৫ টার দিকে আমি জেগে যাই এবং বাস তখন রানিংয়েই ছিল। আমাদের গাড়ির গতি স্বাভাবিক ছিল, কুয়াশা ছিল রাস্তার উপর। সেটা দেখার জন্য আমি সরাসরি সামনেই তাকিয়ছিলাম। সাড়ে ৫ টা কি ৬ টার দিকে গাড়ি ওভারটেক করছিল এবং ওভারটেক করার সময় সামনে থাকা এনা পরিবহনকে দূর থেকে বেশ কয়েকবার ডিপার সিগন্যাল দিয়েছিলো। এতে এনা পরিবহনও তার গতি কমিয়েছিল। সেটা দেখেই আমাদের ড্রাইভার সাহস পেয়ে গাড়ি ওভারটেক করে।

সায়মন তার বন্ধুকে জানান, হঠাৎ করে এনা পরিবহন ঢুকে যায় এবং আমাদের ড্রাইভার তারপরেও গাড়ি ব্রেক করতে সক্ষম হয়েছিল। গাড়ি ৮০+ থেকে ব্রেক করে ১০-২০ এ নিয়ে চলে এসেছিল কিন্তু এনার চালক গাড়িটি ব্রেক করেন নি। তি জোরগতিতে এসে সামনাসামনি আমাদের গাড়িকে ধাক্কা দেন।

সায়ম বলেন, আমার মাথা সামনের সিটে বাড়ি খাওয়ার পর কি হলো বুঝি নি। সাথেসাথে আশপাশে চিৎকার শুরু হলো। আমি সিটেই ছিলাম, কিন্তু ওঠার শক্তি নেই। বুঝলাম যে ডান পা হয়ত ভেঙ্গে গেছে, না হয় কেটে আলাদা হয়ে গেছে।

অনেক কষ্টে পকেট থেকে ফোন বের করলাম। কল লগে শেষ কলটা আমার বন্ধু উৎসের ছিল। ওকে কল দিয়ে শুধু বললাম যে, গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে সিলেট হাইওয়েতে। আমি বাঁচব না মনে হয়।

তারপর আমি শুধু তাকিয়ে আছি কিন্তু কথা বলার শক্তি নেই। আমার বন্ধু সিলেটের এসপিকে ফোন দিয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠায়।

সবচেয়ে আশ্চর্য, দুর্ঘটনা হয়ে গেছে ৫-৭ মিনিট কিন্তু বাইরের একটা মানুষও বাসের ভেতরে আসে নি সাহায্য করার জন্য। পেছনে দুজন ছেলে সুস্থ ছিলো। ওরাই গাড়ির কাঁচ ভাঙ্গার চেষ্টা করছিলো, কিন্তু কাঁচ অনেক শক্ত। আমাকে একজন টেনে তুললেন। আমি দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু কাঁচ ভাঙ্গার শক্তি নেই। এরাই ভাঙলো কাচ। আরো অবাক হলাম যে বাইরে অনেক মানুষ, সবাই ফোনে ছবি তুলছে কিন্তু কেউ সাহায্য করতে আসছে না।

তখন দুজন ভেতরে ঢুকে সবাইকে বের করার চেষ্টা করছে। তারপরই ফায়ার সার্ভিসের লোক চলে আসে। উনারাই সবাইকে বের করে।
চোখের সামনে পায়ের নিচে তাজা রক্ত। কি ভয়ানক অবস্থা।
সবাইকে বলব গতি কে ভালোবাসা বন্ধ করুন।সচেতনতা কে ভালোবাসুন।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার সকাল টার দিকে সিলেটগামী লন্ডন এক্সপ্রেস (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩১৭৬) ও ঢাকাগামী এনা পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো ব ১৪-৭৩১১) মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই ৪ জন মারা যান। এছাড়া হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও ৪ মারা যান। এই দুর্ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সালমান খান (২৮), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের নুরুল আমিন (৫০), সাগর (১৯), সিলেটের ওসমানী নগরের মঞ্জুর আহমদ মঞ্জু(৩৫), একই উপজেলার জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০), ডা. ইমরান খান রুমেল (৪৮), সিলেট নগরের আখালিয়ার শাহ কামাল (৪৫) ও সুনামগঞ্জের ছাতকের রহিমা বেগম।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.