Sylhet Today 24 PRINT

প্লাস্টিক বর্জ্যে নষ্ট হচ্ছে হাকালুকি হাওরের পরিবেশ

রিপন দাস, বড়লেখা : |  ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

এশিয়ার বৃহত্তম ও বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হাওর হচ্ছে হাকালুকি। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার জুড়ে এর বিস্তৃতি। হাওরের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে বড়লেখায়।

মৎস্য এবং জলচর পাখিদের মিলনমেলার স্থল হচ্ছে হাকালুকি। জীববৈচিত্রের গুরুত্ব বিবেচনায় হাওরটি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জলাভূমি। শীত মৌসুমে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ হাওরটিকে করেছে সমৃদ্ধ।

ঋতুর বৈচিত্রে মুগদ্ধতা ছড়ায় হাকালুকি। বছর জুড়ে এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগে ভিড় লেগে থাকে মানুষের। তবে হাওরের এ সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে প্লাস্টিক বর্জ্য। হাওরে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকের যত্রতত্র ফেলে যাওয়া পলিথিন, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক প্লেটের বর্জ্যে মারাত্নক দূষণ হচ্ছে হাওরের পরিবেশ ও প্রকৃতির। প্রভাব পড়ছে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ওপর।

 

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাকালুকি হাওরে বনবিভাগের হাকালুকি বিট কার্যালয়, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও দুধাই বিল পাড় এলাকায় যত্রতত্র পড়ে আছে পানির বোতল, চানাচুর, চিপসের প্যাকেট, পলিথিন ও ওয়ান টাইম প্লাটিক প্লেট। এতে সৃষ্টি হয়েছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী এ.জে লাভলু বলেন, ‘দিন দিন মানুষের অত্যাচারে এখানকার প্রাণ-প্রকৃতি অনেকটা হুমকির মুখে। কারণ এখানে প্রায়ই পাখি শিকার হচ্ছে। শিকারিরা রাতের আধারে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এখানে পাখি শিকারের জন্য শিকারিরা যে ধরনের বিষটোপ ব্যবহার করছে। তা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। কারণ এই বিষ খেয়ে পাখি মরছে। মাছ খাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণি খাচ্ছে। হাওরের পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়া প্রায় বিষ খেয়ে অনেক খামারির হাঁস মারা পড়ছে। খামারিরাও নিঃস্ব হচ্ছেন। এছাড়া এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকরাও খুবই অসেচতন। তারা ঘুরতে এসে এখানে পানির বোতলসহ বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ফেলে যান। এগুলো বর্ষায় পানিতে মিশে পানি দূষিত হচ্ছে। মূলত এসব কারণে হাওরে পাখি কমেছে। দেশীয় মাছ কমেছে। হাকালুকি হাওর আমাদের সম্পদ। হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের যে ধরনের ভূমিকা নেওয়ার কথা ছিল, তারা সেভাবে নিচ্ছেন না। এটিকে রক্ষায় এখনই সবাই এগিয়ে আসতে হবে। হাওরের পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয়দের পাশাপাশি ঘুরতে আসা পর্যটকদেরও সচেতন করতে হবে।’

আলাপকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘পর্যটন এলাকা হিসেবে হাকালুকি হাওরে পর্যটক আসবেন। তবে যত্রতত্র খাবার প্যাকেট, প্লাস্টিক ফেলায় হাওরের পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। হাওরের পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় লোকজন, পর্যটক গাইড ও নৌকার মাঝিদের সচেতন করতে স্থানীয় ইউএনও সেমিনারের আয়োজন করতে পারেন। তাদের সচেতন করা গেলে হাওরের পরিবেশ রক্ষায় তারাও ভূমিকা রাখবেন। এতে হাওরে যত্রতত্র পলিথিন, খাবারের প্যাকেট ফেলতে পারেবেন না পর্যটকরা। পর্যটকদের মধ্যেও প্রাণ ও প্রকৃতি রক্ষায় সচেতনতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। তাহলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষার মাধ্যমে হাকালুকি হাওরের পর্যটনকে আরও সম্ভাবনাময় করার সুযোগ আছে।’

এ বিষয়ে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আল ইমরান বলেন, ‘হাওরের যেসব জায়গায় পর্যটক সমাগম বেশি হয় সেসব জায়গায়, সচেতনতামূলক সাইনবোর্ড, ফেস্টুন টাঙানো ছাড়াও ডাস্টবিন স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। হাওরের পরিবেশ দূষণ হ্রাস ও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও লোকজনদের সচেতন করতে কর্মশালা করা হবে। যাতে পর্যটকদের সচেতনতায় তারাও কাজ করেন।’

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.