Sylhet Today 24 PRINT

৩৭ ভাগ হাওর রক্ষা বাঁধে অনিয়মের অভিযোগ

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ০৭ মার্চ, ২০২১

কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ বছর ৫ মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৬১ শতাংশ বাঁধে মাটি ফেলার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ৩৯ শতাংশ বাঁধে মাটির ফেলার কাজই শেষ হয়নি। এরপর মাটি দুরমুজ করা, ঢাল বজায় রাখা, মাটি ফিনিসিং করা ও ঘাস লাগানোর কাজ বাকি থাকে। নীতিমালা অনুযায়ী বাঁধের ৫০ মিটার দূর থেকে মাটি আনার কথা থাকলেও ২২ ভাগ বাঁধের কাছে থেকে মাটি আনা হয়েছে। এসব তথ্য উঠে এসেছে পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত এক গবেষণা থেকে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা এবং সংস্থা’র সহ-সভাপতি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এ গবেষণা করেন। এতে তারা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী এবং তাহিরপুর অ্যাসোসিয়েশন শাবিপ্রবির সদস্যদের সহযোগিতায় সুনামগঞ্জের মোট ৮১০টি বাঁধের মধ্যে ১০২টি বাঁধ পরিদর্শন করে প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করেন।

রবিবার (৬ মার্চ) দুপুরে ‘হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের সর্বশেষ তথ্য বিষয়ক ভার্চুয়াল আলোচনা ও গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান’-এ তারা এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। গবেষণা প্রতিবেদনে তারা আরও উল্লেখ করেন,  ৫ মার্চের মধ্যে ৫৮ শতাংশ বাঁধে মাটি ভালোভাবে দুরমুজ (কম্পেকশন) করা হয়নি, মাত্র ৭ ভাগ বাঁধে ঘাস লাগানো হয়েছে। তারা আরও উল্লেখ করেন ৩৭ ভাগ বাঁধ নিয়ে এলাকাবাসী দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। দেরিতে বাঁধ নির্মাণের কারণ হিসেবে তারা প্রকল্প প্রাক্কলন ও কমিটি গঠনে বিলম্ব, অর্থ ছাড়ে বিলম্ব, হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা ও ড্রেজার মেশিনের স্বল্পতার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়াও তারা বাঁধের মাটির দুষ্প্রাপ্যতা, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প, অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ, প্রকল্প কমিটি গঠনে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতিকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। তারা প্রকল্প প্রাক্কলনে বিলম্ব না করা, আগে ভাগে প্রকল্প কমিটি গঠন, সময়মতো অর্থ ছাড়, নীতিমালা মেনে প্রকল্প কমিটি গঠন করা, প্রকল্প প্রণয়নে স্থানীয় কৃষকদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, বাঁধের বিকল্প ভাবা ও নদী এবং বিল খননের কথা সুপারিশ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তারা জানান, নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পের স্কিম প্রণয়নের কথা থাকলেও জানুয়ারি মাসে স্কিম প্রণয়ন হয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও ৯০ ভাগ পিআইসি গঠিত হয় জানুয়ারি মাসের শেষ ও ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে।

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এই তথ্যগুলো যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এবং তারা সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তবেই আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হবে।’

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আলী ওয়াক্কাস সুহেল বলেন, আমাদের বাঁধের বিকল্প ভাবতে হবে। বাঁধের কারণে হাওরের প্রতিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে। তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এজন্য নদী খননের পাশাপাশি হাওরের বিলও খনন করতে হবে। একই সাথে হাওরের সমস্যা সমাধানে হাওরের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য তিনি মতামত দেন।

দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ গওহর নঈম ওয়ারা বলেন, ‘এ বছর হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ দেরিতে হওয়ার একটা বড় কারণ হলো হাওর থেকে দেরিতে পানি নামা। হাওরে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। হাওর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যত্রতত্র ব্রিজ কালভার্ট, সড়ক নির্মাণ করা যাবে না। হাওরকে সামগ্রিকভাবে ভাবতে হবে। খ-িতভাবে ভাবলে হবে না।’

এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলাপমেন্ট (এএলআরডি)-এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় বেশকিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। জবাবদিহিতা বেড়েছে। এটি আশাব্যঞ্জক। সুশাসনের জন্য জবাবদিহিতা অপরিহার্য। এতে হাওর রক্ষা আন্দোলনের ভূমিকা রয়েছে। এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।’
এতে আরও বক্তব্য রাখেন পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার কোষাধ্যক্ষ রজত ভূষণ সরকার।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.