Sylhet Today 24 PRINT

মেছোবাঘ ও শাবক বাঁচাতে গ্রামবাসীর কাছে আকুল আবেদন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২০ এপ্রিল, ২০২১

গ্রামবাসী প্রস্তুত মেছোবাঘ ও তার শাবকদের পিটিয়ে মারা হবে। স্থানীয় সূত্রে খবর পেয়ে বাঘনী ও তার শাবকদের রক্ষার পরিবেশকর্মী ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা সেই গ্রামে পৌঁছান। তারা গ্রামবাসীদের বুঝাতে চেষ্টা করেন যে প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সব ধরনের প্রাণীর বেঁচে থাকা প্রয়োজন। বাঘটি নিজের সন্তানের জীবন বাঁচাতে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। এরা মাছ খাওয়ার জন্য নদী ও জলাভূমির আশপাশে থাকতে চায়। মানুষকে আক্রমণ করে না এই প্রাণী। বরং মানুষকে ভয় পায়। বাসস্থানের অভাব তারা এখন লোকালয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) পরিবেশকর্মী ও বন কর্মকর্তাদের কথায় এলাকাবাসীদের মনের ভয় দূর হয়। গ্রামের মুরুব্বীসহ উপস্থিত সবাই মেছোবাঘটিকে আর বিব্রত না করার অঙ্গিকার করেন।

সিলেটে বাপা’র সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম জানান, সিলেট সদর উপজেলার জালালাবাদ থানার মোগলগাঁও ইউনিয়নের লামা আকিলপুর গ্রামে একটি মেছোবাঘকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। কেউ কেউ মেছোবাঘের একাধিক শাবকও দেখেছেন। সম্প্রতি গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বাঘটিকে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে দেখেছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে বাঘটি আটক করার বা প্রয়োজনে পিটিয়ে মেরে ফেলার কথা ভাবছিলেন। ইতিমধ্যে বাঘটিকে লাঠিসোটা দিয়ে একাধিকবার ধাওয়াও দেওয়া হয়েছে। সেই খবর পরিবেশকর্মীদের কাছে পৌঁছালে স্ট্যান্ড ফর আওয়ার ইন্ডেঞ্জারড ওয়াইল্ড লাইফের খোকন, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করেন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গ্রামবাসীকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় লিফলেট দিয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মৌলভীবাজার থেকে দুজন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠালে, আব্দুল করিম কিম সিলেট থেকে পরিবেশকর্মী বিনয় ভদ্র ও বদরুল হোসেনসহ বন বিভাগের গাড়িতে করে লামা আকিলপুর পৌঁছান।

এদিকে বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের আসার সংবাদে গ্রামবাসীদের অনেকে লামা আকিলপুর গ্রামের মসজিদের পাশে জমায়েত হয়ে মেছোবাঘ দেখার বর্ণনা দেন। তাদের দেয়া তথ্যে জানা যায়, গত দু'দিন এলাকার প্রায় অর্ধশত কিশোর-তরুণ বাঘ মারার জন্য লাঠিসোটা নিয়ে সম্ভাব্য অবস্থানে ধাওয়া দিয়েছে।

তখন সমবেতদের উদ্দেশ্যে বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সব ধরনের প্রাণীর বেঁচে থাকা প্রয়োজন। মেছোবাঘিনীটি নিজের সন্তানের জীবন বাঁচাতে আক্রমণাত্মক আচরণ করছে। এই প্রাণীটিকে আমরা বাঘ বললেও মূলত এটি বড় আকৃতির বেড়াল। মাছ খাওয়ার জন্য নদী ও জলাভূমির আশপাশে এরা থাকতে চায়। এরা মানুষকে আক্রমণ করে না। বরং মানুষকে ভয় পায়। বাসস্থানের অভাব ও আমাদের অসচেতনতায় প্রাণীটি আমাদের প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।’

বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদী সারোয়ার বলেন, ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী- মেছোবিড়াল ফাঁদ পেতে ধরা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লক্ষ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।’

তিনি উপস্থিত গ্রামবাসীকে বলেন, ‘আপনাদের গ্রামে প্রাণীটি আশা নিয়ে বাচ্চাসহ আশ্রয় নিয়েছে। অতিথি হিসাবে ওদের কিছুদিনের জন্য আশ্রয় দিন। বাচ্চা একটু বড় হলেই অন্যত্র চলে যাবে।’

পরিবেশকর্মী ও বন কর্মকর্তাদের কথায় এলাকাবাসী তরুণদের মনে থাকা ভয় দূর হয়। গ্রামের মুরুব্বী সহ উপস্থিত সবাই মেছোবাঘটিকে আর বিব্রত না করার অঙ্গিকার করেন বলে জানান পরিবেশকর্মী আব্দুল করিম কিম ।

স্থানীয় মুরুব্বী আব্দুর রহিম ও নিজাম উদ্দিন মেম্বার বলেন, এরা যেহেতু নিশাচর ও মানুষ থেকে দূরত্বে থাকে তাই আমরাও তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা আর করবো না। স্থানীয় তরুণ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, শিশু-কিশোরেরা যেন বন্যপ্রাণীর আর ক্ষতি না করে আমরা তা দেখবো।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান, জাকির হোসেন, আব্দুল লতিফ প্রমুখ।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.