Sylhet Today 24 PRINT

ব্যবসায়ের লভ্যাংশ দিয়ে খাবার বিতরণ করেন রাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২১ এপ্রিল, ২০২১

গাড়িতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের খোঁজে বের করে খাবার বিতরণ করেন নবীন উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী চৌধুরী জান্নাত রাখি। তার ব্যবসায়ের লাভের অংশ দিয়ে প্রতিমাসেই সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন তিনি।

একদিকে লকডাউন অন্যদিকে রমজান মাস। তাতেও থেমে থাকেননি তিনি। রমজানের আগে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট, আখালিয়া, টুকের বাজার, সুবিদবাজার, বন্দরবাজার, কানিশাইল, চৌহাট্টাসহ বিভিন্ন এলাকায় সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করেন তিনি। রমজানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে দিচ্ছেন রোজার খাদ্যসামগ্রী। সেই খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ছোলা, মুড়ি, খেজুর, মাস্ক, সাবান।

চৌধুরী জান্নাত রাখি জানান, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, বিফ খিচুরি, জামতলা, কমলাভোগ মিষ্টিসহ নানা ধরনের খাবার ঘরে তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। তার হোম কিচেন শপ ম্যাজিকাল ফুড থেকে এসব খাবার ডেলিভারি দেন তিনি। আর এই খাবার বিক্রির একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ তিনি ব্যয় করেন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মাঝে। প্রতিমাসের লভ্যাংশ দিয়ে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেন। কোনো মাসে ৫০ প্যাকেট, কোনো মাসে ১০০ প্যাকেট। সিলেট শহরের এবং শহরতলীতে ঘুরে ঘুরে সুবিধা বঞ্চিত মানুষদের খুঁজে বের করে খাবার বিতরণ করেন চৌধুরী জান্নাত রাখি। এখন রমজান মাস তাই তৈরি করা খাবার বিতরণ না করে শুকনো খাবার দিচ্ছেন মানুষজনকে।

রাখি জানান, এখন পর্যন্ত শহস্রাধিক মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করেছেন তিনি। রান্না করা খাবারের মধ্যে ছিল, বিরিয়ানি, সাদা ভাত, বড়মাছের তরকারি, মাংসের তরকারি। একেক সময় একেক ধরনের খাবার বিতরণ করেছেন। এবং এই রমজানে প্রায় ১০০টি পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন।

সিলেট নগরীর নবাবরোড এলাকায় পিডিবি কোয়াটারে স্বামী সন্তানসহ বসবাস করে চৌধুরী জান্নাত রাখি। স্বামী প্রকৌশলী শামস ই আরেফিনের চাকুরির সুবাদে সিলেট এসেছেন তিনি। নিজের পরিচিতি, আত্মনির্ভরশীল ও ভাল কিছু করার তাগিদে তিনি শুরু করেন হোম কিচেন ও অনলাইনে কাপড়ের বিজনেস। চৌধুরী জান্নাত রাখি মনে করেন প্রতিটি নারীর নিজস্ব পরিচিতি থাকা উচিত। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া উচিত। পাশাপাশি দেশ ও সমাজের ভালর জন্য কিছু করা দায়বদ্ধতা থাকা দরকার প্রতিটি মানুষের। তাই তিনি এই ব্যবসা শুরু করেন ও ব্যবসার লভ্যাংশ দিয়ে সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

নবীন উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী রাখি বলেন, প্রতি মাসেই আমার ব্যবসার লাভের অংশ দিয়ে আমি ভাল কিছু করার চেষ্টা করি। যেমন অসহায় মানুষদের খাবার বিতরণ, পরিচিত কারো লেখাপড়ার খরচ চালানো, পরিচিতজনদের মধ্যে কারো আর্থিক সংকট থাকলে খাবার পৌঁছে দেয়া। যখন যার দরকার সাধ্য অনুযাী সাহায্য করার চেষ্টা করি। তবে প্রতি মাসে অসহায় মানুষদের জন্য খাবার বিতরণের ইভেন্টটা আমি নিয়মিত করি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেবামূলক কাজ করাও অনেক চ্যালেঞ্জিং। তার উপর নারী হলেতো কোনো কথাই নেই। সেবামূলক কাজ করতে গেলেও এক শ্রেণির মানুষ কটু কথা বলেই। আমিও অনেক কটু কথা শুনি। তবে আমি বিশ্বাস করি এক সময় মানুষজন পরিবর্তন হবেন। সবকিছু পজিটিভ ভাবে নেবেন এবং সমাজের অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করবেন।

চৌধুরী জান্নাত রাখি মনে করেন নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া প্রয়োজন। তাই তিনি হোম কিচেন ও অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি বলেন, আমি চাইলে ঘরে বসে শুধু গৃহস্থালির কাজ করে সময় কাটাতে পারতাম। স্বামীর টাকা দিয়ে আয়েশ করার সুযোগও আছে আমার। কিন্তু তা করিনি। আমার মনে হয়েছে, আমার ব্যক্তিগতভাবে আলাদা পরিচয় থাকা দরকার। আর এই পরিচয় তখন তৈরি হবে যখন আমি স্বাবলম্বী হবো। তাই আমি এই হোম কিচেন ও অনলাইন কাপড়ের শপ করার উদ্যোগ নিই।

চৌধুরী জান্নাত রাখি বলেন, আমি মনে করি প্রত্যেক মানুষেরই দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। আমারও আছে। তাই আমি আমার ব্যবসার লভ্যাংশ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিই। প্রতি মাসের সেই লভ্যাংশ থেকে আমি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের খাবারের জন্য একটা ইভেন্ট করি। যে মাসে যতটুকু লাভ হয়, সেই লাভের একাংশ দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।

স্ত্রীর এমন উদ্যোগে খুশি তার স্বামী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট ডিবিশন-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস ই আরেফিন। তিনি বলেন, রাখি বরাবরই মানুষকে সাহায্য করে আনন্দ পায়। সামাজিক কাজ করতে সে খুব পছন্দ করে। মানুষকে সাহায্য করা তার একটা নেশা। তাই আমি কখনো তার এসব কাজে বাধা দেইনি। আমাদের তিনটে বাচ্ছা আছে। সবচেয়ে ছোট ছেলেটার বয়স ২ বছর। সারাদিন ঘরে সংসারের কাজ করে, বাচ্চাদের সঠিকভাবে দেখাশোনা করে সে একাধারে ব্যবসা করছে। পাশাপাশি সামাজিক কাজও করছে। এতকিছু আমি চাইলেও সামলাতে পারবো না। তাই সবসময় রাখিকে বাহবা দেই। মাঝে মাঝে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য যে খাবারের ইভেন্ট শুরু করে, সেটাতেও কন্ট্রিবিউট করার চেষ্টা করি। আমি মনে করি প্রত্যেক নারীর এমন স্বাবলম্বী হওয়ার চিন্তাভাবনা থাকা উচিত।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.