Sylhet Today 24 PRINT

আবারও করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে বিশ্বনাথ

স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পৌনে ৩লাখ মানুষ

জাহাঙ্গীর আলম খায়ের, বিশ্বনাথ |  ১০ জুন, ২০২১

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। এরপর ১৮ মার্চ করোনায় আক্রান্ত প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এর একমাস পর ৫মে সিলেটের বিশ্বনাথে প্রথম এক নারী করোনায় আক্রান্ত হন।

এরপর থেকে আক্রান্ত হন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারিসহ শতাধিক লোকজন। এক পর্যায়ে করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠে বিশ্বনাথ। চলতি ২০২১ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে এবারও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কেবল মে মাসেই আক্রান্ত হযেছেন ৬১জন। ফলে, আবারও করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠছে প্রবাসী অধ্যুষিত এ জনপদ।

স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক না পরে সর্বত্র চলাফেরা, করোনা পরীক্ষা না করা, পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে গোপন রাখা ও বলতে লজ্জাবোধ করা এবং গ্রামাঞ্চলের মানুষের একগুয়েমির কারণেই করোনা সংক্রমন আরও তীব্র হওয়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকসহ সচেতন মহল। যে কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা ও পৌরশহরের প্রায় পৌনে ৩লাখ মানুষ।

চিকিৎসকদের সমীক্ষা মতে, ওই পৌনে ৩লাখ জনগোষ্ঠির মধ্যে ১লাখ ৮০হাজার বাসিন্দারা কোন না কোন রোগে ভূগছেন। আর লকডাউনের মধ্যেই গত ১৪ এপ্রিল পালন করা হয় ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে গত ৫ এপ্রিল থেকে উপজেলায় শুরু হয় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে এবং মাস্ক ছাড়া অবাধ চলাফেরার। সরকার মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক করলেও অভিযানের নামে নামমাত্র জরিমানাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে প্রশাসন।

সম্প্রতি এ উপজেলায় সর্দি, জ্বর ও শ্বাস-কস্টজনিত রোগে সহস্ত্রধিক মানুষ আক্রান্ত হলেও করোনা পরীক্ষা করাতে তাদের অনীহা। অভিযোগ রয়েছে, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও অনেকেই অবাধে চলাফেরা করছেন। অনেকেই সংকটাপন্ন হওয়ার আগপর্যন্ত লজ্জায় তিনি কিংবা তার পরিবারের কেউ করোনা সংক্রমণ মুখেও আনছেন না। যে কারণে করোনা সংক্রমণ আরও তীব্র হচ্ছে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে সিলেট নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিশ্বনাথের অনেকেই। এর মধ্যে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফখরুল আহমদ মতছিন চেয়ারম্যান ও উপ-দপ্তর সম্পাদক নুরুল হক মেম্বার।

উপজেলা হাসপাতলের সূত্র মতে, ২০২০ সালের ৫মে শান্তি রানী মালাকার (২৫) নামে উপজেলায় প্রথম এক নারীর শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। এর পর ইউএইচও ডা. আব্দুর রহমান মুসাসহ একে একে আক্রান্ত হতে থাকেন পুলিশ, চিকিৎসক, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ অসংখ্য লোকজন। ওই বছরের মে মাসে ৪১জন, জুন মাসে ৫৯জন এবং জুলাই মাসে আক্রান্ত হন ৫২জন। ফলে করোনার ‘হটস্পট’ হয়ে উঠেছিল বিশ^নাথ। আর আক্রান্তদের মধ্যে কেবল ৪৫জন পুলিশ সদস্যই ছিলেন। ২০২০সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০৯জন এবং মৃত্যুবরণ করেন ৫জন।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ৯জুন বুধবার পর্যন্ত মারা গেছেন ৭জন। বুধবার নতুন ২জনসহ মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১১৮জন। এরমধ্যে কেবল মে মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬১জন। নতুন করে আইসোলেশনে রয়েছেন ৩০জন, নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯৩৬ জনের এবং গত এক বছরে মোট সুস্থ হয়েছেন ২৮৩জন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহমান মুসা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা আর করোনাক্রান্ত হয়ে গোপন রাখা এবং সামাজিকভাবে লজ্জিত হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অবাধ চলাফেরার কারণে উপজেলায় করোনা সংক্রমন বাড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতন না হলে এ সংক্রমন আরও তীব্র হওয়ার আশংকা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক সুমন চন্দ্র দাসও একই ধরণের মন্তব্য করে বলেন, শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রশাসন মাঠে কাজ করছে। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.