Sylhet Today 24 PRINT

ঘর ভেঙে ভাইরাল হওয়া কানাইঘাটের সেই কিশোরীর পাল্টা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ১৩ জুলাই, ২০২১

‘আমাদের জায়গায় ঘর বানাইছে। আমাদের ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। আমরা ঘর থেকে বের হলেই গালাগালি করে। ভিডিও করে নেটে ছেড়ে দেয়। আমাদের ভবিষ্যত রয়েছে, আমাদের বিয়েশাদি এখনও হয় নাই। তারা ভিডিও কেন করবে?’

এস আর মিডিয়া নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে সোমবার লাইভে এসে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে এক কিশোরী।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া আরেক ভিডিওর কল্যাণেই দিন কয়েক আগে পরিচিতি পায় সিলেটের কানাইঘাটের ওই কিশোরী। ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়ে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চারজন মিলে দা, লাঠিসোটা নিয়ে ভাঙচুর করছেন একটি ঘর। এক নারীর নেতৃত্বে তছনছ করে ফেলা হচ্ছে টিনের ঘর। ভেঙে ফেলা হচ্ছে আসবাবপত্র। কেটে ফেলা হচ্ছে ঘরের পাশের গাছপালা।

ভিডিওতে দা হাতে ভাঙচুর চালাতে দেখা গিয়েছিল যে কিশোরীকে, সোমবার ফেসবুক ভিডিওতে সে নিজেই অভিযোগ নিয়ে আসে। এর আগে অবশ্য ভাঙচুরের ঘটনায় এক দিনের জন্য হাজতে থেকে আসতে হয়েছে তাকেসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে।

মূল ঘটনা ৯ জুলাইয়ের। কানাইঘাট উপজেলার লক্ষিপাশা পূর্ব ইউনিয়নের কাড়াবাল্লা গ্রামের মইনুদ্দিন লুকু ও সালেহা বেগমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। লুকু সম্পর্কে সালেহা বেগমের ভাসুরের ছেলে। সম্প্রতি বিরোধপূর্ণ জায়গায় একটি টিনের ঘর নির্মাণ করেন মইনুদ্দিন লুকু।

নিজের দুই কিশোরী মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে গত শুক্রবার এই ঘরটি ভেঙে দেন সালেহা বেগম। সেই ভাঙচুরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ওই কিশোরীর দা হাতে তেড়ে যাওয়ার দৃশ্য ভাইরাল হয় মুহূর্তেই।

শনিবার সালেহা বেগমসহ ছয়জনকে আসামি করে কানাইঘাট থানায় মামলা করেন মইনুদ্দিন লুকু। ওইদিনই তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তবে সালেহা বেগমের দুগ্ধপোষ্য শিশু থাকায় ও অন্য আসামিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় পরদিন ১১ জুলাই তাদের জামিন দেন কানাইঘাট আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর হোসেন।

জামিন পাওয়ার পর সোমবার ফেসবুকে এসে জমি নিয়ে বিরোধ থাকা চাচার পরিবারের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন ভাঙচুরে অংশ নেয়া সালেহা বেগমের কিশোরী মেয়ে।

সে বলে, ‘এই জায়গা নিয়ে আমাদের বিরোধ চলছে। আদালত থেকে নিষেধ করা হয়েছে এখানে ঘর বানাতে। তবু তারা ঘর বানাইছে। তাই আমরা ঘর ভেঙে দিছি।

‘তারা দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের নির্যাতন করছে। কিন্তু আমরা কোনো বিচার পাই না। আমি পাশের বিদ্যানিকেতন স্কুলে পড়তাম। কিন্তু তারা আমাকে স্কুলে যাওয়া আসা করতেও বাধা দিত। এ কারণে ২০১৮ সালে স্কুল ছেড়ে দেই। তখন আমি ৮ম শ্রেণিতে পড়তাম।’

ওই কিশোরী বলে, ‘আমাদের ঘর থেকে বের হওয়ার রাস্তা নেই। ঘর থেকে বের হলেই তারা নানা কথা বলে। গালাগালি করে। আমি এর বিচার চাই। বারবার বলেছি। সুষ্ঠু বিচার চাই।

‘আমার বাবা নাই। টাকা-পয়সাও নেই। তাদের সব আছে। তাই বিচার পাই না। আমরা বাধ্য হয়ে ঘর ভেঙেছি। ৫ বছর ধরে আমরা নির্যাতন সহ্য করেছি।’

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে মইনুদ্দিন লুকুর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে মামলার এজাহারে তিনি লিখেছেন, জমি নিয়ে বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জেরে সালেহা বেগম ও তার সন্তানরা সংঘবদ্ধভাবে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালান। ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করেন।

এ বিষয়ে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, ‘এসব অভিযোগ বিষয়ে তারা (সালেহার পরিবার) কখনোই পুলিশকে জানায়নি। তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে, কারো দ্বারা নির্যাতিত হলে থানায় অভিযোগ করতে পারে। আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। তবে কোনোভাবেই আইন হাতে তুলে নেয়া সমর্থনযোগ্য নয়।’

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.