Sylhet Today 24 PRINT

কমলগঞ্জে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে সবজি চাষ

কমলগঞ্জ প্রতিনিধি |  ৩১ জুলাই, ২০২১

প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগের কারণে অনেক সময় কৃষকদের বীজ, চারা, ফসল বিনষ্ট হলে লোকসানের শিকার হতে হয়। এমন প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে দেশের বিজ্ঞানীরা জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি চাষাবাদের প্রতি গুরুত্ব দেন। উদ্ভাবন করেন বিভিন্ন জলবায়ু সহিষ্ণু চাষাবাদ পদ্ধতি। এর মধ্যে হলো উঁচু মাদা, টাওয়ার গার্ডেন, বস্তায় সবজি চাষ, ভাসমান সবজি চাষ, সরজন পদ্ধতি ও হ্যাঙ্গিং গার্ডেন বা ঝুলন্ত বাগান।

এরই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে উঁচু মাদা, বস্তায় ও টাওয়ার গার্ডেন করা হয়।

কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহযোগিতায় এবং সূচনা প্রকল্পের বাস্তবায়নে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে জয়েন্ট ডেমো প্রদর্শনী প্লট করা হয়। ভিলেজ মডেল ফার্মার শাপলা বেগম ও স্বামী জামাল মিয়াকে উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে লাউ, করলা, শসা চাষের বিভিন্ন কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষক জামাল মিয়া তার ১৫ শতাংশ জায়গায় জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে উঁচু মাদা, বস্তায় ও টাওয়ার বাগান করেন।

এ বিষয়ে কৃষক জামাল মিয়ার সাথে আলাপকালে জানা যায়, ১৫ শতাংশ জায়গায় জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে জমি প্রস্তুত করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা এবং এখন পর্যন্ত লাউ বিক্রি করছেন প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাসের প্রভাব যদি বাজারে বেশি না পড়ে তাহলে আরও ৪০ হাজারের উপরে লাউ, করলা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন।’

আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কখনো খরা ও অতিবৃষ্টি হয়, যা কৃষি উৎপাদনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে আহরণ পর্যন্ত কৃষকদের যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তার মধ্যে অন্যতম হলো অসময়ে ও অপ্রয়োজনীয় সময় বৃষ্টি কিংবা অতিবৃষ্টি আবার অনেক সময় বৃষ্টি মৌসুমে বৃষ্টি না হয়ে তীব্র খরার সৃষ্টি হয়, এসব প্রতিকূল প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে হয়।

হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনালের কারিগরি সহায়তাকারী কামরুল ইসলাম জানান, ‘এটি মূলত সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার একটি প্রদর্শনী প্লট। জলবায়ু সহিষ্ণু এই পদ্ধতি যাতে মিডিয়ার মাধ্যমে সকল কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তিনি সেই আশা ব্যক্ত করেন।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রিপন দাস জানান, ‘জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতি মূলত একটি আধুনিক পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে বন্যা কিংবা অতিবৃষ্টি হলেও কৃষকের ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। উঁচু মাদা ও টাওয়ার গার্ডেন মূলত জলযুক্ত ও বন্যা কবলিত এলাকায় করা হয়। মাটি থেকে ৪ ফিট উঁচু মাদা ও টাওয়ার তৈরি করে সেখানে বীজ, চারা রোপণ করা হয়, আবার ক্ষেত্রবিশেষে বেশি বন্যা কবলিত এলাকায় ৫ ফিট পর্যন্ত উঁচু টাওয়ার করা হয়, যাতে রোপনকৃত ফসলটি ঝুঁকি মুক্ত থাকে।’

এ বিষয়ে সূচনা প্রকল্পের কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল উপজেলা সমন্বয়কারী এম, এইচ মিলন জানান, ‘কমলগঞ্জের শমশেরনগর জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে উঁচু মাদা ও টাওয়ার গার্ডেনে যে সবজি চাষ করা হচ্ছে, এটি মূলত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহায়তায় ও সূচনা প্রকল্পের বাস্তবায়নে একটি জয়েন্ট প্রদর্শনী প্লট। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সূচনা প্রকল্প এ ধরনের জলবায়ু সহিষ্ণু পদ্ধতিতে আরও প্রদর্শনী প্লট করব, যাতে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কৃষকের ফসলের ক্ষতি না হয়। সেই সাথে সর্বত্রে এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিবো যাতে সকল কৃষক এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে পারেন।’

 

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.