Sylhet Today 24 PRINT

আখড়ার ‘পবিত্রতা রক্ষায়’ বাস্তুহারা ছয় শতাধিক পাখি

মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ |  ০৪ আগস্ট, ২০২১

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার দুর্গম গ্রাম মামুদ নগর। প্রায় ৪০০ বছর পূর্বে এই গ্রামে গড়ে উঠে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি আখড়া। বৈরাগীবাড়ির নয়ন গোসাই আখড়া হিসেবে পরিচিত এ আখড়াটি প্রায় ৪ একর জমির উপর নির্মিত। চলমান করোনাভাইরাসের প্রভাবে আখড়ায় ভক্তদের জমায়েত কম হলেও আখড়ার আশেপাশের গাছপালায় বাসা বেঁধেছিলো বক ও পানকৌড়িসহ বিভিন্ন জাতের পাখি।

করোনাকালেও আখড়াটি পাখির কলরবে মুখর ছিলো। তবে সম্প্রতি পবিত্রতা রক্ষার অজুহাতে কেটে ফেলা হয়েছে আখড়ার আশপাশের বেশকয়েকটি গাছের ডালপালা। ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে গাছে আশ্রয় নেওয়া শতাধিক পাখি। পাখি রক্ষায় গ্রামবাসী গাছ কাটা বন্ধ রাখার আহ্বান জানালেও আখড়া কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি বলে অভিযোগ ওঠেছে।

এতে  ৬ শতাধিক পাখি এক নিমিষেই বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। যারা গত তিন বছর ধরে আখড়ার আশপাশের গাছপালায় বাসা বেঁধেছিলেঅ গাছের ডালপালা কাটার কারণে মারা গেছে পাখির অনেক বাচ্চঅ নষ্ট হয়ে পড়েছে পাখির ডিম।

স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা যায়, প্রতিবছর দুইবছর পর পর আখড়ার উন্নয়ন ও মাছের জীবিকার জন্য গাছের ডালপালা কাটা হয় এবং সেই ডালপালা বিক্রি করে আখড়ার উন্নয় কার্যক্রম চালানো হয়।

তবে সোমবার গাছের ডালপালা কাটা শুরু হলে স্থানীয়রা বাধা দেন। এক পর্যায়ে বিষয়টি হাতাহাতি রূপ নেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি ভিডিও করে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেন স্থানীয় কয়েকজন। এই ভিডিও ভাইরাল ভাইরাল হলে ও জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে জানালে তিনি গাছ কাটা বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

মামুদ নগর গ্রামের বাসিন্দা রাজ্জাক আহমদ বলেন, আখড়ার কাজটা ভালা হইছে না, এরা স্বার্থের লাগি গাছের ডালপালা কাটি লাওয়ায় পাখির বাচ্চা ডিম অনেকগুলো মাটিত পরিয়া ভাঙছে, যে যার মতো কালকে পাখি ধরিয়া নিসে, কেউ কেউতো টাকা দিয়াও পাখি কিনিয়া নিছে। আমরা না করছিলাম কিন্তু তারা পাত্তা দিসে না আর সোমবার একটা ফুটবল খেলা আছিল মানুষ বেশি ইকানো আছিন এরা ওই সুযোগে গাছের ডালপালা কাটা শুরু করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, পাখিরাতো এতো বছর ধরিয়া আছে, তারা ইকানো আরামের থাকের কিন্তু এরার ইতা সহ্য হইছে না।

তিনি বলেন, আমরা আটকানির চেষ্টা করছি কিন্তু তারা ডর দেখায়, বেশি বাড়াবাড়ি করলে পুলিশ দিয়া ধরাইয়া নিবো। ডালপালা কটিয়া মানুষ দুই হাত ভরিয়া পাখি নিয়া গেছে আপনারা ছবিত দেখছোইন আর আমরা বাস্তবে প্রায় ৫-৬শত ওইবোই ইলান পাখির বাসা ভাঙছে তারা। বক আর পান কৌড়িই বেশি আছিল ইকানো।

এ ব্যপারে আখড়ার দায়িত্বে থাকার পুরোহিত গৌরাঙ্গ বৈষ্ণব গোসাই বলেন, আমি ধর্মের কাজ করি। এখানে আমি মিথ্যা কিছু বলবো না। আমি নিজেই এখানে পাখিদের থাকার ব্যবস্থা করেছি। তবে যেহেতু এটি পবিত্র স্থান আমাদেরও সবসময় পবিত্র থাকতে হয়, সেখানে পাখিদের বিষ্টা পালক ইত্যাদি পড়ে জায়গাটাকে অপবিত্র করছে। আখড়ার পূর্ব দিকে বাতাস আসার কারণে বিষ্টাগুলো শুকিয়ে আখড়ার ভিতরে চলে আসে। আমি অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম পাখিগুলোকে এখান থেকে সরানোর কিন্তু পাখিগুলো যায়নি, তাই বাধ্য হয়েই আমাকে এই কাজ করতে হয়েছে। আমি মন্দির ও আখড়ার জন্য এসব করেছি এর জন্য যদি আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া হয় আমি মেনে নিবো।

এসময় তাকে আল আমিন চেয়ারম্যানের লোকদের হুমকি দেওয়ার বিষয়ে বলতে তিনি তা অস্বীকার করে বলেন, এখানে চেয়ারম্যান সাবের তো কিছু না, আখড়ার একটি পুকুর আছে সেটাতে পাতা পড়ে মাছের ক্ষতি হচ্ছে আর আগে যা বললাম সব মিলিয়ে এটি করতে হয়েছে। তবে আমরা মাত্র ৫ টি গাছ কাটছি তার মধ্যে দুইটায় পাখির বাসা ছিল যা ভেঙে গিয়েছে। তবে বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে আসলে বিষয়টি এমন নয়।

এ ঘটনায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আ্দুল করিম কিম বলেন, পাখিরা ধর্মীয় স্থানে শান্তি খোঁজেই হয়তো বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু তাদের সাথে যা হয়েছে এটি অন্যায়, আমি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন. আমাদের কাছে খবর আসলে আমরা গাছপালা কাটা বন্ধ রাখা নির্দেশ দেই এবং পাখিদের যেনো কোন রকম ক্ষয়ক্ষতি না হয় সেজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আখড়ার জায়গাটি ব্যক্তিগত মালিকানার। তবুও আমরা নির্দেশনা দিয়েছি যেনো আর গাছ না কাটা হয়।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.