Sylhet Today 24 PRINT

পর্যটকদের অসচেতনতায় হুমকিতে টাঙ্গুয়া ও নিলাদ্রির পরিবেশ

মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ |  ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১

হাওরের রাজধানী খ্যাত সুনামগঞ্জে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে ঘুরতে এসে স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না পর্যটকরা।

বাংলার কাশ্মীর খ্যাত শহিদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি) এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানি ও রামসার সাইট হিসেবে পরিচিত টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে নারাজ তারা, এছাড়া হাওরের ময়লা আবর্জনা না ফেলার নির্দেশনা থাকলেও তাও মানছেন না পর্যটকরা।

সরজমিনে, সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার নিলাদ্রি লেক ও টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসছেন পর্যটকরা, কেউ সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা হয়ে নৌকা নিয়ে আবার কেউবা আসছেন হাওরের অন্যান্য জেলার রাস্তা দিয়ে, কিন্তু পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ঘুরতে আসলে মাস্ক পড়ার নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না অধিকাংশ পর্যটকরা।

এছাড়া হাওরে প্লাস্টিক ও চিপসের প্যাকেটের বর্জ্যগুলো সরাসরি হাওরে ফেলছেন তারা, এছাড়া টাঙ্গুয়ার হাওরের থাকা হিজল করচের গাছগুলিতে উঠে পাতা ছিঁড়া ও ডাল ভাঙায় হাওরের থাকা অন্যান্য প্রাণীতে জীববৈচিত্র বিরাট প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এরকম চলতে থাকলে হাওরে জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা ৷ এতে তারা প্রশাসনের অধিক নজরদারি বৃদ্ধি ও হাওরে ঘুরতে আসায় আরেকটু কড়াকড়ি করার আহবান জানিয়েছেন তারা।

কুমিল্লা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা ফাইয়াজ ফাহিম বলেন, এখানে প্রথমবার এসেছি ঘুরতে, টাঙ্গুয়ায় হাওরে সত্যিই সুন্দর জায়গা, এই সৌন্দর্যটা আমাদের ধরে রাখতে হবে, তবে সবচেয়ে খারাপ বিষয় হাওরে অনেক পর্যটকরা আসেন আমিও একজন পর্যটক কিন্তু চিপস খাচ্ছেন সেই প্যাকেটটা পানিতে ফেলছেন, পানি খাচ্ছেন সেই বোতলটা পানিতে ফেলছেন যা পরিবেশের জন্য খারাপ। আমরা চাইবো এগুলো বন্ধ করা হোক এবং এসব যারা করবে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হোক।

স্থানীয় নৌকা চালক আবুল হোসেন বলেন, মানুষরে নৌকায় উঠার আগে আমরা কইয়া দেই যে ময়লাগুলা একটা জায়গা আছে ফালাইবা কিন্তু তারা আমরা কথা শুনে না যার যেমন ইচ্ছা ফালায়, আমরার ইকানো কিচ্ছু কওয়ার তাকে না। তারা প্যাকেট বোতল আর ভাত তারকারি সবই হাওর ফালায় তবে আমরা দেখলে না করি কিন্তু কে শুনে কার কথা।

শহিদ সিরাজ লেক এলাকার বাসিন্দা অরিন্দ দাশ বলেন, মানুষ ঘুরাত আয় খুব ভালা লাগে সুনামগঞ্জরে মানুষ চিনের কিন্তু আরেকদিকে খারাপ লাগে তারা আইয়া যেমনে মন চায় এমনেই ময়লা আবর্জনা ফালায়। তারা ট্যাকেরঘাটের পাড়টা আর পানির অবস্থা দেখোইন কিলান ময়লা ফালাইয়া রাখা। প্রশাসনের উচিত ইকানো নজরধারী বাড়ানি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন, আমি নিজেও কিছুদিন আগে টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়েছি এখানে রাতে উচ্চ শব্দে গান বাজানো খাবার খেয়ে জিনিসগুলো পানিতে ফালানো, এতে করে টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, আমি মনেকরি এখানে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। একজন সহকারি কমিশনারের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের নিয়মিত টহল বাড়াতে হবে যাতে করে এসব বন্ধ করা যায়।

তিনি আরও বলেন, এখানে ময়লা আবর্জনা প্লাস্টিক এসব না ফেলার জন্য মাঝি ও তার সহযোগিতের প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরী যাতে করে তাদের মাধ্যমে পর্যটকরা সচেতন হয়, এছাড়া দেশের বৃহত্তম রামসার সাইট হওয়ায় এখানে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটক আসাটাও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত এখানে অভিযান চালায়াচ্ছি গত বৃহস্পতিবারও আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি তবে টাঙ্গুয়ার হাওরটি বিশাল হওয়ায় এবং হাওরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পর্যটকরা আসায় নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টসাধ্য তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা নিয়মিত এখানে মাইকিং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি এবং সেটি অব্যাহত থাকবে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.