Sylhet Today 24 PRINT

দুই বোনের মৃত্যু: উত্তর মিলেনি অনেক প্রশ্নের

নিজস্ব প্রতিবেদক |  ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সিলেট নগরীর আম্বরখানায় বাড়ির ছাদে দুই বোনের ঝুলন্ত মরদেহ নিয়ে আলোচনা চলছে এলাকায়। পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বললেও এলাকাবাসী বিষয়টিকে সন্দেহজনক হিসেবেই দেখছে।

আম্বরখানার মজুমদারি এলাকায় নিজ বাড়ির ছাদ থেকে মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার করা হয় ৩৭ বছরে শেখ রানী মজুমদার ও তার বোন ২৭ বছরের ফাতেমা বেগমের ঝুলন্ত মরদেহ।

নগরের বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির জানিয়েছিলেন, ছাদে পিলারের রডের সঙ্গে ওড়না বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ দুটি ঝুলছিল ছাদের কার্নিশের বাইরে।

মৃত দুই বোনের স্বজনদেরও দাবি, এটি আত্মহত্যা।

এ ঘটনায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের কাছেও নেই নতুন কোনো তথ্য। তবে এলাকাবাসী এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে মেনে নিতে নারাজ।

ওই বাড়িতে মা, দুই ভাই ও আরও এক বোনের সঙ্গে থাকতেন রানী ও ফাতেমা। প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারের কেউই এলাকায় কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। অন্য আত্মীয়স্বজনের সঙ্গেও তাদের তেমন যোগাযোগ নেই।

ওসি মাইনুল মঙ্গলবারই জানিয়েছেন, এই পরিবারের সব সদস্যেরই আচরণ কিছুটা অস্বাভাবিক; কাথাবার্তায় অপ্রকৃতস্থ মনে হয়েছে।

রানী ও ফাতেমার ভাই শেখ রাজন জানান, ঘটনার আগের দিন রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে চাচার বাসায় চলে যান রানী। ছোটবেলা থেকেই রানীর আচরণ অস্বাভাবিক। অকারণেই রেগে যান। এ কারণে নবম শ্রেণির পর আর পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি।

রাজন আরও জানান, বিয়ের আলোচনা উঠলে রানী ক্ষেপে উঠতেন। গত সোমবারও তার একটি বিয়ের প্রস্তাব আসে। তা শুনেই রানী রেগে বাসা থেকে বের হয়ে যান।

তবে স্থানীয়দের বরাত দিয়ে সিটি করপোরেশনের ওই এলাকার কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদি বলেন, ‘আমি শুনেছি সোমবার রাগ করে হাতে দা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান রানী ও ফাতেমা।

‘তাদের হাতে দা ছিল কেন? কেউ কি তাদের মারতে চেয়েছিল? চাচার বাসা থেকে নিজ বাসায় ফেরার পর তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের কী কথা হয়েছিল? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার।’

রানী-ফাতেমার বাড়ির পাশেই থাকেন ব্যবসায়ী কায়েস আহমদ। তিনি মঙ্গলবার সকালে দুই বোনের ঝুলন্ত মরদেহ দেখেছেন।

কায়েসের প্রশ্ন, ‘রানী যদি রেগে গিয়ে আত্মহত্যা করেও থাকেন, তবে ফাতেমা কেন আত্মহত্যা করেছেন? আবার রানী যদি তাকে হত্যা করে থাকেন, তাতেও তো তিনি বাধা দেয়ার কথা, পরিবারের অন্য সদস্যরা কি তা টের পাননি?

‘ঝুলন্ত অবস্থায় দুই বোনের মরদেহ একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো ছিল। শেষ মুহূর্তেও কি তারা কেউ কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করেননি?’

স্থানীয়রা জানান, রানী-ফাতেমার বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। তাদের আরও এক বোন বিয়ে করে দেশের বাইরে থাকেন। এই বাড়ির সদস্যদের মধ্যে প্রায়ই কলহ চলতো।

ময়নাতদন্ত শেষে দুই বোনের মরদেহ মঙ্গলবার রাতেই দাফন করা হয়।

মরদেহের গলা ছাড়া আর কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি জানিয়ে ওসি বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যাই মনে হচ্ছে। তবে সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত চলছে। যেসব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর উত্তর খোঁজা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ পিপিএম বলেন, তারা নানা কারণে অনেকটা মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এছাড়া দু’বােনের মৃত্যুর পেছনে ভূমি সংক্রান্ত কারণও থাকতে পারে। আমরা এখনই কোনো বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত প্রয়ােজন।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.