নিজস্ব প্রতিবেদক | ১৮ অক্টোবর, ২০২১
দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দুদের মণ্ডপ-মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সিলেট।
সোমবার এমন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
দুপুরে নগরের চৌহাট্টা এলাকায় সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাসের ভেতরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
এদিকে, বিকেলে সিলেট শহিদ মিনারে বিক্ষোভ করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন)। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষ অংশ নেন।
এই সমাবেশে ইসকনের শ্রীমৎ ভক্তি অদ্বৈত্য নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ বলেছেন, দেশের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার নতুন কোনো ঘটনা নয়। রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধকালীনও এই সম্প্রদায়ের নারীদের সম্ভ্রমহানির ঘটনা ঘটেছে। তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। পিতৃপুরুষের ভিটে-মাটি থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এসব ঘটনার পুণরাবৃত্তি ঘটছে বারবার। কখনো সংখ্যালঘুদের বলির পাঠা করে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় চলে রক্তের হোলি খেলা। ফলে জন্ম নেওয়া প্রিয় মাতৃভূমি থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন এই দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে এবং হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন নগণ সংখ্যক মানুষ এই দেশে বসবাস করলেও সরকার তাদের নিরাপত্তা দিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
শ্রীমৎ ভক্তি অদ্বৈত্য নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ সোমবার (১৯ অক্টোবর) সিলেট শহিদমিনার প্রাঙ্গণের আন্তর্জাতিক কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) আহুত মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশে তিনি সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন।
প্রতিবাদী সমাবেশে বিকেল তিনটা থেকেই সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদমিনার চত্বর কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশ স্থলে হাজির হতে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বী ছাড়াও অসাম্প্রদায়িক মানুষ। সমাবেশের কারণে চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার সড়কের প্রায় হাফ কিলোমিটার এলাকা ব্লক হয়ে পড়লে দীর্ঘ যানযটের সৃষ্টি হয়। এ সময় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আসলেও ফাঁকা হয়নি সমাবেশ।
প্রতিবাদ সমাবেশে ইসকন সিলেটের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ভক্তি অদ্বৈত্য নবদ্বীপ স্বামী মহারাজ আরো বলেন, বিগত দিনে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে কক্সবাজার, রামু, ব্রাহ্মবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সৃষ্টি হলেও ঘটনায় জড়িত কুচক্রিদের বিচার করা সম্ভব হয়নি। উপরন্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের জড়িয়ে তাদের বাড়ি ঘর, মন্দির ভাঙচুরসহ প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটেছে। দু:খ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিগত দিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রকারান্তরে দুর্বৃত্তদের সাহস যুগিয়েছে। ফলে বারবার একই ঘটনার পূণরাবৃত্তি ঘটছে এবং তা ঘটতে থাকবে। শারদীয় দূর্গোপূজোর ২য় দিনে (১৩ অক্টোবর) ঘটনার শুরু হয়ে রোববার (১৯ অক্টোবর) পর্যন্ত একই তাণ্ডব চলছে। কুমিল্লায় শুরু হওয়া ঘটনা এখন ছড়িয়ে পড়ছে দেশব্যাপী।
তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, সরকার যদি অবিলম্বে উগ্রবাদিদের হামলা, তাণ্ডব দমনে কঠোর মনোভাব গ্রহণ না করে তাহলে কেউই ঘরে বসে থাকবে না। দেশের অসাম্প্রদায়িক সকল মানুষকে সাথে নিয়ে ইসকন বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবেলা করতে বাধ্য হবে।