Sylhet Today 24 PRINT

আমি কেন গ্রেপ্তার হয়েছিলাম, তা এখনও জানি না: ঝুমন

সিলেটটুডে ডেস্ক |  ২৪ অক্টোবর, ২০২১

সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দুদের উপর হামলার পর এই সম্প্রদায়েরই ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তার আট মাস পর আবারও একই ধরনের হামলা হল কয়েকটি জেলায়। তা নিয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসে ঝুমন প্রশ্ন তুললেন তখন তাকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া নিয়ে।   

সাত মাস কারাগারে থেকে জামিনে মুক্ত ঝুমন শনিবার এক ওয়েবিনারে বলেন, “আমাকে কেন গ্রেপ্তার করা হল, সেটাই আমি এখনও জানি না। সাতবার আমার জামিন আবেদন নাকচ করেছেন আদালত।”

হেফাজত নেতা মামুনুল হককে নিয়ে ফেইসবুকে ‘আপত্তিকর পোস্ট’ দেওয়ার অভিযোগ তুলে গত ১৭ মার্চ শাল্লার নোয়াগাঁওয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সে সময় গ্রামের বাড়িঘর ও মন্দির ভাঙচুর করা হয়। হিন্দুদের অন্তত ৯০টি বাড়িতে হামলা হয় সেদিন।

পরে ফেইসবুক পোস্টের জন্য ঝুমন দাশের বিরুদ্ধে শাল্লা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়। সেই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাবকে। বিচারিক আদালতে জামিন না পাওয়ার পর হাই কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গত মাসে কারামুক্ত হন এই যুবক।

ঝুমন বলেন, “আমাকে গ্রেপ্তারের পর থানায় নিয়ে পুলিশ বলল, আমার নাম লিখে ফেইসবুকে সার্চ দিতে। তখন পুলিশকে দেখালাম, আমার নামে ২০টির একাধিক ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট সক্রিয়। সেগুলো খুব অল্পদিন হল খোলা হয়েছে। সেসব ফেইসবুক থেকে অনেক অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।”

এবার গত ১৩ অক্টোবর কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলার সময়ও ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার খবর ছড়ানো হয়েছিল। এর পরপরই এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা হয় রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপল্লীতে।

এসব ঘটনা নিয়েই অধিকারকর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ‘মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি’ শনিবার ওয়েবিনার আয়োজন করে, যাতে ঝুমন দাশও আলোচনা করেন।

ওয়েবিনারের সঞ্চালক শিরীন হক এবারের সাম্প্রদায়িক হামলার পর কয়েকশ’ জনের নামে মামলা করায় পুলিশের ভূমিকার সামলোচনা করে বলেন, “এরকম মামলার পেছনে বাণিজ্য আছে, দায় এড়ানোর সুযোগ খোঁজার চেষ্টাও রয়েছে।”

ওয়েবিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “৮ থেকে ১০ দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় হামলা-ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা যদি তিন দিনের বেশি সময় ধরে ঘটে, তাহলে তার পেছনে সরকারের কোনো না কোনো প্রশ্রয় থাকে। সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া এরকম চলতে পারে না। এটি শুধু সাম্প্রদায়িক হামলা নয়, এর পেছনে রাজনীতি আছে, বিচারহীনতা আছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “কুরআন অবমাননার জন্য কুমিল্লায় সংঘাতটি ঘটে নাই। বরং উল্টো করে বলা যায়, সংঘাত ঘটানোর জন্য কুরআনের অবমাননা করা হয়েছিল।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “চৌমুহনীর ঘটনা পুরোপুরি পুলিশের ব্যর্থতায়, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতায়। ওই এসপি কী করে এখনও জেলায় রয়ে গেছেন। কীভাবে নোয়াখালীতে এখনও ডিসি রয়ে গেছেন?

“এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আমি নিশ্চিত ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশে তালেবানের মতো সরকার আসতে বাধ্য। আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলেও তাদের ঠেকাতে পারবে না।”

কক্সবাজারের রামু, পাবনার সাঁথিয়া, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর গিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে রোবায়েত বলেন, দেশে বিগত বছরগুলোতে ‘সাম্প্রদায়িকতার আবাদ’ হয়েছে।

“চাঁদপুরে উপজেলা ছাত্রলীগ দোষ দিচ্ছে পৌর ছাত্রলীগকে। তারা জামায়াত কিংবা হেফাজতকে কিন্ত দোষ দিচ্ছে না। চৌমুহনীতে আজ পর্যন্ত ঘটনাস্থলে আসেননি স্থানীয় সাংসদ। আপনারা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন না বলে সমালোচনা করছেন। কিন্তু একেবারে স্থানীয় পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে এসে ঘটনার শিকারদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।”

“অনেকে বলেন, দেশের হিন্দুরা ভারতে চলে যেতে চান। কিন্তু বিশ্বাস করেন দেশ ছেড়ে কেউ যেতে চায় না,” বলেন তিনি।

ওয়েবিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি তোলেন, যাতে যে কোনো অসময়ে এই কমিশন সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়াতে পারে।

টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
[email protected] ☎ ৮৮ ০১৭ ১৪৩৪ ৯৩৯৩
৭/ডি-১ (৭ম তলা), ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি,
জিন্দাবাজার, সিলেট - ৩১০০, বাংলাদেশ।
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.